গোপাল সাহা: রাজ্যের বিভিন্ন জেলা মিলিয়ে যে সমস্ত বিএলও'রা ৯৯.৯% ফর্ম বিতরণ করেছেন, তাঁদেরকে পুরস্কৃত করবে নির্বাচন কমিশন। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক দপ্তরে আজ বেলা একটা নাগাদ উপস্থিত হয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের চার সদস্যের একটি টিম। যেখানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, অরূপ বিশ্বাস, সাংসদ পার্থ ভৌমিক ও সাংসদ বাপি হালদার। 

এদিন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়ালের সঙ্গে দেখা করেন তাঁরা। এরপর অভিযোগ করেন, 'কেন্দ্র সরকার এবং নির্বাচন কমিশন মিলিতভাবে রাজ্যের দু'কোটি ভোটার বাতিল করার চেষ্টা করছে।' এছাড়াও বিএলওদের ঠিকমতো প্রশিক্ষণ না দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন।

রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক দপ্তরে সিইও-র সঙ্গে আজ দেখা করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার। তিনি ডিজিটাল ও নেট পরিষেবা বিলম্বিত হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন। পাশাপাশি, বিএলওদের আত্মহত্যার বিষয় নিয়েও কথা বলেন। এছাড়াও রাজ্যের ভুয়ো ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া নিয়ে কথা বলেন শুভঙ্কর সরকার।

এছাড়াও রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক দপ্তরে উপস্থিত হন আরও দুই সংগঠনের প্রতিনিধি দল। একদিকে যেমন উপস্থিত ছিলেন অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার প্রতিনিধি দল, পাশাপাশি উপস্থিত ছিল বিএলও যৌথ মঞ্চের প্রতিনিধি দল। 

এদিন অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার প্রতিনিধি দল সমাজের যৌনকর্মীদের হয়ে কথা বলেন। তাঁরা জানান, নির্বাচনী আধিকারিকের সঙ্গে তাঁরা কথা বলেছেন, যাতে যে যৌনকর্মীরা কাজের কারণে বাড়ি ছেড়ে এখানে রয়েছেন, যেন তাঁদের এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করতে কোনওরকম সমস্যা না হয়। পাশাপাশি তাঁদের যেন সহানুভূতির সঙ্গে পুরো বিষয়টি দেখা হয়। এই যৌনকর্মীরা শুধু শহর কলকাতায় নয়, রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছেন। যাঁরা বাড়ি ছেড়ে এখানে কাজ করতে আসেন। মূলত তাঁদের জন্যই অখিল ভারতীয় মহাসভা এদিন নির্বাচনী অধিকারিকের সঙ্গে কথা বলতে আসেন।

অন্যদিকে বিএলও যৌথ মঞ্চ এদিন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক দপ্তরে দেখা করার পর জানায়, বিএলওদের উপরে 'ইআরও' চাপ দিচ্ছে জাল নাম নথিভুক্ত করার জন্য। যাতে চাপ মুক্ত হতে পারে সে বিষয়েও কথা হয়েছে বলে জানিয়েছে। এছাড়াও নেট পরিষেবা নিয়ে একটা বড় সমস্যা তৈরি হয়েছে, সে বিষয়ে আলোকপাত করার জন্য আবেদন জানিয়েছে। 

বিএলও ঐক্য মঞ্চের মুখপাত্র স্বপন মণ্ডল বিএলওদের অভিযোগের জন্য এডিট অপশন নিয়ে কথা বলেন, কিছু 'ইআরও' ইচ্ছাকৃতভাবে বিএলওদের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। জাল প্রক্রিয়ায় নাম নথিভুক্ত করার চেষ্টা করে বিএলওদের উপরে চাপ। সেই কারণে আত্মহত্যার চেষ্টা বলে অভিযোগ করেছে যৌথ মঞ্চ। এ ধরনের ঘটনা মূলত উত্তরবঙ্গের ঘটছে। তার মধ্যে মালদহ উল্লেখযোগ্য।

উল্লেখযোগ্য ভাবে আজ রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক দপ্তর সূত্রে বেশ কিছু তথ্য সামনে এসেছে। তার মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল -

১. মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক দপ্তর সূত্রে খবর, সোমবার টেলিকম পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলিকে ডেকে বৈঠক করা হবে সিইও দপ্তরে। সিইও মনোজ আগরওয়াল নিজেও থাকবেন সেই বৈঠকে বলে জানা যাচ্ছে। ডিজিটিলাইজড করতে গিয়ে স্পিড সমস্যার কারণে বিস্তর অভিযোগ আসছে বিএলওদের তরফে। সেই কারণে ডেকে পাঠানো হয়েছে টেলিকম সংস্থাগুলিকে। 

২. বিএলওদের ওপর চাপ তৈরি করা হলে কমেন্ট সেকশনে বা ফর্মের পেছনে লিখে জানাতে পারেন '
বিএলওরা।

৩. ৯ ডিসেম্বর ভোটারদের নামের যে খসরা তালিকা বেরোবে তাতে চারটি কলম থাকবে। 
        ১.ডেথ  
        ২.অ্যাবসেন্ট  
        ৩.ডুপ্লিকেট 
        ৪.শিফ্টটেড

৪. বিএলওদের মৃত্যুর কারণে ২ লক্ষ টাকা রাজ্য সরকার দেওয়ার কথা নিয়ে প্রশ্ন করলে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টি নিয়ে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে তথ্য এলেই তবে এ বিষয়ে পরিষ্কার হবে। এখনও মৃত বিএলওদের টাকা দেওয়ার বিষয়ে তেমন কোনও কথা হয়নি।

৫. বাংলায় বিএলওদের মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন করলে মনোজ আগরওয়াল জানিয়েছেন, 'বাংলা এত মৃত্যু হয়, অন্য রাজ্যে তো হয় না। তদন্ত হোক, তদন্ত করে দেখা হোক। বাংলার লোক হেলোসিনেট করছে।'