পা আমাদের শরীরের ভিত্তি। রোজকার হাঁটাচলা, কাজ বা চলাফেরা সবকিছুর আসল ভর। তাই পায়ের যত্নে অবহেলাকরলেই সার্বিক শরীরের ওপর প্রভাব পড়ে। আসলে এমন কিছু সাধারণ কাজ আছে, যা আমরা সারাদিন অজান্তে বা অভ্যাস হিসাবে করে থাকি। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে সেগুলো পায়ের হাড়, জয়েন্ট বা ত্বককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক সময়ে সতর্ক না হলে পায়ে ব্যথা, ফোলা, ত্বকের সমস্যা এমনকী চলাফেরায় ব্যাঘাতও হতে পারে।
কোন অভ্যাসগুলো পায়ের স্বাস্থ্য নষ্ট করে
১. সংকুচিত বা বাজে-ফিটিং জুতা পরাঃ পায়ের আঙুল ও গঠন স্বাভাবিকভাবে চাপ সহ্য করতে না পেরে হাড় ও নরম টিস্যুতে প্রভাব ফেলে। ফলে পায়ের আকৃতি বিকৃতির ঝুঁকি বাড়ে।
২. নিয়মিত হাই-হিল জুতা ব্যবহারঃ পায়ের সামনের অংশ ও গোড়ালিতে অতিরিক্ত চাপ পড়ায় হাঁটা, ভারসাম্য, পা ও পিঠ-সবকিছুই প্রভাবিত হয়।
৩. কঠিন মেঝেতে খালি পায়ে ঘোরাফেরাঃ বাড়ির টাইল, কংক্রিট বা শক্ত মেঝেতে খালি পায়ে হাঁটার ফলে পায়ের গোড়ালি ও আঙুলে প্রাকৃতিক শক-আবজর্বশন হয় না। ফলে হিল পেইন হতে থাকে।
৪. দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়ানো বা কাজ করাঃ একটানা দাঁড়িয়ে কাজ করলে পায়ে রক্ত সঞ্চালন ঠিকমতো হয় না, ফলে ফোলা, ক্লান্তি ও ব্যথা দেখা দিতে পারে।
৫. পায়ের ত্বক ও গোড়ালি শুকনো বা ফাটলঃ নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার না করলে ত্বক ফেটে যায়, গোড়ালিতে ক্ষুদ্র স্ক্র্যাচ বা ফাটা হতে পারে, যা সংক্রমণের পথ খুলে দিতে পারে।
৬. নখ ভুলভাবে কাটাঃ এতে ইনগ্রোথ নখ হওয়ার ঝুঁকি থাকে, যা ব্যথা ও সংক্রমণ ঘটায়।
৭. একই জুতা প্রতিদিন পরাঃ জুতা শুকানোর সুযোগ না পেলে ঘাম ও আর্দ্রতা জমে ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস বেড়ে যায়, দুর্গন্ধ, সংক্রমণ বা চুলকানি হতে পারে।
৮. পা-পরিচর্যার প্রতি অবহেলা (নিয়মিত পা ধোয়া, শুকানো, পরিস্কার না রাখা)ঃ পায়ের মধ্যে ঘাম আটকে গেলে ফাঙ্গাল ইনফেকশন বা ত্বকের সমস্যা সহজেই হয়।
৯. পায়ে ব্যথা বা অস্বস্তি উপেক্ষা করাঃ যদি পায়ের ব্যথা, টান বা কোনও অস্বস্তি অবহেলা করা হয়, তাহলে সমস্যা দীর্ঘমেয়াদে গুরুতর হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। যেমন জয়েন্ট বা টেন্ডন-সংক্রান্ত জটিলতা।
এই ভুলগুলো এড়াতে এবং পায়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে বিশেষজ্ঞরা বেশ কয়েকটি নিয়ম মেনে চলার পরামর্শ দেন। যেমন-
*আরামদায়ক, সঠিক মাপের এবং পর্যাপ্ত কুশনিং ও আঙুলের জায়গা সহ জুতা নির্বাচন করুন। যাতে পায়ের চাপ সঠিকভাবে ভাগাভাগি হয়।
*প্রতিদিন পা পরিষ্কার করে ভালভাবে শুকিয়ে রাখুন। গোড়ালি ও আঙুলের মধ্যবর্তী অংশ বিশেষ যত্ন দিন।
*পায়ের ত্বকে নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন, যাতে ত্বক ফাটে বা শুষ্ক না হয়।
*নখ সোজা করে কেটে রাখুন। বাঁকা বা অত্যধিক নিচু কাটা থেকে বিরত থাকুন, এতে ইনগ্রোউন নখের ঝুঁকি কমে।
*যদি কাজ বা কাজের ধরন এমন হয় যাতে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তাহলে মাঝে মাঝে হাঁটুন বা পা নাড়াচাড়া করুন, রক্ত সঞ্চালন ভাল রাখুন।
*জুতা পাল্টানোর অভ্যাস রাখুন। প্রতিদিন একই জুতা না পরে, জুতো শুকানোর সুযোগ দিন।
