আজকাল ওয়েবডেস্ক: দীপাবলি ২০২৫ ঘনিয়ে আসতেই ভারতের বাজারে আবারও শুরু হয়েছে স্বর্ণ ও রৌপ্যের ঝলমলে উন্মাদনা। চলতি বছর এখন পর্যন্ত সোনার দাম বেড়েছে প্রায় ৪৭ শতাংশ, আর রৌপ্যের দাম লাফিয়ে উঠেছে ৫২ শতাংশেরও বেশি। সম্প্রতি মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জে সোনার দাম ১০ গ্রামে ১,১৮,০০০ সীমা অতিক্রম করেছে, যা দেশে এক নতুন রেকর্ড। ফলে বিনিয়োগকারীরা এখন জানতে চাইছেন — উৎসবের মরসুমে এই উজ্জ্বল ধাতুগুলির দৌড় কি আরও দূর যাবে?
দাম বৃদ্ধির পেছনের প্রধান কারণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, সোনার দামের এই উর্ধ্বগতি কেবল দেশীয় চাহিদা নয়, বরং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অস্থিরতারও প্রতিফলন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসনের নয়া বাণিজ্য নীতি ও উচ্চ আমদানি শুল্ক বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তা বাড়িয়েছে। তাতে ডলার দুর্বল হয়েছে, আর সেই সুযোগে নিরাপদ বিনিয়োগের খোঁজে বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকছেন স্বর্ণের দিকে।
অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের রাজনৈতিক টানাপোড়েন, তেলের দামের ওঠানামা এবং মার্কিন মন্দার আশঙ্কা—সব মিলিয়ে সোনা আবারও “সেফ হেভেন” সম্পদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
দেশীয় বাজারে চাহিদার বিস্ফোরণ
ভারতে সোনা কেবল বিনিয়োগ নয়, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যেরও প্রতীক। দীপাবলি ও ধনতেরাসের সময় সোনা কেনা সৌভাগ্যের নিদর্শন হিসেবে ধরা হয়। এই বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দেশের বড় শহরগুলির পাশাপাশি গ্রামীণ বাজারেও সোনার গয়নার চাহিদা বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ।
আরও পড়ুন: সোনার দাম কেন এত অস্থির, জানিয়ে দিলেন আরবিআই গভর্নর
রৌপ্যের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। শিল্পক্ষেত্রে রৌপ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি ও সৌরশক্তি খাতে চাহিদা বাড়ায় এর দামেও ব্যাপক উত্থান ঘটেছে। পাশাপাশি, অনেকে কম বাজেটের বিকল্প হিসেবে রৌপ্যে বিনিয়োগ করছেন, ফলে বাজারে রুপোর বুলিয়ন ও কয়েনের বিক্রিও বেড়েছে।
আর্থিক বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বর্ণের এই উত্থান মূলত মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা হিসেবে কাজ করছে। রুপির দুর্বলতা, বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে অস্থিরতা এবং শেয়ারবাজারে অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের সোনার দিকে ঠেলে দিয়েছে।
তবে সতর্কবার্তাও দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এত দ্রুত দাম বাড়লে স্বল্পমেয়াদে মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ে, যা হঠাৎ দামে সংশোধন আনতে পারে। তাই উৎসবের উচ্ছ্বাসে অন্ধভাবে বিনিয়োগ না করে ধাপে ধাপে ও দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সোনা কেনার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।
ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সম্প্রতি জানিয়েছে, তারা তাদের স্বর্ণ রিজার্ভ আরও বাড়াচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়িয়েছে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দামের প্রবণতা এখন অনেকাংশে নির্ভর করছে মার্কিন সুদের হারের গতিপথের ওপর। যদি ফেডারেল রিজার্ভ ভবিষ্যতে সুদ কমায়, তবে সোনার দাম আরও চড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন।
সব মিলিয়ে, দীপাবলির আগে ভারতীয় স্বর্ণ বাজার এখন উজ্জ্বলতম পর্যায়ে। গয়না শিল্প থেকে বিনিয়োগকারী পর্যন্ত, সবাই এই ঊর্ধ্বমুখী দামে আশাবাদী। তবে বাজার বিশেষজ্ঞদের মত, “দাম যতই উঠুক, সোনার প্রকৃত মূল্য তার স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তায়।”
অতএব, দীপাবলির আলোয় ঝলমল সোনা ও রৌপ্য শুধু অলঙ্কার নয়, অর্থনৈতিক আত্মবিশ্বাসের প্রতীকও হয়ে উঠেছে। উৎসবের উচ্ছ্বাসে ভারতের বাজার আবারও প্রমাণ করছে — স্বর্ণের প্রতি এই দেশের ভালোবাসা অনন্তকাল অমলিন।
