আজকাল ওয়েবডেস্ক: সম্পত্তি চেয়েও বড় ‘আপনজন’! সেই আপনজন যে পরিবারের কেউ হবেন এমনও নয়। কখনও কখনও আপাতদৃষ্টিতে বহিরাগত একজন মানুষও হয়ে উঠতে পারেন সন্তানতুল্য। তেমনই একটি ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে বিশ্বজুড়ে। বাগানবাড়ির প্রাক্তন মালিকে দত্তক নিতে চাইছেন এক নিঃসন্তান ধনকুবের, দিয়ে যেতে চাইছেন কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি।
শুনতে সিনেমার মতো লাগলেও ঘটনাটি কিন্তু বাস্তব। যে ধনকুবের এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি প্যারিসের বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন হাউজ হারমেস-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য নিকোলাস পুয়েচ। পুয়েচ এক সময় প্রতিষ্ঠানের বড় অংশীদার ছিলেন। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ভারতীয় মুদ্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। তাঁর ইচ্ছেয় সেই সম্পত্তির ভাগীদার হতে চলেছেন এক সময়ের পরিচারক!
কে সেই ভাগ্যবান? যাঁকে পুত্রবৎ স্নেহে সব কিছু ডি যেতে চান নিকোলাস? নাম নেই। পরিচয়ও গোপন। শুধু জানা যাচ্ছে, তিনি ছিলেন তাঁর বাড়ির পরিচারক, মালি এবং বাড়ির হ্যান্ডিম্যান। এখন সেই মানুষটিকেই দত্তক নিতে চাইছেন হেরমেস সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী নিকোলাস পুয়েচ। শুধু তাই নয়, বিপুল সম্পত্তিও তুলে দিতে চাইছেন তাঁর হাতেই।
আরও পড়ুন: শুক্রাণু দান করে কত টাকা আয় হয়? ভারতে বীর্য দাতা হতে গেলে কোন কোন নিয়ম জানতে হবে?
নিকোলাস এখন আর ফ্রান্সে থাকেন না। থাকেন সুইজারল্যান্ডে। সেখানেই শহুরে কোলাহল থেকে দূরে স্নিগ্ধ পরিবেশে জীবন যাপন পুয়েচের। নিকোলাস বিয়ে করেননি, নেই কোনও সন্তানও। পরিবারের অন্যদের সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে বহু বছর আগে। ফলে আক্ষরিক অর্থেই তিনি একা। এই অবস্থায় দীর্ঘদিনের প্রাক্তন মালি ও সহকারীই হয়ে ওঠেন তাঁর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠজন। সেই মানুষটিকেই আইনি দত্তক নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন পুয়েচ। তাঁকেই নিজের সন্তান হিসাবে পরিচয় দিতে চান তিনি।
আরও পড়ুন: ৮৫ বছর বয়সে মাধ্যমিকে বসেও ফের অকৃতকার্য! ইনিই পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক স্কুলছাত্র
তবে গোটা প্রক্রিয়া মোটেই সহজ নয়। আইনি প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়েছে এক নতুন বিতর্ক। তাঁরই তৈরি সংস্থা এখন দাবি করছে, নিকোলাসের এই সম্পত্তি ব্যক্তিগত নয়, এই সম্পত্তি জনহিতকর কাজে ব্যবহার হবে। পুয়েচ যদি দত্তক পুত্রের নামে সম্পত্তি হস্তান্তর করেন, তা হলে সেই তহবিল আইনগত ভাবে প্রশ্নের মুখে পড়বে। তাই ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে আইনি লড়াই।

কিন্তু নিজের সিদ্ধান্ত অনড় নিকোলাস। তাঁর আইনজীবীরা জানিয়েছেন, “একজন নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ তাঁর শেষ ইচ্ছা প্রকাশ করছেন। তাঁর বিশ্বাসের মানুষের হাতে সবকিছু তুলে দিতে চান। এতে অন্যায় কোথায়?” আর পুয়েচ নিজেও জানিয়েছেন, পরিবার নয়, বিশ্বস্ততাই তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় গুণ।
হেরমেস পরিবার এখনও এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। তবে অভ্যন্তরীণ সূত্রের খবর, এই পদক্ষেপে তারা যথেষ্ট অস্বস্তিতে। পৃথিবীর সবচেয়ে বিত্তশালী পরিবারগুলির একটি এই পরিবার। উত্তরাধিকারের রীতি ভেঙে এমন এক অচেনা ব্যক্তির হাতে চলে যেতে চলেছে পারিবারিক সাম্রাজ্যের বিশাল অংশ। তাতেই অখুশি পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।
সবমিলিয়ে পুয়েচের এই সিদ্ধান্ত শেষপর্যন্ত আইনসিদ্ধ হবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। সুইস আদালতের রায়ের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। তবে সামাজিকমাধ্যমে ইতিমধ্যেই আলোড়ন পড়ে গিয়েছে গোটা ঘটনায়।