কে ড্রামা কিংবা কে-পপ। ওটিটি কিংবা গানের দুনিয়া গত কয়েক বছর ধরে তাদেরই প্রেমে হাবুডুবু। আর তারই সূত্র ধরে দক্ষিণ কোরিয়ার বিনোদন থেকে খাওয়াদাওয়া, কিংবা রূপচর্চার হরেক ট্রেন্ড তোলপাড় ফেলেছে গোটা বিশ্বে। ভারতের নবীন প্রজন্মও সেই দলে। এ দেশের জেন জি কিংবা জেন আলফা এখন তাতেই বুঁদ। কোরিয়ান নুডলস, কোরিয়ান শ্যাম্পু কিংবা গ্লাস স্কিন ঘিরে তুমুল হইচইয়ের ফাঁকে এ বার জনপ্রিয়তার খাতায় নাম লিখিয়ে ফেলল কোরিয়ান গয়নাও।
কী এই কোরিয়ান জুয়েলারি?
কিছুদিন হল ফ্যাশন দুনিয়া ঝুপ করে ডুব দিয়েছে কোরিয়ান গয়নাগাঁটির মিনিমালিস্ট আবেদনে। ছিমছাম অথচ মনকাড়া, সহজ-সরল ডিজাইনের নেকলেস থেকে ব্রেসলেট, দুল থেকে আংটি আপাতত রণে-বনে-জলে-জঙ্গলে সর্বত্র বিরাজমান। শপিং মল থেকে ফুটপাথ, দামি ব্র্যান্ড থেকে ই-কমার্স পাড়ার দেদার ডিসকাউন্ট, খবরের ওয়েবসাইট থেকে সোশ্যাল মিডিয়া— কোরিয়ান জুয়েলারিতে মজে গিয়েছে ১৬ থেকে ৩৬। বড়সড়, আলাদা করে নিজের উপস্থিতি ঘোষণা করা, ভারী গয়না বা জমকালো সাজের বদলে যাদের পছন্দ বরাবরই ঝোঁকে সিম্পল, মিনিমালিস্ট, হাল্কা গয়না বা পোশাকআশাকের দিকে। এবার পুজোয় তারুণ্যের উদযাপনে তাই কে-জুয়েলারিই যে ট্রেন্ডিং, সে কথা কি আর আলাদা করে বলে দিতে হয়? তবে শুধু সাজের অঙ্গ হয়ে ওঠাই নয়, কোরিয়ান জুয়েলারির আবেদনের সিক্রেট তার নিজস্ব কিছু বিশেষত্ব।
ছিমছাম লুকেই বাজিমাত
নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইমে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা দক্ষিণ কোরিয়ার ছবি, ওয়েব সিরিজ কিংবা সাড়াজাগানো কোরিয়ান ব্যান্ড বিটিএস বা ব্ল্যাক পিঙ্কের গানের ভিডিয়োগুলো নজর করে দেখুন। চোখে পড়বে এক্কেবারে সোজাসাপ্টা, রোজকার পরার মতো অথচ ভীষণ এলিগ্যান্ট লুকের গয়না— সে হাতে হোক বা গলায় কিংবা কানে। তাদের ডিজাইন কিংবা ধরনে বিশেষ জটিলতা নেই। বরং বেশ সহজ নকশা বা সরলরেখায় আঁকা ছবির মতো। সাধারণ চেহারাতেই অসাধারণ হয়ে তাই নজর কাড়ছে এই ছিমছাম গয়নার সম্ভার।
গয়নাই আয়না
