বর্ষার ভেজা হাওয়াতেই এবার একটু একটু করে ছড়িয়ে পড়ছে পুজোর গন্ধ। আর তো মাত্র মাস দুয়েক। ঢাকে কাঠি পড়ার আগে কেনাকাটা শেষ করতে হবে যে! বৃষ্টি কি আর সে প্ল্যানে জল ঢালতে পারে!
বাঙালির পুজোর সাজের লিস্ট মানে আজও শাড়িরই পাল্লা ভারী। কিন্তু শুধু তা হলেই তো আর হল না! সঙ্গে মনের মতো ব্লাউজও চাই। একালের ফ্যাশনে শাড়ি শুধু নয়, ব্লাউজও যে আলাদা করে চোখ টানে! রেডিমেড ব্লাউজ না হয় শেষ মুহূর্তেও কিনতে পারবেন কিন্তু পছন্দের শাড়ির সঙ্গে পারফেক্ট ম্যাচ, কিংবা ট্রেন্ডে চোখ রেখে ঠিক ঠিক মাপে ব্লাউজ চাইলে হাতে মাস দুয়েক রাখতে হবে বইকি! উৎসবের দিনগুলোয় ব্লাউজের কায়দায় নজর ঘোরাতে হলে আগেভাগে জানতেও হবে তার ফ্যাশনের হালহদিশ।
সাজের দুনিয়ায় চোখ রাখা যাক। এবছর উৎসবের মরসুমে ব্লাউজের সর্বভারতীয় ট্রেন্ড যা বলছে:
• নেকলাইনের কারিকুরিতেই মন মজেছে ফ্যাশনিস্তাদের। প্লাঞ্জিং ভি, সুইটহার্ট শেপ, হাই কলারের সঙ্গে এমবেলিশমেন্ট, পিঠে এমব্রয়ডারি বা কি হোল কাটআউট তাই শাসন করছে ব্লাউজের রাজপাট।
আরও পড়ুনঃ সাদা মাথা কালো হবে! অল্প বয়সেই চুলে পাক ধরা আটকাতে সময় থাকতে মেনে চলুন তিনটি ঘরোয়া পদ্ধতি
• সিল্কের শাড়ির সঙ্গে এবারেও জুটি বেঁধেছে গোলগলা, কনুই ছোঁয়া সাবেক ব্লাউজ। তবে নতুনত্বের ছোঁয়া দিতে তাতে থাকছে টেম্পল মোটিফ, কনট্রাস্ট পাইপিং বা মিরর ওয়ার্ক। ব্রোকেড, র সিল্ক বা ভেলভেটের ব্লাউজ জরির পাড়, ছিমছাম এমব্রয়ডারির মিশেলে হয়ে উঠছে রাজকীয়।
• সাবেক ফুলহাতা ব্লাউজও এখনও রয়েছে ফ্যাশনে। তাতে আধুনিকতার মিশেল এনে দিতে ডিজাইনারদের পছন্দে নেটের হাতা বা লেস কিংবা সিক্যুইনের ডিটেল কাজ। বাড়তি নজর কাড়তে ভরসা হয়ে উঠতেই পারে কেপ স্টাইল বা জ্যাকেট ব্লাউজ।

• ইদানীং বছরভরের গরমটাই সাজের দুনিয়ায় সবচেয়ে বড় ভিলেন। তাকে বাগে আনতে ব্লাউজের ফ্যাশনেও তাই হাল্কা ফ্যাব্রিকের রমরমা। অরগ্যাঞ্জা, সিল্ক ব্লেন্ড, সুতির আরামদায়ক ব্লাউজে তাই দিব্যি জায়গা করে নিচ্ছে হ্যান্ড এমব্রয়ডারি, সিক্যুইনের কাজ কিংবা থ্রিডি ফুলের নকশা। শিফন শাড়ির সঙ্গে এমন একটা জমকালো ব্লাউজেই কিন্তু কেল্লাফতে!

