মিষ্টি ছাড়া অনেকেরই দিন কাটে না৷ রসগোল্লা, পেস্ট্রি কিংবা মিষ্টি জাতীয় যাবতীয় খাবারের প্রতি থাকে আলাদাই আকর্ষণ। যা থেকে শরীরে ঢোকে চিনি। কিন্তু ডায়াবেটিস থেকে স্থূলতা সহ বিভিন্ন জটিল রোগ প্রতিরোধ করতে  চিনিকে যতটা সম্ভব বাদ দেওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। তাই শরীরের কথা ভেবে আজকাল অনেকেই সচেতনভাবে চিনি ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। অনেকে আবার সাদা চিনির বদলে খাচ্ছেন ব্রাউন সুগার। সত্যি কি সাধারণ চিনির থেকে ব্রাউন সুগার বেশি স্বাস্থ্যকর? নাকি শরীরে দু’রকম চিনির প্রভাবই একই রকম? ডায়াবেটিসে কী ধরনের সুগার খাওয়া উচিত, আসুন জেনে নেওয়া যাক- 

ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য সুগারের ধরন নিয়ে নানা ভুল ধারণা রয়েছে। বিশেষ করে অনেকের ব্রাউন সুগারকে “স্বাস্থ্যকর বিকল্প” হিসেবে দেখানোর প্রবণতা থাকে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, সুগার যতই রং বা প্রক্রিয়াজাত প্রক্রিয়ায় পার্থক্য হোক অর্থাৎ হোয়াইট অথবা ব্রাউন, রক্তে দু'রকম সুগারই গ্লুকোজ বাড়িয়ে দেয়। কী কী পার্থক্য রয়েছে- 

হোয়াইট সুগার ও ব্রাউন সুগার উভয়েই গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয়, ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায়। ব্রাউন সুগার তৈরি হয় হোয়াইট সুগার থেকে একটু পরিবর্তন করার মাধ্যমে। মূলত 'মোলাসেস' মেশানোর কারণে রং, গন্ধ ও বিভিন্ন খনিজ পদার্থ কিছুটা বেশি হয়। ব্রাউন সুগারে কিছু ক্যালশিয়াম, লোহা, পটাশিয়াম থাকে, তবে সাধারণ মাপের পরিমাণে এই খনিজ উপাদানগুলো রোগীর স্বাস্থ্যের উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলে না। 

আরও পড়ুনঃ সুপারফুড হলেও এঁদের জন্য 'বিষ' সজনে! শরীরে কোন কোন সমস্যা থাকলে এড়িয়ে চলবেন এই সবজি?

দুই ধরনের সুগারেই সুক্রোজ প্রধান উপাদান যা দ্রুত রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায়। গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স (জিআই) এর দিক থেকে দেখতে গেলে, সুক্রোজের গ্লাইসেমিক রেট প্রায় ৬৫ যা উল্লেখযোগ্যভাবে রক্তে গ্লুকোজ বৃদ্ধি করতে পারে। অতিরিক্ত সুগার সেবনের ফলে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা কমে যেতে পারে, ওজন বাড়তে পারে, এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের পাশাপাশি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। 

ডায়াবেটিস রোগীরা কী খাবেন

১. হোয়াইট সুগার পরিমিতভাবে খান। সুগারের যে কোনও ধরণই হোক অতিরিক্ত হলে ক্ষতি। 
২. রোজকার খাদ্যাভাসে যুক্ত করুন স্বাস্থ্যকর বিকল্প। যেমন- সেদ্ধ ফল, শাকসবজি, পুরো শস্য, কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাবার।

৩. কোন খাবারে কতটা সুগার আছে, লেবেল দেখে কিনুন। বেশি মিষ্টি খাবার এড়িয়ে চলুন। 
৪. প্রাকৃতিক ও বিকল্প মিষ্টি ব্যবহারঃ স্টিভিয়া অথবা অন্য কিছু 'নন-নিউট্রিটিভ সুইটনার' খেতে পারেন যা রক্তে গ্লুকোজ স্পাইক কম করে। 

পুষ্টির নিরিখে সাদা চিনির চেয়ে বাদামি চিনি খানিকটা এগিয়ে থাকবে। তবে ক্যালোরির দিক থেকে দুটিই প্রায় সমান। ব্রাউন সুগার যে খুব বেশি স্বাস্থ্যকর তা বলা যায় না। ব্রাউন সুগারেও গুড় মেশানো থাকে ঠিকই, তবে আপনি যদি ভেষজ গুড় বা জাগেরি পাউডার খাবারে ব্যবহার করেন, তবে সেটি বেশি উপকারী।

আসলে চিনি সার্বিকভাবে শরীরের জন্য ভাল নয়। তাই সুস্থতার জন্য ব্রাউন সুগার না খেয়ে চিনি পুরোপুরি বাদ দেওয়া শ্রেয়। বদলে প্রাকৃতিক মিষ্টি হিসাবে গুড়, মধু, খেজুরকে স্বাস্থ্যকর বিকল্প বেছে নিতে পারেন।