মহিলাদের যৌনাঙ্গ থেকে হালকা গন্ধ আসা একেবারেই স্বাভাবিক এবং প্রত্যাশিত বিষয়। অধিকাংশ মহিলার শরীরে একটি প্রাকৃতিক গন্ধ থাকে, যদিও এটি ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে।
বয়সের সঙ্গে বা বিভিন্ন পরিস্থিতির প্রভাবে এই গন্ধের পরিবর্তন ঘটতে পারে। কিছু সাধারণ কারণ, যেগুলির জন্য সাময়িকভাবে যৌনাঙ্গের গন্ধ পরিবর্তিত হতে পারে, তা হল—
ঘাম
যৌন কার্যকলাপ
মাসিক চক্র
মাসিক চলাকালীন সময়ে শুধু চক্রের প্রভাবেই নয়, বরং মাসিকের বিভিন্ন পর্যায়ে যৌনাঙ্গের গন্ধ কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে।
অনেক নারী যৌনাঙ্গের গন্ধ নিয়ে ভুল ধারণা এবং অযথা দুশ্চিন্তায় ভোগেন। অথচ স্বাভাবিক গন্ধ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই, আর সামান্য পরিবর্তন সাধারণত নিজে থেকেই সেরে যায়। বরং অযথা কোনও ওষুধ বা চিকিৎসা শুরু করলে উল্টো সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে, যেখানে আদতে কোনও সমস্যা ছিলই না।
তবে যদি যৌনাঙ্গ থেকে তীব্র এবং অস্বস্তিকর গন্ধ বার হতে থাকে এবং তা কয়েক দিন ধরে স্থায়ী হয়, তবে এটি কোনোওস্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
যৌনাঙ্গ থেকে অস্বাভাবিক গন্ধের কিছু সাধারণ কারণ হল—
ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস: ব্যাকটেরিয়ার অতিবৃদ্ধির কারণে হওয়া এক ধরনের সংক্রমণ
ট্রাইকোমোনিয়াসিস: পরজীবী দ্বারা সৃষ্ট যৌনবাহিত সংক্রমণ
ট্যাম্পন দীর্ঘ সময় ধরে ভিতরে রাখা
অপর্যাপ্ত পরিচ্ছন্নতা
ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস এবং ট্রাইকোমোনিয়াসিস-এ সাধারণত মাছের মতো বা কেমিক্যালের মতো গন্ধ হয়, আর অনেক ক্ষণ ধরে রাখা ট্যাম্পন থেকে পচা গন্ধ ছড়াতে পারে।
যৌনাঙ্গের গন্ধের প্রতিকার ও চিকিৎসা
যৌনাঙ্গের গন্ধ নিয়ে যদি উদ্বেগ থাকে, তবে সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বার করে তার সমাধান করা প্রয়োজন। ভাল স্বাস্থ্যবিধি মানা এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
নিয়মিত পরিষ্কার রাখা
গরম জল দিয়ে যৌনাঙ্গ পরিষ্কার করাই যথেষ্ট। বাজারের দামী পণ্য ব্যবহার করার দরকার নেই—বিজ্ঞাপনের প্রলোভনে পড়বেন না। যৌনাঙ্গ স্বাভাবিকভাবে অম্লীয় (acidic), যা খারাপ ব্যাকটেরিয়া নিজেই ধ্বংস করে। বরং অনেক সাবান ব্যবহার করলে উল্টো পরিবেশ বদলে গিয়ে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটতে পারে।
সুগন্ধি সাবান এবং ডিওডোরেন্ট ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। বাইরের অংশ পরিষ্কার করতে চাইলে হালকা এবং কোমল সাবান ব্যবহার করুন, যা pH স্তর পরিবর্তন করবে না।
ঢিলেঢালা পোশাক এবং সুতির অন্তর্বাস পরুন
থং বা লেস খুব ভাল বিকল্প নয়। বিশেষ করে শোওয়ার সময় কী পরছেন সে ব্যাপারে যত্নবান হোন। সুতির সাদামাটা অন্তর্বাস বা একেবারেই অন্তর্বাস ছাড়া ঘুমনো উপকারী হতে পারে। টাইট অন্তর্বাস, প্যান্টিহোজ বা গার্ডল এড়িয়ে চলুন।
স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন
অনেক সময় ‘যৌনাঙ্গ থেকে গন্ধ’ আসলে যৌনাঙ্গ থেকে আসে না। অতিরিক্ত ওজনের কারণে উরুর ভিতরের অংশে অতিরিক্ত মেদ জমে, যা ব্যাকটেরিয়ার জন্মের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে।
ট্যাম্পন বা মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করুন
স্যানিটারি ন্যাপকিন থেকে সাধারণত বেশি গন্ধ হতে পারে। তাই চাইলে ট্যাম্পন বা মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করতে পারেন। তবে এগুলো নিয়মিত সময় মতো পরিবর্তন করা জরুরি।
কনডম ব্যবহার করুন এবং মিলনের পর প্রস্রাব করুন
বীর্য অনেক সময় যৌনাঙ্গে জ্বালা বা গন্ধের কারণ হতে পারে। যৌনমিলনের পর প্রস্রাব করাই যথেষ্ট। এতে বাইরের পদার্থ সহজেই বার হয়ে যায়।
প্রোবায়োটিক নেওয়ার চেষ্টা করুন
কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, নির্দিষ্ট ওরাল প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে। যদি ঘন ঘন সংক্রমণের সমস্যা হয়, তবে প্রোবায়োটিক বা বিকল্প চিকিৎসা নিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করুন।
ডুচ করবেন না
ডুচ মানে যৌনাঙ্গের ভিতরের অংশ জল বা অন্য তরল দিয়ে ধোয়া। এটি এখনও অনেকেই করে থাকেন। ডুচ করার ফলে সংক্রমণ বাড়তে পারে। আগে থেকেই যদি সংক্রমণ থাকে, তবে ডুচ করার মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া জরায়ু, ফলোপিয়ান টিউব বা ডিম্বাশয়ে ছড়িয়ে যেতে পারে।
কখন চিকিৎসককে দেখানো প্রয়োজন?
যৌনাঙ্গ থেকে অস্বাভাবিক গন্ধের পাশাপাশি নিচের উপসর্গগুলো দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে—
চুলকানি
জ্বালা
স্রাব (অস্বাভাবিক)
অস্বস্তি বা ব্যথা
এছাড়া যদি তীব্র মাছের মতো গন্ধ হয়, তবে এটি ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস (সংক্রমণ) বা ট্রাইকোমোনিয়াসিস (পরজীবী দ্বারা সৃষ্ট যৌনবাহিত রোগ) হতে পারে। এ ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসক দেখিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা নিতে হবে।
