আজকাল ওয়েবডেস্ক: মধ্যবয়সে মহিলাদের যৌন আকাঙ্ক্ষা কমে যাওয়া কি শুধুই হরমোনজনিত সমস্যা? নাকি এর পেছনে রয়েছে আরো জটিল মানসিক ও সামাজিক কারণ? লন্ডনের এনএইচএস কনসালট্যান্ট এবং যৌনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. জেসিকা গ্যাডি বলছেন, “যৌনতা শুধুমাত্র শারীরিক কিছু নয়, এর গভীরে রয়েছে মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়া। ক্লান্তি, উদ্বেগ এবং বিরক্তির মতো মানসিক অনুভূতিগুলোই যৌনজীবনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।” ডা. গ্যাডি গত দশ বছরে বহু মধ্যবয়সী নারীর সঙ্গে কাজ করেছেন—বিশেষ করে তাঁদের যারা হেটারোসেক্সুয়াল সম্পর্কে রয়েছেন এবং যৌন আগ্রহে ভাটা বা যৌনতায় ব্যথার অভিজ্ঞতা করছেন। অনেকেই একে রূপান্তরিত হরমোনের দোষ বলে মনে করেন, কিন্তু গবেষণা বলছে, সমস্যার গোড়ায় রয়েছে সম্পর্কের মান, পারস্পরিক যোগাযোগ এবং মানসিক চাপ।
তিনি জানান, “মেনোপজের শারীরিক পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ ঠিকই, কিন্তু নারীদের জীবনের এই সময়ে কাজ, পরিবার, আর্থিক সংকট ও সম্পর্কের টানাপোড়েন—সবকিছু একসঙ্গে সামলাতে হয়। বয়স্ক অভিভাবক এবং নিজের সন্তান দুজনেরই দেখভালের চাপও এসে পড়ে। এর প্রভাব পড়ে যৌন ইচ্ছায়।” এক গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের যৌন সন্তুষ্টি মূলত নির্ভর করে তাঁদের সম্পর্কের মান এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণার উপর, বয়স বা মেনোপজ নয়। যেসব নারীরা তাঁদের সঙ্গীর সঙ্গে খোলাখুলি যৌনতা নিয়ে কথা বলতে পারেন, তাঁদের সন্তুষ্টি অনেক বেশি—তারা কতবার যৌনতায় লিপ্ত হন, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এই যোগাযোগের খোলা জায়গা।
আরও পড়ুন: সঙ্গমে আপত্তি 'স্ত্রী'র, ঘোমটার নিচেই লিঙ্গ 'বদল'! বিয়ের দেড় মাস পরে হুলুস্থুল
ডা. গ্যাডি বলেন, “যৌনতা মানেই penetrative sex নয়। ঘনিষ্ঠতা তৈরির অনেক রকম উপায় রয়েছে—চুম্বন, আলিঙ্গন, শরীর ছোঁয়া—যা কিছু আনন্দদায়ক হয়।” আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যৌনতায় নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ। ডা. গ্যাডি বলেন, “অনেকেই মনে করেন যৌন আকাঙ্ক্ষা হঠাৎ করে চলে আসবে। কিন্তু অধিকাংশ নারীর ক্ষেত্রে তা নয়। আমাদের উদ্দীপনা, নিরাপদ পরিবেশ এবং সময়ের দরকার পড়ে।” ২০২২ সালের এক অস্ট্রেলীয় গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব নারীরা মনে করেন তাঁদের সঙ্গীরা গৃহস্থালির কাজ এবং সন্তানের দেখভালে সমান অংশ নিচ্ছেন, তাঁরা যৌন আকাঙ্ক্ষা বেশি অনুভব করেন। অর্থাৎ, থালা-বাসন ধোওয়া বা সন্তানকে ঘুম পাড়ানো—এইসব কাজে পুরুষ অংশগ্রহণ করলে সম্পর্কেও আসে যৌন উত্তাপ।
ডা. গ্যাডি বলছেন, “যখন নারীরা সম্পর্কের ভার কেবল নিজের কাঁধে নিতে বাধ্য হন, তখন যৌনতায় মগ্ন হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। অনেকেই মনে করেন, যৌনতা যেন একটা দায়িত্ব বা ‘পুরুষসঙ্গী খুশি রাখার মাধ্যম’। এতে স্বাভাবিক আকাঙ্ক্ষা দমন হয়ে যায়।” এই মানসিক বোঝা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কী? সবার আগে প্রয়োজন—সঙ্গীর সঙ্গে খোলামেলা কথা বলা। যৌনতা নিয়ে বাধ্যবাধকতার বোধ দূর করা। সম্পর্কের মান উন্নত করা এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো। যৌনতা নয়, ঘনিষ্ঠতা—এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সম্পর্ককে দেখার অভ্যাস গড়া। শারীরিক সমস্যার ক্ষেত্রে লুব্রিক্যান্ট, টপিক্যাল ইস্ট্রোজেন ক্রিম বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
ডা. গ্যাডি মনে করিয়ে দেন, “নিজের শরীর ও মনের যত্ন নেওয়া—যেমন সাঁতার কাটা, ধূমপান বন্ধ, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা—এসবই যৌন আকাঙ্ক্ষা ফিরিয়ে আনার পথে সাহায্য করতে পারে।” সবচেয়ে বড় কথা—যৌনতা হতে হবে নিজস্ব পছন্দের, আনন্দের উৎস। যদি যৌনতায় খুশি পাওয়া না যায়, তাহলে তা না চাওয়া একেবারেই স্বাভাবিক। সম্পর্কের ভেতর সেই বোঝাপড়াটুকুই সবচেয়ে বেশি জরুরি।
