আজকাল ওয়েবডেস্ক: ব্যস্ত জীবন, কর্পোরেট দৌড়ঝাঁপ, আর চেনা ক্লান্তির মধ্যেও যদি আপনি খুঁজতে চান দাম্পত্যে একটু প্রশান্তি ও গভীরতা—তাহলে সকালে ঘুম ভাঙার পর স্ত্রীকে কয়েক মিনিট আলিঙ্গন করুন। মনোবিদরা বলছেন, এটি কেবল আবেগের প্রকাশ নয়, বরং মস্তিষ্ক ও মন দুটিকেই ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে।

ভোরবেলার আলিঙ্গন: ছোট অভ্যাস, বড় প্রভাব

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, প্রতিদিন সকালে প্রিয়জনকে আলিঙ্গন করলে শরীরে অক্সিটোসিন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যাকে ‘ভালোবাসার হরমোন’ বলা হয়। এই হরমোন মনকে শান্ত করে, উদ্বেগ কমায় এবং সম্পর্ককে গভীরতর করে তোলে। মানসিক স্বাস্থ্য শুধু বাইরের চাপ নয়, ঘরের ভেতরের পরিবেশেও নির্ভর করে, বলেন বিশিষ্ট মনোবিদরা। ঘুম থেকে ওঠার পর যদি কেউ প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরেন, তাহলে তার স্নায়ু শান্ত হয়, দিন শুরু হয় এক ধরনের আবেগগত নিরাপত্তার ভিতরে। এটা কর্মক্ষেত্রেও আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।

আরও পড়ুন: এমনিতে সাদামাটা ছবি, কিন্তু মহিলার ওইখানে ওটা কী? ভাইরাল ছবিতে বিভ্রান্তি, হাসিতে ফেটে পড়ছে নেটদুনিয়া

আলিঙ্গন কীভাবে সম্পর্ক গড়ে?

আলিঙ্গনের মধ্য দিয়ে শরীরে শরীরের স্পর্শ যতটা, তার চেয়েও বেশি থাকে একে অপরের প্রতি নির্ভরতা, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রকাশ। মনোবিজ্ঞানের পরিভাষায়, এটি ‘নন-ভার্বাল অ্যাচমেন্ট’ বা অবাকথিত বন্ধনের প্রকাশ। অনেক স্বামী-স্ত্রী নিজেদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করলেও আবেগগত দূরত্বে ভোগেন। সকালে একসাথে পাঁচ মিনিট সময় কাটানো, একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকা, বা কেবল নিঃশব্দে জড়িয়ে ধরা—এসবই সেই দূরত্ব কমায়, বলেন মানসিক সুস্থতা পরামর্শদাতারা।

আধুনিক জীবনে প্রয়োজন এমন ‘মোমেন্টস অফ কানেকশন’

নিউরোসায়েন্স বলছে, ঘুম থেকে উঠেই ফোনে মুখ গোঁজার বদলে যদি কেউ প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরে, তাহলে মস্তিষ্কের অ্যামিগডালা অংশে ইতিবাচক সংকেত প্রবাহিত হয়, যা সারা দিন মানসিক স্থিতি বজায় রাখতে সাহায্য করে। একটি আলিঙ্গন মানে কেবল ভালোবাসা নয়, বরং বলা—‘আমি আছি, তুমি নিরাপদ।’ এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বার্তা, বিশেষত আজকের বিচ্ছিন্ন সময়ের জন্য, বলেন ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্টরা।

স্নেহের অনুশীলন করলেই সংসার হয় সহনশীল

মনোবিদরা বলছেন, দাম্পত্য সম্পর্ক মজবুত করতে বড় কোনো উপহার বা পরিকল্পনার দরকার নেই। বরং প্রতিদিনের ছোট ছোট অভ্যাসই সেই প্রেম ধরে রাখতে পারে। ভোরের কয়েকটি মুহূর্ত—জেগে উঠে একসাথে থাকা, জড়িয়ে ধরা, চোখে চোখ রাখা—এসবই গড়ে তোলে এমন এক সম্পর্ক, যেখানে বিশ্বাস আর ভালবাসা সহযাত্রী হয়। তাই আজ থেকেই শুরু করুন—ভোরের একটি আলিঙ্গনে দিন শুরু করুন। কারণ এই ছোট মুহূর্তগুলোই গড়ে তোলে একটা সুন্দর ও স্থায়ী সংসারের ভিত।

সুখী দাম্পত্য: ছোট ছোট মুহূর্তেই লুকিয়ে থাকে বড় সুখ

সুখী দাম্পত্য জীবন মানে শুধুই আর্থিক নিরাপত্তা বা ছুটির দিনে একসঙ্গে সিনেমা দেখা নয়। এর গভীরে আছে প্রতিদিনের অসংখ্য ছোট ছোট আচরণ—এক কাপ চা বানিয়ে দেওয়া, ক্লান্ত স্বামীর কাঁধে হাত রাখা, স্ত্রীর মনের কথা মন দিয়ে শোনা। বিশেষজ্ঞরা বলেন, দাম্পত্যের মূল চাবিকাঠি হলো “ছোট ছোট সহানুভূতির অভ্যেস”। ক্লিনিকাল সাইকোথেরাপিস্টদের মতে, দাম্পত্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস দুটি—শ্রবণ এবং গ্রহণ। প্রত্যেকে চায় তার কথা মন দিয়ে শোনা হোক। আর প্রত্যেকে চায় তার আবেগগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়া হোক। অনেক সময় দেখা যায়, দীর্ঘদিন একসঙ্গে থাকার পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যেন একঘেয়েমি চলে আসে। এই জায়গাতেই জরুরি হয়ে পড়ে সম্পর্কের রোমান্সকে টিকিয়ে রাখা। বিশেষজ্ঞদের মতে, সপ্তাহে একদিন 'ডেট নাইট', মাঝে মাঝে ছোট্ট উপহার, না বলেও পাশে দাঁড়ানো—এসবই ভালোবাসার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।