• মিক্স অ্যান্ড ম্যাচের ট্রেন্ড বেশ কয়েক বছর ধরেই ঢুকে পড়েছিল ব্লাউজের ফ্যাশনে। এবছর তা জাঁকিয়ে বসেছে আরও। একেবারে কনট্রাস্ট রঙের ব্লাউজ কিংবা বোল্ড প্রিন্ট বা ডিজাইনার নেকলাইন ব্লাউজের সঙ্গে একরঙা শাড়িতেই হয়ে উঠতে পারেন ভিড়ের মধ্যমণি। শুধু তাই নয়, একই ব্লাউজ ঘুরিয়েফিরিয়ে বা রিস্টাইল করে একাধিক শাড়ি বা বিভিন্ন লুকের সঙ্গে পরে ফেলাটা পরিবেশ-বান্ধবও বটে!

পুজোর ফ্যাশন ঘিরে বাঙালির চোখ বরাবরই থাকে কলকাতার দিকে। ফ্যাশন দুনিয়া যে পথেই হাঁটুক, শাড়ি-ব্লাউজ, গয়নার সাজে এ শহর তার নিজস্ব সিগনেচার রেখে যায় প্রতিবারই। এ শহরে ডিজাইনার ব্লাউজের রাজত্বে দীর্ঘদিনের পরিচিত নাম ‘অরণ্য’। তার কর্ণধার চন্দনী বসুর কথায়, “শুধু কলকাতা নয়, আসলে যে কোনও জায়গাতেই দেখেছি, বেশিরভাগ মানুষ আসলে ফ্যাশন নয়, স্টাইলে বিশ্বাসী। খুব কমবয়সী না হলে ট্রেন্ডে গা ভাসান না। ব্লাউজের ক্ষেত্রেও সেটা সমানভাবে সত্যি। একটা নির্দিষ্ট শাড়ির সঙ্গে একটা নির্দিষ্ট ধরনের ব্লাউজের জুটি অনেক সময়েই মানুষ পছন্দ করেছেন। আমাদের ব্র্যান্ডে যেমন সাদাকালো ব্লক প্রিন্ট শাড়ি বেশ জনপ্রিয়। তার সঙ্গে কালো বা কনট্রাস্ট লাল নয়, আমাদের ব্লাউজে বরং একই ধরনের সাদাকালো ব্লক প্রিন্টের স্টাইল পছন্দ করেছেন মানুষ। সেই স্টাইলটা এবার আবার ফিরে আসতে দেখছি।”

এবছর আর কী বলছে কল্লোলিনীর ফ্যাশন স্টেটমেন্ট?
চন্দনীর মতে, “কিছুদিন ধরেই ঢিলেঢালা ব্লাউজ পরার একটা চল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এবছর সেটা আরও বেশি। লুজ ফিট বা অ্যান্টি ফিট ব্লাউজ এবং সাবেক ব্লাউজের বদলে ক্রপ টপ বা শার্ট দিয়ে শাড়ি একটু অন্য রকম ড্রেপিংয়ে পরার স্টাইল বেশি দেখা যাবে এবার। তবে এই স্টাইলে ঝোঁকটা অবশ্যই কমবয়সীদের। ক্লাসিক ডিজাইনের মধ্যে বোটনেক বা এয়ারহোস্টেস গলার চাহিদা বরাবরই বেশি থাকে। স্লিভলেসের ক্ষেত্রে হল্টার নেক খুব জনপ্রিয়, তবে একেবারে পিঠখোলা নয়। গোলগলা, ছিমছাম সরু স্ট্র্যাপের স্লিভলেস ব্লাউজ সব সময়েই ট্রেন্ডিং। এবছরও তার ব্যতিক্রম নয়। ট্র্যাডিশনাল ডিজাইনের ব্লাউজে বরাবরই কনুই অবধি হাতা, গোল গলা, গোল পিঠের চল। যাঁরা সাবেক ধাঁচে শাড়ি পরেন, তাঁরা সাধারণত এগুলোই পরে এসেছেন। এবারেও পরবেন।”
