একজন মহিলা যখন ইতিমধ্যেই গর্ভবতী, তখন আবার গর্ভধারণ কি সম্ভব? শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও বাস্তবে বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে, এমন ঘটনা অসম্ভব নয়। এই বিরল ও চমকপ্রদ ঘটনার নাম সুপারফিটেশন। সাধারণ যমজ বা বহুজাতীয় গর্ভধারণের সঙ্গে এটি পুরোপুরি আলাদা।

সাধারণ যমজ সন্তানের ক্ষেত্রে একই চক্রে দুটি ডিম্বাণু বার হয় এবং একই সময়ে নিষিক্ত হয়। কিন্তু সুপারফিটেশনের ক্ষেত্রে ঘটনা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে প্রথম গর্ভধারণের কয়েক সপ্তাহ পর আবার একটি ডিম্বাণু বার হয় এবং তা নিষিক্ত হয়ে যায়। অর্থাৎ মা ইতিমধ্যেই গর্ভবতী থাকাকালীন দ্বিতীয়বার গর্ভধারণ ঘটে।

বিশ্বজুড়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানে সুপারফিটেশনের ঘটনা হাতে গোনা। তাই এটি একেবারেই বিরল। এই ধরনের গর্ভাবস্থায় দুটি ভ্রূণের গর্ভকাল এক হয় না। ফলে জন্মের সময় দুই সন্তানের আকার এবং ওজনেও বড় পার্থক্য দেখা দিতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই মা নিজে বুঝতে পারেন না যে তিনি একই সময়ে দু'বার গর্ভবতী। তবে আল্ট্রাসাউন্ডে দেখা যায়, একটি ভ্রূণ অন্যটির তুলনায় ছোট। এটি কোনও স্বাস্থ্যগত সমস্যা নয়, বরং তারা আলাদা সময়ে গর্ভে এসেছে বলেই এমন হয়।

বিজ্ঞানীরা এখনও পুরোপুরি বোঝার চেষ্টা করছেন, কীভাবে সুপারফিটেশন সম্ভব। সাধারণভাবে গর্ভধারণের সময় শরীরে হরমোনের এমন পরিবর্তন ঘটে, যা নতুন ডিম্বাণুর নিষিক্ত হওয়া বন্ধ করে দেয়। অর্থাৎ প্রাকৃতিকভাবে দ্বিতীয় গর্ভধারণ হওয়া উচিত নয়। তবে কিছু খুব বিরল ক্ষেত্রে এই প্রাকৃতিক বাধা ব্যর্থ হয় এবং তখনই ঘটে সুপারফিটেশন।

যদিও এর সম্ভাবনা অত্যন্ত কম, তবু এটি মানবদেহের বিস্ময়কর ক্ষমতার এক উদাহরণ। সুপারফিটেশন যেন প্রমাণ করে প্রকৃতির কাছে এখনও অনেক অজানা রহস্য লুকিয়ে আছে। চিকিৎসকদের মতে, এই ধরনের ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, মানবদেহ কতটা চমকপ্রদ এবং জটিল। সুপারফিটেশন শুধু একটি বিরল ঘটনা নয়, এটি এক ধরনের প্রাকৃতিক বিস্ময়, যা বিজ্ঞানকে এখনও ভাবিয়ে রেখেছে।