আজকাল ওয়েবডেস্ক: রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে নাটকীয় হার। অবিশ্বাস্য! নববর্ষে চাহালের তাণ্ডব। বাংলার নতুন বছরের শুরুটা হার দিয়ে হল নাইটদের। ৭ রানে পাঁচ উইকেট। ৪ উইকেটে ৭২ রান থেকে ৮ উইকেটে ৭৯। শেষমেষ ৯৫ রানে অলআউট কলকাতা নাইট রাইডার্স। যুজবেন্দ্র চাহালের ঘূর্ণিতে ঘুরল ম্যাচ। ১৬ রানে জয় পাঞ্জাবের কিংসের। জেতা ম্যাচ হাতছাড়া নাইটদের। নাটকীয় ম্যাচে অবিশ্বাস্য হার। পুরোনো দলের বিরুদ্ধে বদলা নিলেন শ্রেয়স আইয়ার। পাঞ্জাবের ব্যাটিংয়ের সমালোচনা চলছিল, আচমকা আক্রমণের তীর ঘুরল নাইটদের দিকে। পাঞ্জাবকে ম্যাচে ফিরিয়েছিলেন চাহাল। সেই চাহালের শেষ ওভারেই নাইটদের আবার ম্যাচে ফেরান দ্রে রাস। দুটো ছক্কা, একটি চার। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। ৯ উইকেট হারানোয়, সবটাই নির্ভর করছিল রাসেলের ওপর। ব্যাট চালাতে গিয়ে জ্যানসেনের বলে বোল্ড হলেন ক্যারিবিয়ান তারকা। প্রথমে ব্যাট করে ১৫.৩ ওভারে মাত্র ১১১ রানে শেষ হয়ে যায় পাঞ্জাবের ইনিংস। জবাবে ১৫.১ ওভারে ৯৫ রানে অলআউট কেকেআর।  আইপিএলের ইতিহাসে সর্বনিম্ন স্কোর ডিফেন্ড করল পাঞ্জাব কিংস। ২৮ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা যুজবেন্দ্র চাহাল। 

ধোনির দলকে দুরমুশ করার পর শ্রেয়স আইয়ারদের উড়িয়ে দেওয়ার মতো জায়গায় ছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। পুরোপুরি একপেশে ম্যাচ চলছিল। বড় ব্যবধানে পাঞ্জাব কিংসকে হারিয়ে রান রেট বাড়িয়ে রাখতে পারত নাইটরা। যেমন ব্যাটিং, শুরুতে তেমন জঘন্য ফিল্ডিং পাঞ্জাবের। এত অল্প রানের পুঁজি নিয়ে এমন ফিল্ডিং করলে ম্যাচ জেতা দূর অস্ত, বিপক্ষকে চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দেওয়া যায় না। কিন্তু দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিলেন চাহাল। তাঁর স্বপ্নের বোলিং ম্যাচে ফেরাল পাঞ্জাবকে। 

অল্প রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় কেকেআর। ৭ রানে জোড়া উইকেট হারায়। হাত খোলার আগেই জ্যানসেনের বলে বোল্ড হন সুনীল নারিন। পরের ওভারেই ফেরেন কুইন্টন ডি'কক। পরিস্থিতি সামাল দেন অজিঙ্ক রাহানে এবং অঙ্গকৃষ রঘুবংশী। তৃতীয় উইকেটে ৫৫ রান যোগ করে এই জুটি। তাতেই ম্যাচে ফেরে কেকেআর। তবে মাঝের ওভারে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন যুজবেন্দ্র চাহাল। ৩ ওভারে মাত্র ১২ রানে চার উইকেট তুলে নেন। একে একে ফেরেন অজিঙ্ক রাহানে, অঙ্গকৃষ রঘুবংসী, রিঙ্কু সিং এবং রমনদীপ সিং। হ্যাটট্রিকের হাতছানি ছিল। কিন্তু কোনওরকমে সামাল দেন হর্ষিত রানা। শুরুটা হয় রাহানেকে দিয়ে। পাঞ্জাবের স্পিনারের বলে এলবিডব্লু হয়ে ফেরেন নাইটদের নেতা। রিভিউ নেওয়া উচিত ছিল। দেখে মনে হয় বল অফ স্ট্যাম্পের বাইরে ছিল। কিন্তু রিভিউ না নিয়েই ১৭ রানে আউট হয়ে মাঠ ছাড়েন রাহানে। এটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। এদিন নাইটদের হয়ে সবচেয়ে ভাল ব্যাট করেন অঙ্গকৃষ। প্রথম বল থেকেই দলকে ভরসা দেন। কিন্তু চাহালের ঘূর্ণিতে ঘুরে যায় ম্যাচ। ৩৭ রানে আউট হন তরুণ ব্যাটার। নাইটদের ইনিংসে এটাই সর্বোচ্চ রান। লোয়ার মিডল অর্ডার সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ভেঙ্কটেশ আইয়ার, রিঙ্কু সিং, রমনদীপ সিং ফ্লপ। রাসেল আশা জাগালেও শেষপর্যন্ত পারলেন না। 

টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শ্রেয়স আইয়ার। লক্ষ্য ছিল কেকেআরের ওপর বড় রানের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া। কিন্তু হিতে-বিপরীত। শুরুটা আশা জাগালেও, দুই ওপেনার ফিরতেই আত্মসমর্পণ। কেকেআরের বোলারদের কৃতিত্ব কেড়ে না নিয়েও বলতেই হবে, জঘন্য ব্যাট করেছে পাঞ্জাব। অন্তত এই একটি ম্যাচ কোনওভাবেই হারতে চাননি শ্রেয়স।‌ গতবছর কেকেআরকে আইপিএল দেওয়া সত্ত্বেও তাঁকে রাখেনি শাহরুখ খানের ফ্র্যাঞ্চাইজি। এদিন মুম্বইকরের কাছে ছিল প্রতিশোধের ম্যাচ। নাইটদের হারানোর পাশাপাশি, নিঃসন্দেহে নিজেও বড় রান করতে চেয়েছিলেন। প্রথমটা হয়নি, চাহালের সৌজন্যে জয় এসেছে। শূন্য রানে ফেরেন পাঞ্জাবের নেতা। মাত্র ২ বল ক্রিজে ছিলেন। হর্ষিত রানার বলে দুর্দান্ত ক্যাচ রমনদীপের। দুই ওপেনার ছাড়া কেউ রান পায়নি। প্রিয়নশ এবং প্রভসিমরন যথাক্রমে ২২ এবং ৩০ রান করেন। ওপেনিং জুটি ভাঙতেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে পাঞ্জাবের ব্যাটিং। ৩৯ রানেই জোড়া উইকেট হারায় রিকি পন্টিংয়ের দল। ৭২ রানে ৮ উইকেট হারায় পাঞ্জাব। মিডল অর্ডার এবং টেল ডাহা ব্যর্থ। বরুণ চক্রবর্তী এবং সুনীল নারিনকে খেলতে পারেনি পাঞ্জাবের ব্যাটাররা। দু'জনেই জোড়া উইকেট নেন। তিন উইকেট পান হর্ষিত রানা। কিন্তু শেষপর্যন্ত চাহালের বোলিংয়ে অবিশ্বাস্য জয় পাঞ্জাবের।