আজকাল ওয়েবডেস্ক: কলকাতার বুকে ঘটল চাঞ্চল্যকর ঘটনা। অভিযোগ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলাপ হওয়ার পর প্রথম সাক্ষাতেই এক তরুণীকে ধর্ষণ করেছে এক যুবক। পরে দীর্ঘদিন ধরে হুমকি দিয়ে টাকা আদায়েরও চেষ্টা চলেছে বলে অভিযোগ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত দীপ নারায়ণ ভট্টাচার্য নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে নেতাজি নগর থানার পুলিশ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, চলতি বছরের মার্চ মাসে প্রিন্সেপ ঘাটে প্রথম দেখা করতে আসেন ওই তরুণী ও যুবক। সেখান থেকে গঙ্গার বুকে নৌকায় ওঠেন তারা। তরুণীর অভিযোগ, সেদিনই নৌকার ভিতর তাকে ধর্ষণ করে অভিযুক্ত।

পরবর্তীতে ভয় দেখিয়ে একাধিকবার অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে ওই যুবক। তরুণীর দাবি, ঘটনার কথা ফাঁস না করতে নানা সময়ে তাকে হুমকি দেওয়া হত। অবশেষে জুলাই মাসে সাহস করে নেতাজি নগর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তরুণী। অভিযোগ দায়েরের পর থেকেই পলাতক ছিল অভিযুক্ত। টানা কয়েক মাস গা-ঢাকা দেওয়ার পর রবিবার তাকে গ্রেপ্তার  করে পুলিশ। পরবর্তীতে আলিপুর আদালতে পেশ করলে বিচারক ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাকে পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। ঘটনাটি ঘিরে এলাকায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, এই মামলায় সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কলকাতার এই ধর্ষণ-সহ চাঁদাবাজির ঘটনা কেবলমাত্র একটি অপরাধমূলক কাহিনি নয়, এর গভীরে রয়েছে ভয়াবহ মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক অভিঘাত।

আরও পড়ুন: প্রসাদে 'নেশা'র দ্রব্য মিশিয়ে যৌন নির্যাতন ব্যক্তিকে, মারধোর-ব্ল্যাকমেল, বৃন্দাবনের আশ্রমের প্রধান পুরোহিতের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ

মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে দেখলে, নির্যাতিতার জন্য এটি এক গভীর ট্রমার অভিজ্ঞতা। প্রথম পরিচয়ের দিনেই বিশ্বাস ভেঙে যাওয়া, তারপর ধারাবাহিক হুমকি ও অর্থ আদায়ের চেষ্টায় তার নিরাপত্তাবোধ ভেঙে পড়ে। এ ধরনের ঘটনার ফলে ভুক্তভোগী দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ, অবসাদ, আত্মসম্মানবোধের ক্ষয় এবং সম্পর্কের প্রতি আস্থাহীনতার সমস্যায় ভুগতে পারেন। অনেকে সামাজিক লজ্জা ও বিচারভয়ের কারণে আরও একা হয়ে পড়েন।

সামাজিকভাবে এ ধরনের অপরাধ আমাদের শহুরে জীবনের দুর্বলতাকে সামনে আনে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গড়ে ওঠা সম্পর্কের ভেতরে লুকিয়ে থাকে বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারণার সম্ভাবনা। এই ঘটনা তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ভার্চুয়াল পরিচয়ের বিষয়ে সতর্কতা তৈরি করলেও, একই সঙ্গে সমাজে নারীদের প্রতি নিরাপত্তাহীনতা আরও প্রকট হয়ে ওঠে। পরিবার, বন্ধু, এমনকি বৃহত্তর সমাজকেও এই সময়ে ভুক্তভোগীর পাশে দাঁড়াতে হবে, না হলে নিঃসঙ্গতা ও দোষারোপের শিকার হবেন তিনি। অতএব, এই ঘটনা শুধুমাত্র একটি ফৌজদারি মামলা নয়, এটি সামাজিক মূল্যবোধ, সম্পর্কের নিরাপত্তা এবং নারী-পুরুষের পারস্পরিক বিশ্বাসের উপর গভীর আঘাত হানে।