রাত জেগে পড়াশোনা হোক কিংবা একটানা কাজের ক্লান্তি দূর করতে অথবা শরীরে তৎক্ষণাৎ এনার্জি পেতে, আজকাল অনেকেই এনার্জি ড্রিঙ্কে চুমুক দেন। কিন্তু ক্যানবন্দি এনার্জি ড্রিঙ্ক খাওয়া কি আদৌ ভাল? নাকি বাজারচলতি এই সব পানীয় উল্টে শরীরের বিপদ ডেকে আনে? বিশেষজ্ঞদের মতে, এনার্জি ড্রিঙ্ক স্বাস্থ্যের ভয়ঙ্কর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। 

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ৫০ বছরের একজন পুরোপুরি সুস্থ মানুষ নিয়মিত দিনে আটটি এনার্জি ড্রিঙ্ক খেতেন। তাঁর কোনও বিশেষ অসুস্থতা ছিল না, তিনি ধূমপান-মদ্যপানও করতেন না, এমনকী নিয়মিত ব্যায়াম করতেন। কিন্তু একদিন হঠাৎই তাঁর শরীরের বাঁ দিক অবশ হয়ে পড়ে যান এবং কথা বলতে, হাঁটতে ও হাত নাড়াতে সমস্যা হয়। চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখেন, স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। 

ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁর রক্তচাপ পাওয়া যায় ২৫৪/১৫০ এমএম/এইচজি। যা স্বাভাবিক মাত্রার প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি। এত উচ্চ রক্তচাপে যে কোনও বয়সের মানুষের স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। চিকিৎসার পরে তাঁর রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়, কিন্তু তাঁর শরীরের বাঁ দিকের অনুভূতি পুরোপুরি আর ফিরে আসেনি। তাঁর শরীরের স্থায়ী ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। পরে দেখা যায়, প্রতিদিন যে পরিমাণ এনার্জি ড্রিঙ্ক তিনি খেতেন, তাতে শরীরে বিপজ্জনক মাত্রায় ক্যাফেইন জমত। আসলে সাধারণভাবে একজন মানুষের দিনে ৪০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইনের বেশি খাওয়া উচিত নয়। কিন্তু ওই ব্যক্তি নিয়মিত তাঁর প্রায় তিনগুণ বেশি ক্যাফেইন খেতেন।  শুধু ক্যাফেইন নয়, এনার্জি ড্রিঙ্কে রয়েছে স্নায়ুকে উত্তেজিত করে এমন বিভিন্ন ধরনের 'স্টিমুল্যান্ট'। ফলে শরীরে আরও জটিলতা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত এনার্জি ড্রিঙ্ক পান করলে রক্তচাপ দ্রুত বাড়ে, হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক হতে পারে, হার্টে চাপ বেড়ে অ্যারিথমিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া অত্যধিক উত্তেজনা, ঘুম কমে যাওয়া, দীর্ঘমেয়াদে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। সঙ্গে মাথা ব্যথা, উদ্বেগ, অস্থিরতাও বাড়তে পারে। চিকিৎসকদের মতে, এনার্জি ড্রিঙ্কের ঝুঁকি শুধু বেশি বয়সি বা হৃদরোগীদের জন্য নয়, সম্পূর্ণ সুস্থ মানুষও হঠাৎ বড় শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। 

বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, ক্লান্তি দূর করতে এনার্জি ড্রিঙ্ক নয়, পর্যাপ্ত ঘুম, জল, ফল, সাধারণ কফি খেতে পারেন। আর একান্তই এনার্জি ড্রিঙ্ক খেতে ইচ্ছে হলে নিয়মিত না খাওয়াই শ্রেয়। উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগ থাকলে এই ধরনের পানীয় থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকুন। মনে রাখবেন, শরীরে শক্তি সঞ্চয়ের জন্য স্বাভাবিক উপায়ই সেরা। আলাদা করে বাড়তি বাজারচলতি প্যাকেটজাত দ্রব্যের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার প্রয়োজন নেই।