ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন থাকে আবছা, ঘুম ভাঙলেই যেন মিলিয়ে যায় স্বপ্ন। দুঃস্বপ্ন মনে রাখতে না চাইলেও ভাল স্বপ্ন আমরা মনে করতে চাই। কিন্তু কোথাও যেন স্বপ্নের সব দৃশ্য অগোছালো হয়ে যায়। চেষ্টা করলেও বহু সুখের স্বপ্ন হারিয়ে যায় স্মৃতির ভিড়ে। কেমন হত যদি স্বপ্ন রেকর্ড করা যেত?  প্লে ব্যাক করে দেখা যেত স্বপ্নের দৃশ্যগুলো! শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এই ‘স্বপ্ন’ই সত্যি হতে চলেছে। অসাধ্য সাধন করতে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। 

নিরলস গবেষণা করে গবেষকরা তৈরি করেছেন একটি যুগান্তকারী যন্ত্র। যার মাধ্যমে স্বপ্নকে রেকর্ডিং করা সম্ভব। মনে না পড়লেও রেকর্ড হওয়া স্বপ্ন থেকে বুঝে নিতে পারবেন স্বপ্নে ঠিক কী দেখেছিলেন। মস্তিষ্কের অবচেতন অংশ স্বপ্নের দৃশ্য তৈরি করে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি এই যন্ত্রটি মস্তিষ্কের প্রতিচ্ছবি তুলতে সক্ষম। এককথায় “স্বপ্ন দেখার পর তা আবার প্লে করা”, আর সায়েন্স ফিকশনের কল্পনা নয়। সাম্প্রতিক গবেষণায় আবিষ্কৃত প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষের স্বপ্ন রেকর্ড করে পুনরায় চালানো যাবে। বিশেষ এক ধরনের হেডসেট এবং উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে এই কাজ সম্ভব হবে।

আরও পড়ুনঃ দুঃস্বপ্নে রাত কাটে? অজান্তেই এগোচ্ছেন অকালমৃত্যুর পথে!নতুন গবেষণায় চাঞ্চল্যকর দাবি


কীভাবে কাজ করে প্রযুক্তিটি? বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত হয় ফাংশনাল এমআরআই (এফএমআরআই) মেশিন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। যখন কেউ ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখেন, তখন মস্তিষ্কে বিশেষ ভিজ্যুয়াল সংকেত তৈরি হয়। এই সংকেতগুলোকে মেশিন স্ক্যান করে ধরে ফেলে। পরে এআই অ্যালগরিদম সেগুলো বিশ্লেষণ করে স্বপ্নের সম্ভাব্য চিত্র বা দৃশ্য তৈরি করে। এর মাধ্যমে গবেষকরা বস্তু, মানুষ বা পরিবেশের মতো উপাদানগুলো ৬০ থেকে ৭০ শতাংশের সঠিক তথ্য নিয়ে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন।

গবেষকরা বলছেন, এই প্রযুক্তি কেবল বিজ্ঞান কল্পকাহিনি নয়,বাস্তব জীবনে নানা ক্ষেত্রে বিপ্লব আনতে পারে। যেমন স্বপ্ন বিশ্লেষণ করে মানুষের মনের ভেতরে চাপ, ভয় বা আতঙ্ক চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। ঘন ঘন দুঃস্বপ্ন, অনিদ্রা বা স্নায়ুবিক রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করবে এই যন্ত্র। ভবিষ্যতে হয়তো শিল্পী, লেখক বা সিনেমা নির্মাতারা স্বপ্ন থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে সরাসরি কনটেন্ট তৈরি করতে পারবেন।


স্বপ্ন রেকর্ড ও প্লে করার এই হেডসেট এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। তবে এটি যে ভবিষ্যতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এক নতুন দরজা খুলে দেবে তা বলাই যায়। যদিও এটি বিজ্ঞানের এক বিশাল অগ্রগতি। তবে এনিয়ে গবেষণা অব্যাহত রয়েছে।

এখনও প্রযুক্তিটির কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সম্পূর্ণ স্বপ্নকে সিনেমার মতো করে দেখা সম্ভব নয়। আবেগ, শব্দ বা জটিল কাহিনি এখনও বোঝা যাচ্ছে না। প্রযুক্তিটি মূলত স্বপ্নের মধ্যে দেখা কোনও বস্তুর আকার বা ভিজ্যুয়াল প্যাটার্ন শনাক্ত করতে সক্ষম। গবেষকরা মনে করছেন, একদিন হয়তো মানুষের স্বপ্ন পুরোপুরি ভিডিওর মতো করে দেখা যাবে। এই প্রযুক্তি উন্নত হলে স্বপ্নের প্রতিটি অনুভূতি, গল্প ও চরিত্র ধরা সম্ভব হবে, যা চিকিৎসা, বিনোদন এমনকী আইন-শৃঙ্খলাতেও ব্যবহার হতে পারে।