আজকাল ওয়েবডেস্ক: স্টাইল হোক বা সুবিধা, নিত্যদিনের সঙ্গী ব্যাগটিকে অনেকেই ঝুলিয়ে নেন এক কাঁধে। অফিসযাত্রী থেকে কলেজ পড়ুয়া, এই দৃশ্য অতি পরিচিত। কিন্তু ফ্যাশনের এই চেনা ছবিই যে নিঃশব্দে আপনার শরীরে ডেকে আনছে একাধিক সমস্যা, সে খবর কি রাখেন? চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, দিনের পর দিন এক কাঁধে ব্যাগ নেওয়ার অভ্যাস ঘাড়, কাঁধ এবং শিরদাঁড়ার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এর ফলে ভবিষ্যতে গুরুতর শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।

 

প্রথমেই যে সমস্যাটি দেখা দেয়, তা হল শরীরের ভারসাম্যের অভাব। যখন আপনি কেউ কাঁধে ভারী ব্যাগ ঝোলান, তখন শরীরের ওই দিকটি স্বাভাবিকভাবেই ভারে ঝুঁকে পড়ে। ফলে ভারসাম্য বজায় রাখতে উল্টো দিকের পেশিগুলিকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। ফলস্বরূপ, একদিকের পেশি শক্ত এবং অন্যদিকের পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিনের এই অভ্যাসে কাঁধের স্বাভাবিক অবস্থান বা ‘পোশ্চার’ পাল্টে যায়। একটি কাঁধ অন্যটির থেকে উঁচু বা নিচু হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়, যা থেকে ‘স্লাউচিং’ বা ঝুঁকে হাঁটার প্রবণতা তৈরি হয়।

আরও পড়ুন: বাতের ব্যথা সারাতে বাঘের মূত্র পান করছে চিনারা! প্রতিবেশী দেশের কাণ্ডে ছিছিক্কার বিশ্বজুড়ে

এই অভ্যাসের সরাসরি প্রভাব পড়ে শিরদাঁড়ার উপর। শরীরের ভারকেন্দ্র (সেন্টার অফ গ্র্যাভিটি) ঠিক রাখতে শিরদাঁড়া নিজে থেকেই একদিকে বেঁকে যায়। এর ফলে শিরদাঁড়ার স্বাভাবিক ‘এস’ আকৃতির গঠন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পিঠ ও কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হতে পারে। চিকিৎসা পরিভাষায় একে ‘স্কোলিওসিস’ বা শিরদাঁড়া বেঁকে যাওয়ার প্রাথমিক পর্যায় বলা যেতে পারে। এই অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে স্পাইনাল ডিস্কের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

শুধু তাই নয়, এক কাঁধে ব্যাগ নেওয়ার অভ্যাস ঘাড় এবং কাঁধের সংযোগস্থলের ‘ট্র্যাপিজিয়াস’ পেশির উপর লাগাতার চাপ সৃষ্টি করে। এই চাপের ফলে কাঁধ ও ঘাড়ে ব্যথা, আড়ষ্টতা এবং ‘মাসল স্প্যাজম’ হওয়া খুবই সাধারণ ঘটনা। অনেক সময় এই চাপ থেকে কাঁধের সংযোগস্থলে থাকা স্নায়ু বা নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে হাতে ঝিঁ ঝি ধরা, অবশ হয়ে যাওয়া বা দুর্বলতার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ‘থোরাসিক আউটলেট সিনড্রোম’-এর মতো জটিল সমস্যার পিছনেও এই অভ্যাস অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে।

অনেকেই হয়তো জানেন না, আপনার নিত্যদিনের মাইগ্রেন বা মাথা যন্ত্রণার কারণও হতে পারে এই এক কাঁধে ব্যাগ নেওয়ার অভ্যাস। ঘাড়ের পেশিগুলি শক্ত হয়ে গেলে তা মাথার পিছনের স্নায়ুগুলিতে চাপ সৃষ্টি করে, যা থেকে ‘সারভিকোজেনিক হেডেক’ বা ঘাড় থেকে সৃষ্ট মাথাব্যথা শুরু হয়।

কীভাবে বাঁচবেন?

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, প্রথমেই চেষ্টা করুন কাঁধে ঝোলানো ব্যাগের বদলে ব্যাকপ্যাক ব্যবহার করতে। এতে দুই কাঁধে সমানভাবে ভার বন্টিত হয়। যদি একান্তই এক কাঁধে ব্যাগ নিতে হয়, তবে কিছু নিয়ম মেনে চলুন। প্রথমত, ব্যাগের ওজন কমান। অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাদ দিন। দ্বিতীয়ত, কিছুক্ষণ অন্তর এক কাঁধ থেকে অন্য কাঁধে ব্যাগ বদল করুন। তৃতীয়ত, চওড়া স্ট্র্যাপযুক্ত ব্যাগ ব্যবহার করুন, যা কাঁধের উপর চাপ কমাতে সাহায্য করবে। এবং সবশেষে, নিয়মিত ঘাড় ও কাঁধের ব্যায়াম করুন যাতে পেশিগুলি সচল ও শক্তিশালী থাকে। সামান্য সচেতনতাই আপনাকে ভবিষ্যতের বড় সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।