সুস্বাস্থ্যের জন্য রোজ একটা করে ডিম খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদেরা। অনেকেই ব্রেকফাস্টে ডিম সেদ্ধ কিংবা অমলেট খান। তবে বয়স খানিকটা বাড়লে ডিম খাওয়া উচিত কিনা তা নিয়ে অনেকের মনে থাকে সংশয়। বিশেষ করে কোলেস্টেরল এবং হার্টের সমস্যায় ডিম খাওয়া নিয়ে রয়েছে অনেক মতবিরোধ। একপক্ষের মত, হৃদরোগে ডিম খাওয়া উচিত নয়। আবার ডিম আসলে ভাল রাখে হৃদযন্ত্র, এমন কথাও শোনা যায়। কিন্তু সত্যি কি ডিম খেলে কোলেস্টেরল বেড়ে যায়? নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে চমকে দেওয়া তথ্য।
ডিম একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন। হিসেব অনুযায়ী, একটি ডিম থেকে প্রায় ৬ গ্রাম প্রোটিন মেলে। তাই দেহে এই ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি মেটানোর কাজে ডিমের জুড়ি মেলা ভার। এই সস্তায় পুষ্টিকর খাবার নি:সন্দেহে ভিটামিন এ, ডি, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামের মতো অত্যন্ত উপকারী কিছু ভিটামিন ও খনিজের ভাণ্ডার।

আসলে ডিমের কুসুমে প্রায় ১৮৬ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে। যেখানে সারাদিনে একজন সুস্থ মানুষের মোট কোলেস্টেরল গ্রহণ করার স্বাভাবিক মাত্রা ২০০ মিলিগ্রাম, সেখানে একটা ডিম খেলেই এতটা কোলেস্টেরল শরীরে পৌঁছে যায়। তাই যাদের শরীরে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি কিংবা হার্টের অসুখ রয়েছে, তাঁরা ডিম খাওয়ার ব্যাপারে বিশেষত ডিমের কুসুম খাওয়া নিয়ে খানিকটা সচেতন হয়ে যান। দীর্ঘদিন ধরে এও মনে করা হতো, ডিম খেলে কোলেস্টেরল বেড়ে যায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। কিন্তু নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। বরং সঠিকভাবে ডিম খাওয়া ফলে এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরল কমতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ার সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দিনে এক থেকে দু'টি ডিম খেলে এবং সারাদিনের খাদ্যতালিকায় স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম থাকলে, এলডিএল কোলেস্টেরল উল্লেখযোগ্যভাবে কমে। এই গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, ডিমের কোলেস্টেরল নয়, বরং অন্যান্য খাবারের স্যাচুরেটেড ফ্যাটই রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল বাড়ানোর জন্য দায়ী থাকে।
ডিমের কুসুম কোলেস্টেরলের উপর সামান্য প্রভাব ফেলে। তাই সীমিত পরিমাণে ডিম খেলে কোলেস্টেরল বাড়ার আশঙ্কা তেমন থাকে না। বরং ডিমের কুসুম ভিটামিন এ, ডি, ই, এবং বি১২-এর পুষ্টিতে ভরপুর। একইসঙ্গে এতে রয়েছে প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। যা সার্বিকভাবে শরীরে পুষ্টি জোগায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখে। যদিও কারও কারও ক্ষেত্রে ডিম খেলে কোলেস্টেরল বাড়ার আশঙ্কা থাকতে পারে। তবে তা সকলের জন্য প্রযোজ্য নয়।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের তিন ধরনের খাদ্যতালিকায় ভাগ করা হয়। একপক্ষকে উচ্চ কোলেস্টেরল কিন্তু কম স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত খাবার অর্থাৎ দিনে (২টি ডিম), আরেকপক্ষকে কম কোলেস্টেরল কিন্তু বেশি স্যাচুরেটেড ফ্যাট (ডিম ছাড়া) এবং তৃতীয় পক্ষকে উচ্চ কোলেস্টেরল ও বেশি স্যাচুরেটেড ফ্যাট (সপ্তাহে ১টি ডিম) দেওয়া হয়। ফলাফলে দেখা যায়, যারা কম স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত ডায়েটে নিয়মিত ডিম খেয়েছেন তাঁদের এলডিএল সবচেয়ে বেশি কমেছে। তাই গবেষকদের পরামর্শ, প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুটি ডিম খাওয়া যেতে পারে, সেক্ষেত্রে খাদ্যতালিকায় স্যাচুরেটেড ফ্যাট যেন কম থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
