রাতে যদি ভাল ঘুম হয়, তাহলে সকালে মানুষ সতেজ অনুভব করে। কিন্তু যদি রাতে ঘুম না হয়, তাহলে পুরো পরের দিনটাই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ঘুমের সময় প্রত্যেকেই নিজের মনের মতো পরিবেশ বেছে নেয়— কেউ সম্পূর্ণ অন্ধকারে ঘুমোতে পছন্দ করেন, আবার কেউ হালকা আলোতে স্বস্তি পান। কেউ ঢিলেঢালা পোশাক পরে ঘুমান, আবার অনেকে পোশাক ছাড়া ঘুমোতে বেশি আরাম বোধ করেন। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে— পোশাক ছাড়া ঘুমানো কি সত্যিই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, নাকি এটা শুধুই এক আধুনিক ট্রেন্ড? বিশেষজ্ঞদের মতামত জেনে নেওয়া যাক।

স্লিপ এক্সপার্টদের মতে, ঘুমের সময় শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকভাবে কিছুটা কমে যায়। যদি কেউ খুব টাইট বা ভারী পোশাক পরে ঘুমায়, তাহলে শরীরের ঠান্ডা হওয়ার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়, যার ফলে ঘুম ব্যাহত হতে পারে। পোশাক ছাড়া ঘুমলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে এবং সহজেই গভীর ঘুম আসে। এতে শরীর নিজেকে পুনর্গঠনের (রিপেয়ার) ও পুনরুদ্ধারের (রিকভারি) জন্য যথেষ্ট সময় পায়।

ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, ঠান্ডা পরিবেশে ঘুমলে মেলাটোনিন নামে ঘুম-নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনের নিঃসরণ বৃদ্ধি পায়, ফলে ঘুম গভীর হয়।

যাঁরা অনিদ্রা বা ঘন ঘন ঘুম ভেঙে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের জন্য পোশাক ছাড়া ঘুমনো সহজ ও প্রাকৃতিক সমাধান হতে পারে। শরীর ঠান্ডা থাকলে ঘুমের চক্র স্থিতিশীল থাকে। গভীর ঘুমের সময় বাড়ে এবং সকালে ওঠার পর শরীর-মন সতেজ লাগে। এটি মানসিক ক্লান্তি ও স্ট্রেসও কমায়।

দিনভর পোশাক পরে থাকার ফলে ত্বক হাওয়া পায় না। বিশেষ করে গরম বা আর্দ্র আবহাওয়ায় ঘাম এবং ঘর্ষণের কারণে র‍্যাশ, ফাঙ্গাল সংক্রমণ বা চুলকানির সমস্যা দেখা দিতে পারে। পোশাক ছাড়া ঘুমালে ত্বক বাতাস পায়, অক্সিজেন গ্রহণ বাড়ে এবং ত্বক সুস্থ থাকে। এতে বগল, কুঁচকি ও পিঠের মতো অংশে হাওয়া চলাচল করে, যা ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে রোধ করে। তবে বিছানার চাদর এবং বালিশ নিয়মিত পরিষ্কার রাখা জরুরি, নইলে ধুলো বা জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।

পুরুষ ও নারীর জন্য আলাদা উপকারিতা
পুরুষদের ক্ষেত্রে পোশাক ছাড়া ঘুমানো স্পার্ম কাউন্ট ও টেস্টোস্টেরন লেভেল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে, কারণ ঠান্ডা তাপমাত্রা প্রজনন অঙ্গকে সুস্থ রাখে।
নারীদের ক্ষেত্রে এটি যৌনাঙ্গের স্বাস্থ্যের  জন্য উপকারী, কারণ বাতাস চলাচল করলে আর্দ্রতা ও সংক্রমণের ঝুঁকি কমে।

নগ্ন হয়ে ঘুমানোর সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যেরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এতে শরীর ও মনের মধ্যে গভীর সংযোগ তৈরি হয়, যা উদ্বেগ ও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা পোশাক ছাড়া ঘুমান, তারা নিজেদের বেশি আত্মবিশ্বাসী ও রিল্যাক্সড মনে করেন। কাপড়ের চাপ না থাকায় শরীরে অক্সিটোসিন নামে ‘ফিল-গুড হরমোন’-এর নিঃসরণ বাড়ে।

দাম্পত্য জীবনে ইতিবাচক প্রভাব
যদি স্বামী-স্ত্রী বা পার্টনার একসঙ্গে ঘুমোন, তবে পোশাক ছাড়া ঘুমনো তাঁদের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা ও আবেগপূর্ণ বন্ধন বাড়াতে পারে। স্কিন-টু-স্কিন টাচ বা ত্বকের সংস্পর্শে অক্সিটোসিন হরমোন নিঃসৃত হয়, যা ভালবাসা, বিশ্বাস ও সন্তুষ্টির অনুভূতি জাগায়।

তবে এটি কেবল তখনই উপকারী, যখন উভয়েই এতে স্বস্তি বোধ করেন এবং ঘরের তাপমাত্রা সঠিক থাকে। ঘর খুব বেশি ঠান্ডা বা গরম না হওয়া, বিছানা ও চাদর পরিষ্কার ও সুতির হওয়া জরুরি।
যাঁদের ত্বকের অ্যালার্জি, ইনফেকশন বা হাইপোথারমিয়া-র সমস্যা আছে, তাঁদের জন্য পোশাক ছাড়া ঘুমানো উপযুক্ত নয়।