আজকাল ওয়েবডেস্ক: একদিকে ভোটার তালিকা নিবিড় সংশোধনের প্রক্রিয়া ঘিরে রাজ্য রাজনীতি তোলপাড়। অন্যদিকে বিজেপি শাসিত রাজ্যেই একের পর এক বাংলার পরিযায়ী শ্রমিককে মারধর, খুন। সোমবার নিউটাউনে 'দুর্গা অঙ্গন'-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেই ফের আরেকবার প্রতিবাদে গর্জে উঠলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
'দুর্গা অঙ্গন'-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'মায়ের কাছে প্রার্থনা করব, অশুভ শক্তির বিনাশ করো। অসুরদের বিনাশ করো। মনুষ্যত্বকে বাঁচিয়ে দাও। মানুষকে বড্ড হয়রান হতে হচ্ছে। এক মাসে ৫০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন। এটা আর সহ্য হচ্ছে না।'
এরপরই তিনি বলেন, 'বাংলায় থেকে নিজেকে ভারতীয় নাগরিক প্রমাণ করতে হবে? নাগরিকত্বের সঙ্গে ভোটাধিকারের কী সম্পর্ক? আমি এখানে থাকি। এখানে পড়ি। এখানে আমার জন্ম। এখানেই আমার ঠিকানা। আমার অস্তিত্ব।' এরপর বলেন, 'বাংলায় কথা বললেই বলছে, বাংলাদেশি। বলছে, হোটেলে জায়গা হবে না। স্বাধীনতা সংগ্রামে ৬০০ জনের ফাঁসি হয়ে থাকলে ৫৯০ জন বাংলার, ১০ জন পাঞ্জাবের। আন্দামানের সেলুলার জেল থেকে আমি রেপ্লিকা তুলে এনেছি। আলিপুর জেলে দেখে আসুন। ৯০ শতাংশ বন্দি ছিলেন বাংলার।'
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, 'অনেকে বলে আমি তোষণ করি। আমি তোষণ করি না। আমি সঠিক অর্থে সেকুলার। আমি সর্বধর্ম সমন্বয়ে বিশ্বাস করি। সব ধর্মকে ভালবাসি। এমন কোনও ধর্ম দেখাতে পারবেন না, যাদের অনুষ্ঠানে আমি যাই না। গুরুদ্বারে গেলে মাথা ঢেকে যাই। তাতে কেউ আপত্তি করেন না। রোজায় গেলে এত আপত্তি কেন। ঠিক যেমন আজ গায়ে চাদর দিয়ে এসেছি। কারণ হিন্দু রীতিতে গায়ে কাপড় দেওয়া হয়।'
প্রসঙ্গত, গত এক সপ্তাহে বিজেপি শাসিত ওড়িশায় মুর্শিদাবাদের এক পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। মারধর, হেনস্থার শিকার হয়েছেন আরও একাধিক পরিযায়ী শ্রমিক। ওড়িশার সম্বলপুরে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়ে বাংলাদেশি সন্দেহে ওড়িশা স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতীর হাতে মার খেয়ে গত বুধবার রাতে মৃত্যু হয়েছে মুর্শিদাবাদের সুতি থানার চকবাহাদুরপুর গ্রামের বাসিন্দা জুয়েল রানা নামে এক যুবকের। সেই ঘটনার রেশ কাটার আগে ফের একবার ওড়িশায় বাংলাদেশি সন্দেহে মুর্শিদাবাদের চার পরিযায়ী শ্রমিককে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে।
শনিবার এ প্রসঙ্গে এক্স হ্যান্ডেলে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, 'প্রতিটি বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলাভাষী মানুষের উপর যে নির্মম অত্যাচার ও নিগ্রহ নেমে এসেছে আমরা তাকে তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি। আমরা নিগৃহীত, সন্ত্রস্ত ও অত্যাচারিত সেইসব পরিযায়ী বাংলাভাষী পরিবারের পাশে আছি, সেই সব পরিবারকে আমরা সমস্ত রকম সমর্থন দেব। মানুষের জীবনের বিনিময়ে কোনও মূল্য হয় না, কিন্তু যেসব ক্ষেত্রে মৃত্যু ঘটছে সেইসব ক্ষেত্রে আমাদের অর্থনৈতিক ক্ষতিপূরণের অঙ্গীকার রইল।'
তিনি আরও জানিয়েছেন, 'অতি সম্প্রতি জঙ্গিপুর এলাকার কিছু পরিযায়ী শ্রমিকের উপর বিজেপি শাসিত ওড়িশা রাজ্যে নানা অত্যাচার নেমে এসেছে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে জঙ্গিপুরের সুতি এলাকার এক তরুণ পরিযায়ী শ্রমিককে সম্বলপুরে ২৪ ডিসেম্বর তারিখে পিটিয়ে মারা হয়েছে। মুর্শিদাবাদে পরিযায়ী শ্রমিকরা ওড়িশা থেকে সন্ত্রস্ত হয়ে বাড়ি ফিরছেন। এই মর্মান্তিক ঘটনায় আমরা পরিবারগুলির সঙ্গে আছি এবং নিহতের পরিবারের প্রতি আমাদের আর্থিক সহায়তাও পৌঁছে যাবে। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির এই সমস্ত ঘটনায় নিগ্রহকারীদের প্রতি আমাদের নিন্দা ও নিগৃহীতদের জন্য আমাদের সব রকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি রইল। বাংলা ভাষা বলা কোনও অপরাধ হতে পারে না। নিহত তরুণ জুয়েল রানার ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ইতিমধ্যে সুতি থানায় জিরো এফআইআর রুজু করেছে এবং ইতিমধ্যে ছ'জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমার রাজ্যের পুলিশ টিম ওড়িশা গিয়েছে তদন্তের জন্য।'
