গুরুতর অসুস্থতা হোক কিংবা বয়সের ভার, কোনও কিছুই তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। ৮৩ বছর ছুঁয়েও পুরোদমে চলছে অভিনয়, সঞ্চালনার কাজ। সমস্ত শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে আজও একইরকমভাবে অনুরাগীদের মন জয় করে চলেছেন অমিতাভ বচ্চন। তাঁর জীবনকথা অগুনতি মানুষের কাছে অনুপ্রেরণা। বয়সের কাঁটা অনেকটা এগিয়ে গেলেও এখনও সক্রিয় ও ফিটনেসে মনোযোগী বিগ বি। তাঁর সুস্থতা ও উদ্যমের নেপথ্যে কেবল শারীরিক ব্যায়াম নয়, রয়েছে এক দৃঢ় মানসিকতাও। যা তাঁকে প্রতিদিনের ব্যস্ত সময়সূচিতেও নিজের শরীর ঠিক রাখতে সাহায্য করে চলেছে।
অভিনেতার ফিটনেস প্রশিক্ষক ভৃন্দা মেহতার কথায়, “যদি অমিতাভ বচ্চন ব্যস্ত সময়সূচিতেও ব্যায়াম করতে পারেন, তাহলে আমজনতারও করা উচিত। এটি সম্পূর্ণরূপে মানসিকতার ব্যাপার। যখন আপনি জানেন কোন অভ্যাস আপনার জন্য ভাল, তখন আপনি তা করবেন। এটি আরাম বা সময়ের অভাবের কারণে নয়। ফিটনেস কেবল শরীরচর্চা নয়, এটি দীর্ঘমেয়াদি অভ্যাস হওয়া উচিত।”
আরও পড়ুনঃ মানবদেহে লুকিয়ে ‘মৃত্যু-ঘড়ি’! আয়ু কখন ফুরোবে? মৃত্যুর আসল গোপন রহস্য খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা
অমিতাভের ফিটনেস রুটিন এবং মানসিকতা প্রমাণ করে, বয়স কেবল একটি সংখ্যা। ভৃন্দা জানিয়েছেন সিনিয়র বচ্চনের ব্যায়াম রুটিনে রয়েছে শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম, প্রণায়াম এবং মৌলিক যোগাসন। তিনি বলেন, “আমার সেশনগুলো মূলত শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম নিয়ে। আমরা মৌলিক শ্বাস ব্যায়াম দিয়ে শুরু করি, তারপর প্রণায়াম এবং কিছু মৌলিক যোগাসন করি।

প্রতিদিনের প্রাতঃরাশেও যত্নশীল বলিউডের শাহেনশাহ। তিনি সকালে তুলসী পাতা খেয়ে দিন শুরু করেন। এরপর প্রোটিন শেক, বাদাম, পোরিজ বা ডাবের জলে চুমুক দিয়ে প্রাতঃরাশ সম্পন্ন করেন। তাঁর সকালের রুটিনে আমলকি রস এবং খেজুরও থাকে। এই স্বাস্থ্যকর অভ্যাস অভিনেতাকে দিনের শুরুতেই সতেজ ও তরতাজা রাখে।
প্রসঙ্গত, একসময় হেপাটাইটিস বি অমিতাভের লিভারের প্রায় ৭৫ শতাংশ নষ্ট করে দিয়েছিল। শুধু তাই নয়, টিউবারকুলোসিস (টিবি)-র মতো কঠিন অসুখের সঙ্গেও তাঁকে লড়াই করতে হয়েছিল। আসলেো ১৯৮২ সালে কুলি ছবির শুটিংয়ের সময় গুরুতর দুর্ঘটনায় আহত হন অমিতাভ। তাঁর জীবন বাঁচাতে রক্তের প্রয়োজন হলে প্রায় ২০০ জন স্বেচ্ছাসেবী এগিয়ে আসেন। তবে তাঁদের মধ্যে একজনের রক্তে ছিল হেপাটাইটিস বি ভাইরাস। তখন বিষয়টি ধরা না পড়লেও, সেই ভাইরাস ধীরে ধীরে তাঁর শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
২০০০ সালে অমিতাভের মেরুদণ্ডে টিবি ধরা পড়ে। সে সময় প্রচণ্ড ব্যথায় তিনি ঠিকমতো বসতে বা শুতে পারতেন না। কাজ চালানোর জন্য প্রতিদিন তাঁকে ৮-১০টি ব্যথানাশক ওষুধ খেতে হত। দীর্ঘ এক বছরের চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হন।যদিও সুস্থতার জন্য তিনি জীবনযাপন বদল এনেছেন। আমিষের পরিবর্তে বর্তমানে অমিতাভ নিরামিষ খাবারই বেশি। সঙ্গে মদ্যপান, ধূমপানও তিনি পুরোপুরি ত্যাগ করেছেন।
