আজকাল ওয়েবডেস্ক: আধুনিক সাবমেরিন যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল ২০শ শতকের একেবারে গোড়ায়, আর তার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল একটি ঐতিহাসিক নাম—USS Holland। মার্কিন নৌবাহিনী ১৯০০ সালের ১২ অক্টোবর এই জাহাজটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে কমিশন করে। এটিই ছিল বিশ্বের প্রথম কার্যকর ও পূর্ণাঙ্গ সামরিক সাবমেরিন, যা সত্যিকার অর্থে নৌযুদ্ধের ধারা বদলে দেয়।
এই যুগান্তকারী সাবমেরিনটির নকশা করেছিলেন আইরিশ–আমেরিকান জন ফিলিপ হল্যান্ড। বহু বছরের অবহেলা ও সংশয়ের পর ১৯০০ সালের ১১ এপ্রিল মার্কিন নৌবাহিনী ১ লক্ষ ৫০ হাজার ডলারের বিনিময়ে Holland VI মডেলটি কিনে নেয়। এরপর দীর্ঘ ও কঠোর পরীক্ষার মাধ্যমে জাহাজটির ক্ষমতা যাচাই করা হয়। সফল ট্রায়ালের পর মার্কিন নৌবাহিনী সাবমেরিন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়, যা ভবিষ্যৎ নৌশক্তির কৌশল সম্পূর্ণভাবে বদলে দেয়।
তবে সাবমেরিনের ইতিহাস USS Holland দিয়ে শুরু হয়নি। তারও প্রায় এক শতক আগে, ১৭৭৫ সালে আমেরিকান উদ্ভাবক ডেভিড বুশনেল তৈরি করেছিলেন ‘দ্য টার্টল’ নামের এক জনের সাবমার্সিবল। এটি শত্রু জাহাজের নিচে গিয়ে বিস্ফোরক বসানোর জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল। কানেকটিকাটের গভর্নর জোনাথন ট্রাম্বুল এই প্রকল্পে অর্থসাহায্য করেছিলেন। ১৭৭৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ HMS Eagle-এ আক্রমণের চেষ্টা হয়, যদিও সেই অভিযান সফল হয়নি। তবুও, এটিই ছিল ইতিহাসের প্রথম যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত সাবমেরিন এবং এটি প্রমাণ করে যে জলের নিচের যানও যুদ্ধের অস্ত্র হতে পারে।
টার্টলের ব্যর্থতার পর প্রায় ১২৫ বছর ধরে সাবমেরিন উন্নয়ন কার্যত থমকে ছিল। মার্কিন নৌবাহিনী দীর্ঘ সময় এবিষয়ে আগ্রহ দেখায়নি। অনেক উদ্ভাবক জলের নিচে চলাচলের যান তৈরির চেষ্টা করলেও, কার্যকর ও বাস্তবসম্মত কোনও নকশা সামনে আসেনি। এই স্থবিরতা ভেঙে দেন জন ফিলিপ হল্যান্ড।
হল্যান্ডের সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল দুটি শক্তির উৎসকে একত্র করা। তাঁর সাবমেরিনে জলের নিচে চলার জন্য ছিল ইলেকট্রিক মোটর, যা নীরব ও কার্যকরভাবে কাজ করত। আর জলের ওপরে চলাচলের জন্য ব্যবহার করা হত গ্যাসোলিন ইঞ্জিন। এই যুগল প্রযুক্তি সাবমেরিনকে দীর্ঘ সময় ডুবে থেকে চলাচলের ক্ষমতা দেয়, যা আগের কোনও ডিজাইনে সম্ভব হয়নি।
USS Holland-এ আট সদস্যের একটি ক্রু কাজ করত এবং এতে ছিল তিনটি ১৮-ইঞ্চি টর্পেডো, যা জলের নিচের বো টিউব থেকে নিক্ষেপ করা যেত। ঐতিহাসিক এই সাবমেরিনের প্রথম কমান্ডার ছিলেন লেফটেন্যান্ট হ্যারি ক্যাল্ডওয়েল। ১৯০০ সালের কমিশনিং তারিখকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আধুনিক সাবমেরিন যুগের সূচনার দিন হিসেবে ধরা হয়।
USS Holland-এর সাফল্য দেখে ব্রিটিশ রয়্যাল নেভিও হল্যান্ডের কাছ থেকে সাবমেরিন অর্ডার দেয়। এর ফলেই ১৯০১ সালের ২ অক্টোবর উদ্বোধন হয় HMS Holland 1। গোপনে নির্মিত এই সাবমেরিন ১৯০২ সালের মার্চে প্রথম ডুব দেয় এবং এপ্রিল থেকে সমুদ্র পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরে রয়্যাল নেভি পাঁচটি হল্যান্ড-শ্রেণির সাবমেরিন তৈরি করে।
শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন নয়, জাপানসহ বহু দেশ হল্যান্ডের নকশা অনুসরণ করে। মার্কিন নৌবাহিনী আরও ছয়টি প্লাঞ্জার-শ্রেণির সাবমেরিন তৈরি করে। বলা যায়, ১৯০০ সালের এই প্রযুক্তিই আজকের আধুনিক পারমাণবিক সাবমেরিন পর্যন্ত পৌঁছনোর ভিত্তি স্থাপন করেছে।
