আজকাল ওয়েবডেস্ক: মধ্যরাত পেরিয়ে গিয়েছে তখন। যে দেশে নেতা-মন্ত্রীরা হামেশাই মেয়েদের চালচলন, পোশাক-আসাক, কথা-বার্তা নিয়ে মন্তব্য করেন, হাজার রকম ফতোয়া জারি করেন, মেয়েরা রাত-বিরেতে বেরোবে কেন বলে প্রশ্ন করেন, সেই দেশের মাঠে, মধ্যরাত পের করে, সেই দেশের মেয়েরাই হারিয়ে দিয়েছেন গোটা বিশ্বকে। বিশ্বজয় করে যখন আনন্দে কাঁদছেন তাঁরা, তখন সেই কান্নায় মিশে যাচ্ছে হাজার হাজার গাঁয়ে-ঘরে ফতোয়ার চাদরের ভিতর থাকতে বাধ্য হওয়া মেয়েদের চোখের জল। কেউ ভাবছেন, বড় হয়ে 'ওই মেয়েটি'র মতো হবেন। কেউ ভাবছেন কেন তিনি হতে পারলেন না 'ওই মেয়েটি'র মতো। যাঁরা স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিতে পেরেছেন, চোখের জলে ভাসছেন তাঁরাও। এর মধ্যেই বৈষম্য সামনেও এসেছে একেবারে উচ্চস্তর থেকে। জয় ছিনিয়ে আনার পর, প্রাপ্ত অর্থে বৈষম্য, বৈষম্য খেলার মাঠে। সেসব বৈষ্যম্যকে আবার সমর্থন করে যুক্তিও দিচ্ছেন কেউ কেউ।
এ যেন বিশ্ব জয় করার পরেও, এদিক-ওদিক-সেদিকের অদ্ভুত এক ন্যারেটিভ। এই পরিস্থিতিতে কী বলছেন এই সময়ের দুই তরুণ নেতা? দু'জন দুই দলের। রাজনৈতিক মতাদর্শের মিল নেই। একজন অন্যজনের দল নিয়ে হামেশাই বক্তৃতা দিয়ে থাকেন। এই বিষয়ে কি তাঁরা একমত? নাকি ধারণা পৃথক?
এসএফআই-এর সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য। সোমবার রাতেই, আইসিসি ওমেন'স ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ ভারত জিততেই, তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়েছিলেন, 'সাধারণত মানুষ
শান্তি বা অশান্তি
নিয়ে ঘুমাতে যায়।
আজকের রাত আমরা
তৃপ্তি নিয়ে ঘুমাতে যাব।
ভারতীয় ক্রিকেটের নবীন রূপকথা....
অভিনন্দন, নাছোড়বান্দা মেয়ের দল।'
আজকাল ডট ইন-কে বিশ্বজয়ের আনন্দ প্রসঙ্গে জানান, 'ভীষণ আনন্দের দিন। বিশেষত কন্যাভ্রূণ হত্যার দেশে এই জয় শুধু খেলার মাঠে নয়, জীবনের মাঠেও এক বিরাট প্রেরণার ইতিহাস তৈরি করল। এই জয়ের সামাজিক-রাজনৈতিক অভিঘাত সুদূরপ্রসারী হবে। অনেক ভালবাসা রইল হরমনপ্রীত ও তাঁর দলের প্রতি।'
অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের যুব নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য। কী বলছেন তিনি? এই বিপুল আনন্দে তাঁর মনে কী প্রশ্ন ঘুরছে? বলছেন, 'এ বড় আনন্দের দিন, গর্বের দিন। দেশ আরও একবার জিতেছে। কিন্তু একটা জিনিস ভেবে খারাপ লাগে জানেন, যখন মহিলা টিম খেলছে, তখন কেন সেই একই রকম উচ্ছ্বাস, আবেগ দেখা যায় না বলুন তো, যেটা পুরুষ টিম খেললে দেখা যায়। আপনারা সমীক্ষা করলে বুঝতে পারবেন, কতজন জানতেন এই খেলাটি হচ্ছে। তাছাড়া, কেন এই আবেগ, আনন্দ, উচ্ছ্বাস, শুধু জেতার দিন দেখানো কেন? মহিলাদের ক্রিকেট, প্যারা অলিম্পিক, হকি, ফুটবল হচ্ছে, আমরা অনেকেই এই কঠিন লড়াই নিয়ে খোঁজই রাখি না। আমরা যদি সার্বিকভাবে সমর্থন না করি, তাহলে জিতে গেলে, কালীপুজোর দিন বেঁচে যাওয়া দুটো কালী ফটকা ফাটিয়ে এই আনন্দের ভাগ নেওয়ার অধিকার আমাদের নেই।'