কোরিয়ান গয়নাকে আলাদা করে তোলে তাতে লুকিয়ে থাকা বার্তা। কখনও তাতে থাকে প্রকৃতি প্রেম, কখনও প্রিয়জনকে বলতে চাওয়া মনের কথা। কখনও বা গয়নার ডিজাইনই হয়ে ওঠে নির্দিষ্ট বিষয় বা বস্তুর প্রতীক। ব্রেসলেট, পেনডেন্ট, আংটি, টো-রিং, অ্যাঙ্কলেট কিংবা কানের দুলে ফ্লোরাল বা ওশন মোটিফ কিংবা পাতার নকশা যেমন প্রকৃতিকে ছুঁয়ে থাকতে চায়। কোরিয়ান বিশ্বাস অনুযায়ী, সোনা বা রুপোয় ক্লোভার, নট বা কয়েনের মতো পেনডেন্ট, রাশি মাফিক জোডিয়্যাক সিরিজের আংটি, দুল বা লকেট আবার সৌভাগ্য বয়ে আনে। প্রেমের প্রতীক হয়ে ওঠা কাপল রিং কিংবা ব্রেসলেটের ডিজাইনে দিব্যি মিলেমিশে থাকে তারুণ্যের উদযাপন।
সাজ যখন গল্প
এখনকার প্রজন্ম ফ্যাশনে গা ভাসানোর পাশাপাশি ভীষণ ভাবেই গুরুত্ব দিতে চায় স্টেটমেন্টকে। তাদের কাছে পোশাক বা গয়না স্রেফ সাজ নয়, বরং নিজেদের গল্প বলা, নিজেদের ব্যক্তিত্ব বা সংস্কৃতিকে তুলে ধরাটাই তার লক্ষ্য। সে জায়গাটাতেই তাদের মনের ঘরে বসত করেছে কোরিয়ান জুয়েলারি। বড়সড়, চোখটানা নেকপিস বা জটিল ডিজাইন যাদের পছন্দ ছিল না কখনও, তারা তাই সহজেই আপন করে নিচ্ছে এই গয়নাগুলোর ছিমছাম চেহারা, ছোট্ট অথচ মনকাড়া পেনডেন্ট কিংবা স্লিক লুকের একাধিক গয়না গলায় বা হাতে লেয়ার করে পরার ধরনধারণ।

ডেটিং থেকে অফিসে
জেন জি কিংবা আলফা প্রজন্ম স্লো ফ্যাশনে বিশ্বাসী। একই গয়না একাধিক জায়গায় পরে ফেলার অভ্যেসটা তাই তাদের মনে ধরেছে। কোরিয়ান জুয়েলারির সহজ সরল ডিজাইন এবং আভিজাত্য তাদের সে সুযোগ করে দিচ্ছে। ছোট্ট একজোড়া পার্ল স্টাড, মিনিয়েচার স্টেটমেন্ট চার্মস, সোনালি হেয়ারপিন কিংবা পুঁচকে বাটারফ্লাই ক্লিপের মতো সারাদিন অফিসে পরা গয়নাগুলো যে দিব্যি পরে ফেলা যাচ্ছে সন্ধের ক্যান্ডেললাইট ডিনারেও।
রং দিয়ে যায় চেনা
কোরিয়ান জুয়েলারি তারুণ্যের কথা বলে। তাদের পছন্দের কথা বলে। এই গয়নাগুলোর রংও তাই নবীন প্রজন্মের পছন্দসই। সিলভার বা রোজ় গোল্ডের মতো হাল্কা, অভিজাত অথচ চোখ টানা রং, প্যাস্টেল শেডে এই গয়নাগুলো তাই সহজেই মানিয়ে যাচ্ছে নানা ধরনের সাজে।
শেষপাতের টিপস
কীসের সঙ্গে কীভাবে পরবেন কোরিয়ান জুয়েলারি, সেটাও তো জানতে হবে! পুজোর সাজ প্ল্যান করার আগে বরং এই টিপসগুলো মাথায় থাক।
• বাঙালির কাছে পুজো মানেই সাবেক সাজ। শাড়ি, লহেঙ্গা কিংবা কুর্তির সঙ্গে পরে ফেলতে পারেন সোনা, রোজ গোল্ড বা রুপোর কোরিয়ান জুয়েলারি।
• পশ্চিমি সাজে মিনিমালিস্ট গয়নাই ভাল লাগে। লেয়ার্ড চেন বা ছোট্ট স্টাড তাই লম্বা ঝুলের সামার ড্রেস, টিশার্ট কিংবা ব্লেজার
