আজকাল ওয়েবডেস্ক: ইলেকট্রিক গাড়ি এখন ভবিষ্যতের নয়, বর্তমানের বাস্তবতা। কিন্তু একটি বড় প্রশ্ন এখনও সমাধানহীন। যেসব মানুষ শহরে ফ্ল্যাটে বা বহুতল ভবনে থাকেন, গ্যারেজ বা ব্যক্তিগত পার্কিং না থাকলে তারা কীভাবে গাড়ি চার্জ করবেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা।


তাদের নতুন প্রকল্প দেখাচ্ছে, সমাধানটা হয়তো আমাদের চোখের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। শহরের স্ট্রিটলাইট বা রাস্তার ল্যাম্পপোস্টে। শহরের প্রতিটি ব্লকে থাকা বিদ্যুতচালিত ল্যাম্পপোস্টগুলোকে ব্যবহার করেই গাড়ি চার্জিংয়ের সুবিধা তৈরি করা সম্ভব বলে মনে করছেন গবেষকরা। এই প্রযুক্তি একদিকে যেমন চার্জিং কাঠামো সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী করে তুলবে, অন্যদিকে পরিবেশ দূষণও কমাবে।


ইলেকট্রিক যানবাহন প্রচলিত পেট্রোল গাড়ির তুলনায় অনেক কম দূষণ ও খরচ সাশ্রয়ী। কিন্তু অনেক সময় মানুষ ইভি কিনতে আগ্রহী হলেও চার্জিং সুবিধা না থাকায় পিছিয়ে যান। বিশেষ করে শহরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়, যেখানে বেশিরভাগ মানুষ রাস্তার পাশে গাড়ি পার্ক করেন, সেখানে চার্জার বসানো সম্ভব নয়।

আরও পড়ুন: স্বর্ণের প্রতি ভারতীয়দের টান অনন্তকাল-অমলিন, চওড়া হাসি ব্যবসায়ীদের মুখেও


এই সমস্যা সমাধানে পেন স্টেটের গবেষকরা কানসাস সিটি, মিসৌরি-তে পরীক্ষামূলকভাবে ২৩টি স্ট্রিটলাইটে চার্জার স্থাপন করেন। ফলাফল ছিল চমকপ্রদ —
এই চার্জারগুলো কম খরচে, কম সময়ে ও পরিবেশবান্ধবভাবে স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। যেহেতু বিদ্যুৎ সংযোগ আগেই ছিল, তাই আলাদা পরিকাঠামো গড়ার প্রয়োজন পড়েনি। গবেষণার নেতৃত্ব দেন জিয়ানবিয়াও হু, যিনি পেন স্টেটের সিভিল ও এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। 


তিনি বলেন, “অনেক শহুরে বাসিন্দার গ্যারেজ বা ব্যক্তিগত চার্জিং স্টেশন নেই। অথচ ল্যাম্পপোস্টগুলো ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎ সংযুক্ত ও সরকারি মালিকানাধীন, যা এগুলিকে রূপান্তরের জন্য উপযুক্ত করে তোলে।” এই প্রকল্পটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ এনার্জি-র অর্থায়নে পরিচালিত হয়, এবং এতে অংশ নেয় কানসাস সিটি প্রশাসন, মেট্রো এনার্জি সেন্টার, ইউটিলিটি কোম্পানি, ও ন্যাশনাল রিনিউয়েবল এনার্জি ল্যাব।


গবেষকরা একটি তিন ধাপের কাঠামো তৈরি করেন — চাহিদা বিশ্লেষণ, বাস্তবায়নযোগ্যতা, এবং সুবিধা । চার্জিংয়ের চাহিদা নির্ধারণে দলটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে। তারা ভূমি ব্যবহার, যানবাহন চলাচল, পার্কিং ঘনত্ব, এবং জনসংখ্যার বৈচিত্র্য ইত্যাদি বিষয় বিশ্লেষণ করে সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গাগুলি চিহ্নিত করেন।


 ২৩টি স্ট্রিটলাইট রূপান্তরের পর দেখা যায়, এই চার্জারগুলো বাণিজ্যিক স্টেশনের তুলনায় দ্রুত ও কম প্রতিযোগিতামূলকভাবে কাজ করছে। পোস্টডক গবেষক ইউইয়ান “অ্যানি” প্যান বলেন, “এই চার্জারগুলো সরাসরি পৌর বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে শক্তি নেয়, ফলে একাধিক গাড়ি একসাথে চার্জ করলে ভোল্টেজ কমে না।”


এছাড়া, যেহেতু চার্জারগুলো গাড়ির পার্কিংয়ের স্থানেই রয়েছে, তাই চালকদের আলাদা চার্জিং স্টেশনে যেতে হয় না — এতে সময় ও জ্বালানি দুই-ই সাশ্রয় হচ্ছে, পাশাপাশি কার্বন নিঃসরণও কমছে।


পেন স্টেটের এই উদ্যোগ প্রমাণ করছে, স্মার্ট সিটি গড়ার পথে প্রযুক্তি ও পরিবেশবান্ধব চিন্তার সংযোগই ভবিষ্যতের চাবিকাঠি। রাস্তার ল্যাম্পপোস্টগুলো এখন আর শুধু আলোর উৎস নয় — এগুলোই হতে পারে টেকসই পরিবহনের শক্তির উৎস।