আজকাল ওয়েবডেস্ক: অনেকেই মনে করেন জুনিয়র মানেই তাঁর উপর প্রভুত্ব করতে পারবেন সিনিয়ররা। কিন্তু এখনকার কর্পোরেট দুনিয়ার যে সেই দাদাগিরি আর চলবে না সম্প্রতি তারই উদাহরণ মিলল একটি ভাইরাল পোস্টে। 
সিইও, ভিসি এবং সংস্থার প্রতিষ্ঠাতাদের পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং বিশেষজ্ঞ যতীন সাইনি। সম্প্রতি লিঙ্কডইন-এ তিনি নিজের কর্মজীবনের একটি কঠিন অথচ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। চাকরিতে যোগ দেওয়ার মাত্র পাঁচ দিনের মাথায় এক উচ্চপদস্থ কর্মীকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি।
যতীন লিখেছেন, “সোমবার একজনকে চাকরিতে নিয়োগ করেছিলাম এবং শুক্রবার তাঁকে বরখাস্ত করি। এটা আমার জন্য একেবারেই গর্বের মুহূর্ত নয়। বিষয়টা সহজ ছিল না।” তিনি জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় একটি অ্যাসাইনমেন্ট পর্যালোচনা করার সময় ওই সিনিয়র একজিকিউটিভ যতীনের সামনেই এক জুনিয়র কর্মীকে উদ্দেশ্য করে অপমানজনক মন্তব্য করেন।
আরও পড়ুন: বিমান দুর্ঘটনায় মরেননি, জেতেন ৫ কোটির লটারি! সাতবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরা বিশ্বের সবচেয়ে ‘লাকি’ ব্যক্তি ইনি
আরও পড়ুন: শুক্রাণু দান করে কত টাকা আয় হয়? ভারতে বীর্য দাতা হতে গেলে কোন কোন নিয়ম জানতে হবে?
তিনি বলেন: “মাথাটা কি বাড়িতে রেখে এসেছ? এর চেয়ে ভাল যদি কিছু না করতে পারো, তাহলে নতুন চাকরি খোঁজা উচিত। কাল মাথাটা সঙ্গে করে এনো, নয়তো আসারই দরকার নেই।”
এই ধরনের কথা শুনে স্তম্ভিত হয়ে যান যতীন। তিনি তৎক্ষণাৎ ওই সিনিয়র একজিকিউটিভকে মিটিংয়ের পরে থেকে যেতে বলেন। তিনি সরাসরি বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন এবং তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কাজের পর্যালোচনার সঙ্গে ব্যক্তিগত আক্রমণকে গুলিয়ে ফেলা যে অনুচিত, সে কথাও স্পষ্ট করে দেন।
যতীন বলেন, “আমি স্পষ্ট করে দিয়েছিলাম যে, দিনের শেষে কাউকে অপমান করা উচিত নয়। বিশেষ করে শুক্রবার সন্ধ্যায়। এতে পুরো সপ্তাহান্তটাই নষ্ট হয়ে যায়। আমরা কাজের ওপর মতামত দিই, ব্যক্তির ওপর নয়।”
কিন্তু নিজের ভুল স্বীকার করার পরিবর্তে, ওই কর্তা নিজের আচরণের পক্ষেই সওয়াল করেন। তাঁর যুক্তি ছিল, “এভাবেই শক্তিশালী দল তৈরি হয়।”
যতীন জানিয়েছেন, এই উত্তর পাওয়ার পর আর দ্বিতীয়বার ভাবেননি তিনি। তিনি বলেন, “আমি বুঝে গিয়েছিলাম, আমরা নিয়োগে একটি বিশাল বড় ভুল করে ফেলেছি।” এবং ফল স্বরূপ শুক্রবারেই ছাঁটাই করা হয় ওই উচ্চপদস্থ কর্মীকে।
যতীন আরও জানিয়েছেন, তাঁর সংস্থা এখন আবার ওই একই পদে সিনিয়র পার্সোনাল ব্র্যান্ড একজিকিউটিভ নিয়োগ করছে। তবে এবার তারা শুধু দক্ষতাই নয়, নম্রতা এবং বুদ্ধিমত্তাকেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছে।
“আমরা এমন একজনকে চাই যিনি দক্ষ, শিখতে আগ্রহী এবং সর্বোপরি, শ্রদ্ধাশীল। কারণ আমরা মানুষের সম্মান নষ্ট না করে তাঁদের পার্সোনাল ব্র্যান্ড তৈরি করতে চাই।”
তিনি চাকরির জন্য আবেদন করার একটি লিঙ্কও শেয়ার করেছেন।
যতিনের এই পোস্টটি লিঙ্কডইন-এ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং কর্মক্ষেত্রের সংস্কৃতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।
এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “কে বলেছেন জানি না, তবে অনুপযুক্ত মানেই যে সে ব্যক্তি খারাপ, তা নয়। এর অর্থ, তিনি আপনার সংস্থার জন্য উপযুক্ত নন।”
অন্য একজন নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, “আপনার থেকে নতুন কিছু শিখলাম। আমি স্বীকার করছি যে আমার মেজাজ সপ্তমে চড়ে থাকে এবং আমি সহজেই রেগে যাই। এই পোস্টটি আমাকে আত্মবীক্ষণে সাহায্য করল। আমি অবশ্যই নিজেকে শুধরে নেব।”
তৃতীয় এক ব্যক্তি মন্তব্য করেন, “আপনি যে ভুলটা বুঝতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছেন, এটা অত্যন্ত প্রশংসার যোগ্য।”