আজকাল ওয়েবডেস্ক: আমাদের জীবনের পথচলা অনেকটা নদীর মতো, কখনও শান্ত, কখনও বা উত্তাল। এই চলার পথে কত মানুষের সঙ্গে দেখা হয়, সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিছু সম্পর্ক সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও গভীর হয়, আবার কিছু সম্পর্ক কালের নিয়মে হারিয়ে যায়। কিন্তু হারিয়ে যাওয়া বা ভেঙে যাওয়া সম্পর্কের ক্ষত অনেক সময় আমাদের অজান্তেই নতুন সম্পর্কের উপর এক দীর্ঘ ছায়া ফেলে। অতীতের সেই তিক্ত অভিজ্ঞতা, না বলা কথা আর জমে থাকা অভিমান বর্তমানের সুন্দর মুহূর্তগুলোকেও বিষিয়ে তুলতে পারে। কিন্তু এই ছায়া থেকে মুক্তির উপায় কী?

প্রথমেই বোঝা দরকার, পুরোনো সম্পর্কের খারাপ ছায়া ঠিক কীভাবে নতুন সম্পর্কে প্রভাব ফেলে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হল বিশ্বাসের অভাব। আগের সম্পর্কে যদি কেউ প্রতারণার শিকার হন, তবে নতুন সঙ্গীকে পুরোপুরি বিশ্বাস করা তাঁর পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। নতুন সঙ্গীর সাধারণ আচরণ, যেমন ফোনে কথা বলা বা কারও সঙ্গে একটু বেশি মেলামেশা করা, মনে সন্দেহের বীজ বুনে দিতে পারে। অবচেতন মন বার বার সতর্ক করে, “এবারও কি তেমনটাই হবে?” এই অহেতুক সন্দেহ ও অবিশ্বাসই একটা সুন্দর সম্পর্কের দেওয়ালে প্রথম ফাটল ধরায়।

দ্বিতীয়ত, তুলনা করার প্রবণতা। মানুষ স্বভাবগতভাবেই তুলনা করতে ভালবাসে। কিন্তু সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই তুলনা মারাত্মক হতে পারে। প্রাক্তনের সঙ্গে নতুন সঙ্গীর তুলনা, তা সে ভাল হোক বা খারাপ- দুই-ই বর্তমান সম্পর্কের জন্য স্বাস্থ্যকর নয়। “ও তো এমনটা করত” বা “ও তোমার মতো ছিল না”- এই ধরনের ভাবনাগুলো নতুন সঙ্গীর মনে হীনম্মন্যতা তৈরি করতে পারে। প্রতিটি মানুষ স্বতন্ত্র, তাদের ভালবাসার প্রকাশভঙ্গিও ভিন্ন। এই সহজ সত্যটা মেনে না নিতে পারলে সম্পর্কের জটিলতা বাড়বেই।

 

অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে তৈরি হওয়া ভয়ও একটি বড় সমস্যা। পুরোনো সম্পর্কে আঘাত পেতে পেতে অনেকের মধ্যেই একটা ভয় বাসা বাঁধে। তাঁরা নতুন সম্পর্কে নিজেদের সম্পূর্ণ সঁপে দিতে পারেন না। বার বার মনে হয়, আবার যদি একই পরিণতি হয়? এই ভয় থেকে তাঁরা নিজেদের গুটিয়ে নেন, মনের কথা খুলে বলেন না। ফলে সঙ্গীর সঙ্গে মানসিক দূরত্ব তৈরি হতে থাকে, যা আদতে সম্পর্ককে আরও দুর্বল করে দেয়।

তবে এই সমস্যা থেকে মুক্তির উপায়ও আছে।

 

সর্বপ্রথম প্রয়োজন আত্ম-বিশ্লেষণ এবং অতীতকে গ্রহণ করা। যা হয়ে গেছে, তা বদলানো সম্ভব নয়। তাই পুরোনো সম্পর্কের ব্যর্থতার জন্য নিজেকে বা অন্যকে ক্রমাগত দোষারোপ না করে, তা থেকে শিক্ষা নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। কেন সম্পর্কটা ভেঙেছিল, ভুলগুলো কী ছিল- এইসব ঠাণ্ডা মাথায় ভাবলে ভবিষ্যৎ চলার পথটা মসৃণ হয়।

 

নতুন সম্পর্কে সম্পূর্ণ সৎ থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। নিজের অতীত, মনের ভয় বা আশঙ্কার কথা সঙ্গীকে খুলে বলুন। এতে তিনি আপনাকে আরও ভালভাবে বুঝতে পারবেন এবং আপনার দুর্বল মুহূর্তে আপনার পাশে থাকতে পারবেন। খোলামেলা আলোচনা অনেক অহেতুক ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে সাহায্য করে। মনে রাখতে হবে, সম্পর্কটা দুজনের। তাই অতীতের ছায়ার বিরুদ্ধে লড়াইটাও একার নয়।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বর্তমানকে গুরুত্ব দেওয়া। নতুন সঙ্গীর সঙ্গে সুন্দর মুহূর্ত তৈরি করুন, তাঁর ভাল দিকগুলোর প্রশংসা করুন। অতীতকে আঁকড়ে ধরে বর্তমানের আনন্দকে মাটি হতে দেবেন না। প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতেও দ্বিধা করা উচিত নয়।

সম্পর্ক অনেকটা গাছের মতো, যত্নে লালন করতে হয়। অতীতের আগাছা যদি সেই গাছকে বাড়তে না দেয়, তবে সেই আগাছা উপড়ে ফেলাটাই শ্রেয়। পুরোনো ক্ষতকে শুকিয়ে নতুন করে শুরু করার মধ্যেই জীবনের সার্থকতা লুকিয়ে রয়েছে। অতীতের ছায়া নয়, বর্তমানের আলোতেই আগামীর পথ খুঁজে নিতে হবে।