আজকাল ওয়েবডেস্ক: পুজোর মধ্যেই সর্দি-কাশিতে ভুগছেন? সামান্য আবহাওয়ার পরিবর্তনেই শরীর বিগড়ে যাচ্ছে? অনেকেই হয়তো ভাবছেন, এ আর নতুন কী! ঋতু পরিবর্তনের সময়ে এমনটা তো হয়েই থাকে। কিন্তু সমস্যা যদি নিয়মিত হতে থাকে, তবে বিষয়টা নিয়ে ভাবার অবকাশ রয়েছে। কারণ, এর পিছনে লুকিয়ে থাকতে পারে আপনারই দৈনন্দিন জীবনের কিছু অভ্যাস, যা অজান্তেই আপনার শরীরের বর্ম, অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিচ্ছে।
আমাদের শরীর এক আশ্চর্য যন্ত্র। প্রকৃতি তাকে এমন ভাবে তৈরি করেছে, যাতে সে নিজেই বাইরের শত্রুর (জীবাণু) মোকাবিলা করতে পারে। এই প্রতিরক্ষার দায়িত্বে রয়েছে ‘ইমিউন সিস্টেম’ বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। কিন্তু আমাদেরই কিছু ভুলের কারণে এই ব্যবস্থা ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে নানা ধরনের সংক্রমণের শিকার হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

অপর্যাপ্ত ঘুম: আধুনিক জীবনযাত্রার অন্যতম বড় শত্রু হল ঘুমের অভাব। কাজের চাপ, মানসিক উদ্বেগ বা গভীর রাত পর্যন্ত মোবাইল ঘাঁটার অভ্যাসে ঘুমের সময় কমে আসছে। চিকিৎসকদের মতে, প্রাপ্তবয়স্ক এক জন মানুষের দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম প্রয়োজন। ঘুমের সময় আমাদের শরীর ‘সাইটোকাইন’ নামক এক প্রকার প্রোটিন তৈরি করে, যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। ঘুম কম হলে এই প্রোটিনের উৎপাদন কমে যায়, ফলে প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে।
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখতে ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার অপরিহার্য। কিন্তু দৈনন্দিন ব্যস্ততায় সবুজ শাক-সবজি, ফলমূলের বদলে আমাদের খাদ্যতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে ফাস্ট ফুড, প্রসেসড খাবার এবং অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পানীয়। এই ধরনের খাবার শরীরে প্রদাহ বাড়ায় এবং রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলোর কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। বিশেষ করে ভিটামিন সি, ডি এবং জিঙ্কের অভাব প্রতিরোধ ক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
মানসিক চাপ: সাময়িক মানসিক চাপ শরীরের জন্য খারাপ না হলেও, দীর্ঘস্থায়ী উদ্বেগ বা ‘ক্রনিক স্ট্রেস’ প্রতিরোধ ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। দীর্ঘ সময় ধরে মানসিক চাপে থাকলে শরীর ‘কর্টিসল’ নামক স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ করে। এই হরমোনের মাত্রা বেড়ে গেলে তা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার স্বাভাবিক কাজকর্মকে দমিয়ে দেয়। ফলে শরীর সংক্রমণের মোকাবিলা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
শরীরচর্চার অভাব: নিষ্কর্মা জীবনযাপনও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমার অন্যতম কারণ। নিয়মিত শরীরচর্চা করলে দেহে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং ‘ইমিউন সেল’ বা রোগপ্রতিরোধকারী কোষ সারা শরীরে আরও দক্ষতার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ব্যায়ামের অভাবে এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, যা শরীরকে জীবাণুর আক্রমণের জন্য আরও সহজ লক্ষ্যবস্তু করে তোলে।
ধূমপান ও মদ্যপান: ধূমপান এবং অতিরিক্ত মদ্যপানের অভ্যাস যে শরীরের জন্য ক্ষতিকর, তা সকলেই জানেন। এই অভ্যাসগুলো সরাসরি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার উপর আঘাত হানে। তামাকের মধ্যে থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক এবং অ্যালকোহল- দুই-ই শ্বেত রক্তকণিকার কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়, যারা জীবাণুর বিরুদ্ধে শরীরের প্রাথমিক যোদ্ধা।
সুতরাং, বার বার অসুস্থ হওয়াকে কেবল আবহাওয়ার দোষ দিয়ে এড়িয়ে গেলে চলবে না। নিজের জীবনযাত্রার দিকে এক বার ফিরে তাকানো প্রয়োজন। স্বাস্থ্যকর খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত ব্যায়াম এবং মানসিক চাপমুক্ত জীবনই পারে আপনার শরীরের প্রাকৃতিক বর্মকে মজবুত রাখতে।
