প্রেমে যেমন একসঙ্গে সময় কাটানো জরুরি, তেমনই একসঙ্গে ভ্রমণও সম্পর্কের এক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। অনেকেই বলেন, একসঙ্গে সফরে বেরোলেই বোঝা যায় সঙ্গীর আসল চরিত্র। তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ধরন, অভ্যাস, রুচি, খুঁতখুঁতানি—সবকিছু। একসময় যেখানে যুগলদের ভ্রমণ মানে ছিল শুধু মধুচন্দ্রিমা বা বার্ষিক বেড়ানো, ২০২৫-এ এসে তা অনেকটাই বদলে গিয়েছে। এখন যুগলরা বেরিয়ে পড়ছেন ‘মিনিমুন’, কিংবা হঠাৎ ঠিক করা ছুটির সফরে।
তবে ভ্রমণ মানেই কোনও না কোনও নাটকীয়তা! অনেক সময় তার সূত্রপাত হয় বিমানবন্দরেই। সিনেমাপ্রেমীরা জানেন, বিমানবন্দরেই দেখা যায় সবচেয়ে আবেগঘন মুহূর্ত—কোথাও প্রেম নিবেদন, কোথাও বিদায়, কোথাও আবার অশ্রুসিক্ত পুনর্মিলন। আর এখন সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে এক নতুন শব্দ—‘এয়ারপোর্ট ডিভোর্স’।
তবে এটি কিন্তু কোনও আইনগত বিচ্ছেদ নয়। বরং সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার এক অভিনব উপায়, বলছেন এক ব্রিটিশ সাংবাদিক।
‘এয়ারপোর্ট ডিভোর্স’-এর গল্প
ব্রিটিশ ভ্রমণ লেখক হিউ অলিভার এই শব্দটি ব্যবহার করেন প্রথমবার। নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘এয়ারপোর্ট ডিভোর্স’ মানে হল—সিকিউরিটি চেক পার হওয়ার পর সাময়িকভাবে আলাদা হয়ে যাওয়া, এবং কিছুক্ষণ পরে বিমানে গিয়ে আবার দেখা হওয়া।
অলিভার জানান, তিনি এবং তাঁর বাগদত্তা একেবারে বিপরীত স্বভাবের মানুষ। তাঁর সঙ্গিনী পছন্দ করেন ধীরে ধীরে ডিউটি-ফ্রি দোকান ঘুরে দেখা, আর তিনি পছন্দ করেন জানলার ধারে বসে উড়ান দেখা। এই পার্থক্যের কারণে তৈরি হওয়া ছোটখাটো মনোমালিন্য থেকে বাঁচতেই জন্ম নেয় ‘এয়ারপোর্ট ডিভোর্স’-এর ধারণা।
অনেকেই এই অভিজ্ঞতার সঙ্গে নিজেদের মিল খুঁজে পেয়েছেন। কারণ, বিমানবন্দর এমন এক জায়গা যা উত্তেজনাপূর্ণ হলেও চাপেরও কেন্দ্রবিন্দু। কেউ আগে থেকে বোর্ডিং গেটে গিয়ে বসতে ভালবাসেন, কেউ আবার শেষ ডাক না পাওয়া পর্যন্ত আরামে বসে থাকেন—এই ছোটখাটো পার্থক্যই হয়ে উঠতে পারে ঝগড়ার কারণ, যা ছুটির শুরুতেই মেজাজ খারাপ করে দিতে পারে।
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘ট্রাভেল অ্যাংজাইটি’ বা ভ্রমণজনিত উদ্বেগ একটি বাস্তব সমস্যা। চেক-ইন থেকে লাগেজ সংগ্রহ পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটাই অনেকের জন্য মানসিক চাপের। এর মধ্যে যদি সঙ্গীর ভিন্ন রুটিন বা অভ্যাস যুক্ত হয়, তবে উত্তেজনা বেড়ে যেতে বাধ্য।
অলিভার দাবি করেছেন, এই সাময়িক দূরত্ব তাঁর সম্পর্কে নতুন স্বস্তি এনে দিয়েছে। তবে এই পদ্ধতি সবার জন্য কার্যকর নাও হতে পারে। বিশেষ করে যদি দম্পতির সঙ্গে সন্তান থাকে, তাহলে আলাদা হয়ে থাকার এই কৌশল খুব একটা বাস্তবসম্মত নয়।
শেষ পর্যন্ত সম্পর্কের মূল মন্ত্র একটাই—বোঝাপড়া ও ব্যক্তিগত পরিসরের প্রতি সম্মান। ভালোবাসা মানে একসঙ্গে পথ চলা, তবে মাঝে মাঝে একটু দূরত্বও জরুরি। যেমন বলিউড বারবার মনে করিয়ে দিয়েছে, দূরত্বও অনেক সময় জরুরি।
