ভাগ্যকে অনেকেই রহস্য বা কাকতালীয় ঘটনা বলে মনে করেন। কারওর কাছে, নিছক কুসংস্কার, আবার কেউ ভাগ্যের ওপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস রাখেন। কিন্তু ভাগ্য কি সত্যিই থাকে, নাকি মানুষ নিজেই নিজের সুযোগ তৈরি করে? এর পেছনে আদৌ বিজ্ঞানের কোনও ব্যাখ্যা আছে? যুগ যুগ ধরে এই সব যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর ঘুরপাক খাচ্ছে মানুষের মনে। যার সমাধান খুঁজতে পরীক্ষা চালান বিজ্ঞানীরা। সেই গবেষণায় উঠে এসেছে, ভাগ্য কোনও অলৌকিক শক্তি নয়, বরং 'ভাগ্যবান' হওয়ার অনুভূতিটি আসলে মানুষের মস্তিষ্ক ও আচরণকেই বদলে দেয়। যার ফলে সম্ভাবনার গতিপথও পাল্টে যায়।

২০১৯ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল পদার্থবিজ্ঞানী ইলেকট্রনের ওপর বিশেষ এক পরীক্ষা চালান। যার ফলাফল দেখে তাঁরা রীতিমতো বিস্মিত হয়ে যান। বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেন যে কণাগুলোর আচরণ পর্যবেক্ষকের প্রত্যাশার ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হচ্ছিল। অর্থাৎ গবেষকের মনে কী ধরনের ফলাফলের আশা আছে, সেটাই কণার আচরণকে প্রভাবিত করছিল। 

পরীক্ষায় দেখা যায়, কেউ যদি মনে মনে একটি নির্দিষ্ট ফলের প্রত্যাশা করেন, তাহলে ইলেকট্রনের আচরণও সেই প্রত্যাশার দিকেই সরে যায়। বিজ্ঞানীরা এই ঘটনাকে নাম দেন 'অবজার্ভার কোহেরেন্স ইফেক্ট'। তাঁদের মতে, মানুষের প্রত্যাশা কেবল মানসিক নয়, এটি কণার গতিবিধি থেকে শুরু করে সম্ভাবনার বাস্তব রূপ নেওয়া পর্যন্ত, সবকিছুর উপর সূক্ষ্ম প্রভাব ফেলতে পারে। সহজভাবে বলতে গেলে, আপনি যদি বিশ্বাস করেন কিছু ভাল ঘটবে, আপনার মন ও নজর এমনভাবে কাজ করে যে সেই ভাল ঘটনাকে খুঁজে পাওয়া সহজ হয়ে যায়।

মানুষের মস্তিষ্ক একসঙ্গে সব তথ্য গ্রহণ করতে পারে না। তাই এটি ফিল্টার করে শুধু সেই তথ্যই সামনে আনে, যা আমাদের প্রত্যাশার সঙ্গে মিলে যায়। কেউ যদি নিজেকে ভাগ্যবান ভাবে, তার মন চারপাশের ছোট-বড় অনেক ইঙ্গিত, সুযোগ বা সম্ভাবনাকে দ্রুত চিনে নেয়। আর যে ব্যক্তি নিজেকে ভাগ্যবান ভাবেন না, সে একই সুযোগের মধ্যে সম্ভাবনা খুঁজে পায় না।

এমনই প্রমাণ মিলেছে সুইজারল্যান্ডের জুরিখে করা আরেকটি গবেষণাতেও। সেখানে দেখা যায়, যারা নিজেদের ভাগ্যবান মনে করেন তারা অন্যদের তুলনায় তিন গুণ বেশি সুযোগ ধরতে সক্ষম হয়। রাস্তা থেকে টাকা পাওয়া, অপ্রত্যাশিত চাকরির প্রস্তাব বা ব্যবসায়িক চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করা-এসবে তাদের সাফল্য বেশি। গবেষকদের মতে, এর পেছনে কোনও জাদু নেই; বরং তাদের মস্তিষ্ক সেই সংকেতগুলোকেও ধরে ফেলে যা অন্যরা গুরুত্ব দেয় না। ফলে সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। 

গবেষকদের মতে, ভাগ্য কোনও অলৌকিক শক্তিও নয়। বরং এটি এমন মানসিক অভ্যাস, যা মানুষের মনোযোগ ও প্রত্যাশাকে এমনভাবে সাজিয়ে দেয় যে সম্ভাবনার জগৎ একসময় তার পক্ষে কাজ করতে শুরু করে। বাস্তব পৃথিবী প্রতিটি মুহূর্তে অসংখ্য সম্ভাবনা তৈরি করে। এর মধ্য থেকে কোনটি বাস্তব হবে, তা অনেকটাই নির্ভর করে একজন মানুষের মন কী খুঁজে পেতে প্রস্তুত আছে তার ওপর।