আজকাল ওয়েবডেস্ক: আগামী নভেম্বরে ব্রাজিলের বেলেম শহরে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ জলবায়ু সম্মেলন COP30। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে কূটনীতিক, বিশেষজ্ঞ ও আলোচকরা হাজির হবেন এই সম্মেলনে। কিন্তু বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে থাকার জায়গা নিয়ে। বেলেম শহরে পর্যাপ্ত হোটেল না থাকায় আতিথেয়তার বড়সড় সংকট তৈরি হয়েছে। আর সেই সুযোগেই শহরের নানা 'লাভ মোটেল' নিজেদের পুনর্গঠন করে অতিথিশালা বা সাধারণ হোটেলে রূপান্তরিত হচ্ছে।
সাধারণত ব্রাজিলের লাভ মোটেলগুলো মূলত যুগলদের যৌনতার জন্য রুম ভাড়া দেওয়ার জায়গা, যেখানে রোমান্টিক সময় কাটাতে আসে জুটিরা। ঘন্টা ধরে ভাড়া দেওয়ার জন্য এগুলিকে প্রায়ই 'নিষিদ্ধ' জায়গার দৃষ্টিতে দেখা হয়। তাই মালিকরা সম্মেলনের আগে শুরু করেছেন এক বিশেষ “ডি-ইরোটিকাইজেশন ড্রাইভ”। সরানো হচ্ছে আয়না লাগানো ছাদ, যৌনতার চেয়ার, যৌনগন্ধী চিত্রকলা ও শোভাসামগ্রী।
লাভ লোমাস পউসাদার মালিক রিকার্দো টেক্সেইরা জানান, “আমরা এটা করতে চাই না, কিন্তু আর কোনও উপায় নেই। মানুষ এখনও টিভি-ফিল্মে দেখানো পুরনো ধারণাটাই মাথায় রাখে, যেন মোটেল মানেই দেহব্যবসার আড্ডা। বাস্তবে এগুলো সাধারণ থাকার জায়গা মাত্র।” তিনি আরও জানান, প্রয়োজনে অতিথিরা চাইলে চেয়ার রাখতে পারবেন—“কখন যে কাজে লাগে, কে জানে!”
আরও পড়ুন: আরও এস ৪০০ আসবে রাশিয়া থেকে! আগামী বছর সরবরাহ শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে, দাবি সূত্রের
দুই বছর আগে প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা ঘোষণা করেছিলেন যে বেলেম হবে COP30-এর আয়োজক শহর। কিন্তু এরপর নতুন হোটেল পরিকাঠামো তেমন গড়ে ওঠেনি। ফলে সংকট চরমে পৌঁছেছে। এ সুযোগে সাধারণ বাজেট হোটেলের ভাড়া হু-হু করে বেড়ে গেছে। কোথাও যেখানে এক বছর আগে ১০ পাউন্ডে কক্ষ পাওয়া যেত, সেখানে এবার দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮০০ পাউন্ডে। বর্তমানে বেলেমে প্রায় ২,০৫০টি মোটেল রুম আছে, এর মধ্যে প্রায় ৬০০ কক্ষ ইতিমধ্যেই COP30-এর জন্য সংরক্ষিত হয়েছে।
শহরের আরেক মোটেল Só Prazer (শুধু আনন্দ) এর মালিক ক্রিশ্চিয়ানো রিবেইরো ৮টি রুম আন্তর্জাতিক অতিথিদের জন্য ভাড়া দিয়েছেন ২০০–২৮০ ডলার প্রতি রাতে। তিনি মোটেলের বাইরের দেওয়ালে অ্যামাজনের বন্যপ্রাণীর ছবি এঁকেছেন এবং ভেতর থেকে সরিয়ে দিয়েছেন সেক্স-শপের ক্যাটালগ। তার আশা, এতে বিদেশি অতিথিদের কাছে জায়গাটি আরও গ্রহণযোগ্য হবে।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, দুটি বিশাল ক্রুজ শিপকেও ভাসমান হোটেলে পরিণত করা হবে, যা প্রায় ৬,০০০ অতিথিকে থাকার সুযোগ দেবে।
COP30-কে কেন্দ্র করে বেলেম শহরে তৈরি হয়েছে হোটেল সংকট। সেই সংকট সামলাতে প্রেমমোটেলগুলো নিজেদের নতুনভাবে গড়ে তুলছে, বাদ দিচ্ছে ইরোটিক সাজসজ্জা, জায়গা দিচ্ছে সাধারণ অতিথিসেবার ব্যবস্থায়। একদিকে জলবায়ু সংকট নিয়ে বিশ্বের তর্ক-বিতর্ক, অন্যদিকে সেই সম্মেলনের প্রস্তুতি ঘিরে স্থানীয় আতিথেয়তার এই অদ্ভুত পালাবদল এখন আন্তর্জাতিক মিডিয়ারও আকর্ষণের কেন্দ্রে।
