আজকাল ওয়েবডেস্ক: হুগলি নদীর তীরে খিদিরপুর ডকে বৃহস্পতিবার রাতেই নোঙর করেছে ভারতীয় নৌবাহিনীর দুই অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ আইএনএস কোরা ও আইএনএস খঞ্জর।

আগামী ৪ ডিসেম্বর নেভি ডে উপলক্ষে ২০২৫ সালের নেভি উইকের অংশ হিসেবে এই বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।

শুক্রবার সকাল থেকেই দুই গাইডেড মিসাইল করভেটকে ঘিরে শহরজুড়ে উত্তেজনা দেখা যায়। বঙ্গোপসাগরে মিশন-ভিত্তিক অভিযান চালিয়েও এদিন কলকাতায় সামুদ্রিক শক্তির এই অনন্য প্রদর্শনী উপহার দিল নৌসেনা। পোর্ট ট্রাস্টের জেটিতে প্রথম নজর কাড়ে আইএনএস খঞ্জর।

P-25 ক্লাসের চতুর্থ করভেট, যা ১৯৯১ সালে নির্মিত। নৌ-মহলে এটি ‘Grey Ferrari’ নামে পরিচিত। ৩৪ বছর বয়স হলেও সক্ষমতায় আজও সমান ক্ষিপ্র এই জাহাজ।

জাহাজটির মূলমন্ত্র হল, ‘Better Than the Best’। আইএনএস-খঞ্জরের সঙ্গে ভারতীয় সেনার কুমায়ুন ও নাগা রেজিমেন্টের ঐতিহ্যবাহী সংযোগ রয়েছে।

বর্তমানে এর নেতৃত্বে আছেন কমান্ডার রনি চৌপূ। এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ‘আইএনএস খঞ্জর ৩৪ বছরের তরুণ জাহাজ। ইন্দো–প্যাসিফিকের প্রায় প্রতিটি প্রান্তে অভিযান চালিয়েছে।

যুদ্ধ, অ্যান্টি–পাইরেসি, মানবিক সাহায্য বা দুর্যোগ, মোতায়েন প্রতিটি ভূমিকাতেই খানজর সর্বদা প্রস্তুত।’ এর পাশাপাশি রয়েছে আইএনএস কোরা। P-25A ক্লাসের প্রথম করভেট, কমিশনড ১৯৯৮ সালে।

নেপালের ঐতিহ্যবাহী কোরা তলোয়ার থেকে এর নামকরণ, যা গোর্খাদের বীরত্বের প্রতীক। এর অধিনায়ক কমান্ডার চন্দন ঝা।

বিদেশ সফর, আন্তর্জাতিক মহড়া এবং শক্তিশালী স্ট্রাইক ক্ষমতার জন্য কোরা বহুবার প্রশংসিত হয়েছে। যুদ্ধের সময় শত্রুকে প্রথম আঘাত হানতে সক্ষম এই দুই করভেট।

আবার অন্যান্য সময়েও এই দুই জাহাজ সমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারতের সীমান্ত পাহারা দেওয়া, উপকূল রক্ষা ও বন্দর সুরক্ষা, জলদস্যু ও সন্ত্রাসবিরোধী টহল এবং আন্তর্জাতিক মহড়ার মাধ্যমে সামরিক কূটনীতি শক্তিশালী করাই এদের প্রধান দায়িত্ব।

সারফেস-টু-সারফেস মিসাইল, অ্যান্টি–এয়ারক্রাফ্ট গান, আধুনিক ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম ও সার্ভেইল্যান্স রাডারসহ শক্তিশালী অস্ত্রভান্ডারে সজ্জিত দু’টি জাহাজই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বড় আধুনিকীকরণের মধ্য দিয়ে আরও শক্তিশালী হয়েছে।

দুটি জাহাজই নির্মিত হয়েছে কলকাতার গার্ডেন রিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্সে (GRSE)। তাই ঘরের মাটিতে তাদের প্রত্যাবর্তন শহরবাসীর কাছে আবেগঘন।

এটি ভারতের সামুদ্রিক আত্মনির্ভরতারও উজ্জ্বল বার্তা। আইএনএস খঞ্জর ও আইএনএস কোরা-কে এক নজরে দেখার জন্য শুক্রবার সকাল থেকেই খিদিরপুর বন্দরে ভিড় করেন অসংখ্য মানুষ।

তার মধ্যে ছিলেন উৎসাহীরা, শিক্ষার্থী ও পরিবারসহ সাধারণ নাগরিক। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, এই শক্তিশালী যুদ্ধজাহাজ দু’টির উপস্থিতি ছিল সত্যিই মনোমুগ্ধকর।