আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোকে ঘিরে আনন্দের শেষ নেই। নতুন পোশাক, প্যান্ডেল হপিং, ভূরিভোজ আর রাতভর আড্ডায় মেতে উঠেছে আপামর বাঙালি। কিন্তু বাড়ির সবচাইতে আদরের সদস্য, আপনার চারপেয়ে বন্ধুটির জন্য এই উৎসবের দিনগুলো কি ততটাই আনন্দের? অতিরিক্ত ভিড়, কান ফাটানো আওয়াজ আর খাবারের অনিয়ম তাদের জন্য শারীরিক ও মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই উৎসবের দিনগুলোতে ওদের জন্য চাই একটু বাড়তি যত্ন ও মনোযোগ।

১। শব্দের তাণ্ডব থেকে মুক্তি

দুর্গাপুজোর অন্যতম অঙ্গ হল প্যান্ডেলের মাইকে দিনরাত বাজতে থাকা গান ও ঢাকের আওয়াজ। অনেক জায়গায় আবার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ফাটানো হয় শব্দবাজি। কুকুরের শ্রবণশক্তি মানুষের চেয়ে অনেক বেশি প্রখর, তাই এই তীব্র শব্দ তাদের মধ্যে প্রচণ্ড ভয় ও উদ্বেগের সৃষ্টি করে।

 

করণীয়: পুজোর দিনগুলিতে, বিশেষ করে সন্ধ্যার পর বাড়ির যে ঘরে পোষ্য থাকবে তার দরজা-জানলা বন্ধ রাখুন। কুকুরটিকে বাড়ির এমন একটি ঘরে রাখার চেষ্টা করুন যেখানে বাইরের আওয়াজ তুলনামূলকভাবে কম পৌঁছায়। তার প্রিয় কম্বল বা নরম বিছানা দিয়ে একটি ‘সেফ জোন’ বা নিরাপদ আশ্রয় তৈরি করে দিন। প্রয়োজনে হালকা ভলিউমে শান্তিদায়ক গান চালিয়ে রাখতে পারেন, যা বাইরের শব্দকে কিছুটা হলেও চাপা দেবে। পশু চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যাংজাইটি কমানোর জন্য ভেষজ সাপ্লিমেন্ট বা কলার ব্যবহার করতে পারেন।

 

২। খাওয়াদাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ

উৎসবের দিনে বাড়িতে ভাল-মন্দ খাবারের ছড়াছড়ি। অতিথিদের আনা মিষ্টি থেকে শুরু করে নিজেদের জন্য তৈরি হওয়া চর্ব্য-চোষ্য-লেহ্য-পেয়, সবই থাকে হাতের নাগালে। এই সময় বাড়ির আদরের পোষ্যটিকে ভালবেসে একটু মিষ্টি বা ভাজাভুজি দিয়ে দেওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু মানুষের খাবার, বিশেষ করে মিষ্টি, তেল-মশলাযুক্ত খাবার, পেঁয়াজ, রসুন, চকোলেট ইত্যাদি কুকুরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে।

 

করণীয়: আপনার পোষ্যকে বাড়ির তৈরি সাধারণ খাবার, যেমন- সিদ্ধ চিকেন, ভাত ও সবজি দিন। অতিথিদের বারণ করে দিন যাতে তারা কুকুরকে খাবার না দেন। পুজোর সময়ও তার নিয়মিত খাবারের রুটিন এবং পরিমাণ বজায় রাখুন। পরিষ্কার পানীয় জল যেন সব সময় নাগালের মধ্যে থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখুন।

 

৩। ভিড় এবং রুটিনের পরিবর্তন

পুজোর সময় বাড়িতে অতিথিদের আনাগোনা বেড়ে যায়। অচেনা লোকজন এবং কোলাহল অনেক কুকুরকে ভীত বা উত্তেজিত করে তুলতে পারে। এছাড়া, প্যান্ডেলে ঠাকুর দেখতে যাওয়ার হিড়িকে তাদের হাঁটার সময় বা খেলার রুটিনেও পরিবর্তন আসে।

 

করণীয়: যদি আপনার পোষ্য খুব সামাজিক না হয়, তবে অতিথিরা এলে তাকে আলাদা ঘরে রাখুন। তবে একেবারে একা বন্ধ করে রাখবেন না, এতে কুকুর আরও বেশি ভয় পেতে পারে। তার খেলার রুটিন যতটা সম্ভব বজায় রাখার চেষ্টা করুন। সকালে বা রাতে যখন ভিড় কম থাকে, তখন সারমেয়কে নিয়ে হাঁটতে বেরন।

 

৪। পরিচয়পত্র ও প্রাথমিক চিকিৎসা

উৎসবের ভিড়ে বা কোনও কারণে হঠাৎ ভয় পেয়ে চঞ্চল হয়ে উঠতে পারে কুকুর। এর ফলে অচেনা বাড়ির দরজা খোলা পেলে সেখানে ঢুকে পড়তে পারে পোষ্য। এই ভাবে কুকুর হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রায়শই শোনা যায়।

 

করণীয়: অবশ্যই পোষ্যের কলারের সঙ্গে একটি আইডি ট্যাগ লাগিয়ে রাখুন, যেখানে আপনার নাম ও ফোন নম্বর স্পষ্ট করে লেখা থাকবে। বাড়িতে একটি ফার্স্ট এইড কিট প্রস্তুত রাখুন, যাতে ছোটখাটো আঘাত বা অসুস্থতার প্রাথমিক চিকিৎসা আপনি নিজেই করতে পারেন।

 

দুর্গাপুজো সকলের জন্য আনন্দের উৎসব। আপনার একটু বাড়তি সতর্কতা এবং যত্ন আপনার পোষ্যকেও এই উৎসবের দিনগুলিতে সুরক্ষিত, শান্ত এবং হাসিখুশি রাখতে পারে।