আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিয়ের পর প্রেমিক-প্রেমিকার সম্পর্ক ভিন্ন মাত্রা পায়। তবে অনেক দম্পতি লক্ষ্য করেন যে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যৌন আকর্ষণ ও আগ্রহে ভাটা পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি একটি সাধারণ ঘটনা হলেও এর পেছনে রয়েছে জটিল শারীরবৃত্তীয়, মানসিক ও সামাজিক কারণ। প্রয়োজন সচেতনতা, খোলামেলা আলোচনা এবং সঠিক চিকিৎসা।

শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন

চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের হরমোনের ভারসাম্যে পরিবর্তন আসে। পুরুষদের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন হ্রাস পায়, যা যৌন আকাঙ্ক্ষা ও কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। অন্যদিকে, নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভধারণ, সন্তান জন্ম, থাইরয়েড বা পিসিওএস-এর মতো অসুখ, এমনকি মেনোপজের কারণে হরমোনের ওঠানামা হয়। এতে যৌন আগ্রহ হ্রাস পাওয়া ছাড়াও শারীরিক অস্বস্তি, যেমন যোনি শুষ্কতা বা ক্লান্তি তৈরি হতে পারে।

মানসিক চাপ ও জীবনযাত্রার প্রভাব

আধুনিক জীবনে কাজের চাপ, আর্থিক দায়িত্ব, সংসারের খুঁটিনাটি সমস্যা ও সন্তান পালনের দায়িত্ব দম্পতিদের মানসিকভাবে ক্লান্ত করে তোলে। এর ফলে দাম্পত্য সম্পর্কে আবেগীয় দূরত্ব তৈরি হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিক চাপ যৌন ইচ্ছাকে সরাসরি প্রভাবিত করে। অনেক সময় অবসাদ, উদ্বেগ বা দাম্পত্যকলহ শারীরিক ঘনিষ্ঠতাকে আরও কঠিন করে তোলে।

অভ্যাস ও একঘেয়েমি

প্রেমের শুরুর উত্তেজনা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অভ্যাসে পরিণত হয়। সম্পর্ক যত দীর্ঘ হয়, দম্পতিরা নির্দিষ্ট রুটিনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। এতে শারীরিক সম্পর্কে নতুনত্ব ও কৌতূহল হারিয়ে যায়। ফলে যৌন মিলন অনেকের কাছে আনন্দের বদলে দায়িত্বের মতো মনে হতে শুরু করে।

আরও পড়ুন: কোনও দৈত্য যেন ধনুকের মতো বাঁকিয়ে দিয়েছে শত শত গাছের মাথা, এই অদ্ভুত বনের রহস্য আজও ভেদ করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা

পুরুষদের ক্ষেত্রে বিশেষ কারণ

টেস্টোস্টেরন হ্রাস

কাজের চাপ ও ক্লান্তি

আর্থিক দায়িত্বে অতিরিক্ত মনোযোগ
এসব কারণে পুরুষদের মধ্যে যৌন আগ্রহ হ্রাস দেখা যায়।


নারীদের ক্ষেত্রে বিশেষ কারণ

গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মের পর শারীরিক পরিবর্তন

হরমোনজনিত সমস্যা (পিসিওএস, থাইরয়েড)

মেনোপজের প্রভাব

আবেগীয় দূরত্ব বা আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া
এসব কারণে নারীরা যৌন সম্পর্কে অনীহা বোধ করতে পারেন।


আগ্রহ বাড়ানোর টিপস

১. অগ্রাধিকার দিন ঘনিষ্ঠতায়: ব্যস্ত জীবনের মাঝেও দম্পতিদের জন্য আলাদা সময় বের করা জরুরি।


২. খোলামেলা কথা বলুন: যৌন চাহিদা, সমস্যা বা ইচ্ছা নিয়ে সৎ আলোচনা করুন।


৩. নতুনত্ব আনুন: সম্পর্কের মধ্যে চমক, ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা বা রোমান্টিক উদ্যোগ নিন।


৪. নিজের যত্ন নিন: সুস্থ দেহ ও মানসিক শান্তি যৌন জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।


কবে বিশেষজ্ঞের সাহায্য প্রয়োজন?

যদি দীর্ঘদিন ধরে যৌন সম্পর্ক না থাকে, ইচ্ছার অমিল তীব্র হয়, বা যৌন নিয়ে আলোচনাই ঝগড়ায় গড়ায়—তাহলে দম্পতি কাউন্সেলিং প্রয়োজন হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক পরামর্শ ও চিকিৎসা যৌন জীবনে নতুন উদ্দীপনা আনতে সাহায্য করতে পারে।
বিবাহিত জীবনে যৌন আকাঙ্ক্ষা কমে যাওয়া একেবারেই অস্বাভাবিক নয়। বরং এটি একটি সাধারণ চ্যালেঞ্জ, যা বোঝাপড়া, ধৈর্য এবং ভালোবাসার মাধ্যমে অতিক্রম করা সম্ভব। মনে রাখতে হবে, যৌনতা শুধু শারীরিক ঘনিষ্ঠতা নয়—এটি আবেগ, বিশ্বাস ও যোগাযোগেরও প্রতিফলন।