অনেকেরই মুখ বা হাত-পায়ের তুলনায় কনুইয়ের চামড়া বেশ কালচে। এতে শুধু অস্বস্তি বাড়ে না, কোনও বড় রোগ লুকিয়ে আছে কিনা তা নিয়ে মনে প্রশ্নও জাগে। চিকিৎসকদের মতে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কালচে কনুই কোনও গুরুতর সমস্যার লক্ষণ নয়। তবে কখনও কখনও এটি শারীরিক সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে।

কনুইয়ের ত্বক স্বাভাবিকভাবে একটু মোটা ও শুষ্ক হয়। এই অংশে তেলগ্রন্থি কম থাকায় চামড়া সহজেই রুক্ষ হয়ে যায়। নিয়মিত কনুই ভাঁজ করা, টেবিল বা মেঝেতে ভর দিয়ে বসা, বারবার ঘর্ষণ—এসব কারণে মৃত চামড়া জমে গিয়ে রং গাঢ় দেখাতে পারে। আবার অনেকেই কনুইতে ঠিকমতো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেন না, ফলে শুষ্কতা আরও বেড়ে যায়।

সূর্যের অতিরিক্ত আলোও কনুই কালচে হওয়ার একটি বড় কারণ। হাতের এই অংশ প্রায়ই রোদে থাকে, কিন্তু সেখানে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা হয় না। এর ফলে ত্বকে মেলানিন বেশি তৈরি হয় এবং রং ধীরে ধীরে গাঢ় হয়ে যায়। এছাড়া আগের কোনও চর্মরোগ, যেমন একজিমা বা অ্যালার্জির পর ত্বক সেরে উঠলেও সেই জায়গা কালচে থেকে যেতে পারে।

তবে কিছু ক্ষেত্রে কালচে কনুই শরীরের ভেতরের সমস্যার সংকেত হতে পারে। যদি কনুইয়ের ত্বক হঠাৎ খুব বেশি কালচে, মোটা ও অদ্ভুত দেখতে হয়ে যায়, তাহলে তা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বা প্রিডায়াবেটিসের লক্ষণ হতে পারে। এই অবস্থাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় আকানথোসিস নিগ্রিকান্স। এর সঙ্গে যদি হঠাৎ ওজন বেড়ে যাওয়া, অতিরিক্ত ক্লান্তি বা ঘাড় ও বগলের ত্বকও কালচে হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ থাকে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

এছাড়া ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতিতেও কনুই ও হাঁটুর চামড়া কালচে হতে পারে। এর সঙ্গে হাত-পায়ে ঝিনঝিনে ভাব, দুর্বলতা বা মাথা ঘোরা থাকলে রক্ত পরীক্ষা প্রয়োজন।

সাধারণ যত্নে অনেক সময় এই সমস্যা কমে যায়। নিয়মিত ভাল ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার, সপ্তাহে ১–২ দিন হালকা এক্সফোলিয়েশন, রোদে বেরোলে কনুইতে সানস্ক্রিন লাগানো-এসব অভ্যাস সুফল দেয়। তবে ঘরোয়া টোটকার নামে অতিরিক্ত ঘষাঘষি বা কেমিক্যাল ব্যবহার করলে উল্টো ক্ষতি হতে পারে।

কালচে কনুই বেশিরভাগ সময়ই সাধারণ ত্বকের সমস্যা বটে, কিন্তু যদি রং হঠাৎ বদলায় বা অন্য শারীরিক উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।