আগে প্রেম মানেই ছিল দু’জন মানুষের ব্যক্তিগত অনুভূতির গল্প। কারও সঙ্গে কথা বলা, ধীরে ধীরে ভাল লাগা তৈরি হওয়া-এই সবকিছুই হতো নিজের মতো করে। কিন্তু এখন সময় বদলেছে। আজকাল প্রেমের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে বন্ধুদের মতামত, গ্রুপ চ্যাট আর সোশ্যাল মিডিয়া। এই নতুন প্রবণতাকেই বলা হচ্ছে ‘ফ্রেন্ডফ্লুয়েন্সিং’ অর্থাৎ বন্ধুরা কীভাবে আপনার প্রেমের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করছে তা-ই হল এই হচ্ছে ‘ফ্রেন্ডফ্লুয়েন্সিং’।

বর্তমানে কাউকে পছন্দ হলে অনেকেই প্রথমে বন্ধুকে জানায়। সেই মানুষটির ছবি দেখানো হয়, চ্যাটের স্ক্রিনশট পাঠানো হয়, এমনকি ডেটিং অ্যাপে কী রিপ্লাই দেবেন তাও বন্ধুদের জিজ্ঞেস করতে দেখা যায়। অনেক সময় বন্ধুরা বলে দেয়, “এই মানুষটা ঠিক নয়” বা “এই সম্পর্কে সমস্যা হতে পারে।” ধীরে ধীরে নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গায় বন্ধুর মতামত বড় হয়ে ওঠে।

এক্ষেত্রে কিছু ভাল দিক অবশ্যই আছে। বন্ধুরা অনেক সময় আমাদের ভাল চায় এবং বাস্তব চোখে পরিস্থিতি দেখে। প্রেমে পড়লে আমরা অনেক সময় কিছু ভুল দেখেও না দেখার ভান করি। তখন বন্ধুরাই সতর্ক করে দেয়। কারও আচরণে সমস্যা থাকলে, সে যদি সত্যিই আপনাকে গুরুত্ব না দেয়, বন্ধুরা সেটা বুঝিয়ে দিতে পারে। এতে অনেকেই মানসিক কষ্ট বা ভুল সম্পর্ক থেকে বাঁচে।

কিন্তু সমস্যা শুরু হয় তখনই, যখন বন্ধুর কথা নিজের অনুভূতির থেকেও বেশি গুরুত্ব পেতে শুরু করে। আপনি কাউকে ভালবাসছেন, তার সঙ্গে কথা বলে ভাল লাগছে, অথচ বন্ধুরা পছন্দ করছে না, তখন আপনি নিজেই দ্বিধায় পড়ে যান। মনে হতে থাকে, “আমি কি ভুল করছি?” এভাবে নিজের মনকে সন্দেহ করতে করতে অনেক সুন্দর সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

আরেকটা বড় সমস্যা হল অতিরিক্ত বিশ্লেষণ। একজন বন্ধু এক কথা বলে, আরেকজন আরেক কথা। এত মতামতের ভিড়ে নিজের মনের কথা শোনা কঠিন হয়ে যায়। প্রেম তখন আর স্বাভাবিক থাকে না, বরং চাপের বিষয় হয়ে ওঠে। প্রতিটি ছোট সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভয় কাজ করে যে বন্ধুরা কী বলবে?

তাহলে কী করা উচিত? বন্ধুদের পরামর্শ নিন, কারণ তারা আপনার ভাল চায়। কিন্তু সব সিদ্ধান্ত তাদের হাতে তুলে দেবেন না। সম্পর্কটা আপনার, অনুভূতিগুলোও আপনার। শেষ কথা বলার অধিকার আপনারই থাকা উচিত। মনে রাখবে।