আজকাল ওয়েবডেস্ক:  আমরা এমন একটি গ্রহে বাস করি যা সূর্যের কার্যকলাপের ওঠানামার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্রমাগত পরিবর্তিত হওয়া এক চৌম্বকীয় ঢালের আড়ালে মোড়া। সাধারণ দিনে এটি প্রায় অদৃশ্য ও শান্তভাবে থাকে। কিন্তু সৌর ঝড়ের সময় এই ঢালটি অস্বাভাবিকভাবে অস্থির হয়ে ওঠে। সম্প্রতি একটি গবেষণা এই প্রশ্ন তুলেছে—পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্র যখন অশান্ত হয়, তখন কি মানুষের হৃদ্‌রোগ বাড়ে?


ব্রাজিলের একদল চিকিৎসক কয়েক বছরের হাসপাতাল তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁরা রোগীর বয়স, লিঙ্গ, এবং হাসপাতালে ভর্তির পর বেঁচে ফেরা বা মৃত্যুর তথ্য খতিয়ে দেখেন। এরপর সেই তথ্যের সঙ্গে প্রতিদিনের মহাকাশ আবহাওয়ার সূচক মিলিয়ে দেখা হয়।


গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন ব্রাজিলের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ-এর গবেষক লুইজ ফেলিপে ক্যাম্পোস দে রেজেন্দে। তাঁর মতে, স্বাস্থ্য রেকর্ড এবং মহাকাশ আবহাওয়ার ডেটা একত্র করার পরই সুস্পষ্ট একটি প্যাটার্ন ধরা পড়ে। তাঁরা প্রথমে বয়সভিত্তিক তুলনা করেন, তারপর কম্পিউটার-ভিত্তিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ফলাফল যাচাই করেন।

আরও পড়ুন: শুকিয়ে যাবে গঙ্গা! হাতে আর কত সময় আছে


প্রশ্ন ছিল সরল: চৌম্বকীয় ক্ষেত্র বেশি অস্থির হলে, হার্ট অ্যাটাকের জন্য হাসপাতালে ভর্তির হার এবং হাসপাতালে মৃত্যুর হার কি আলাদা ধরণ দেখায়? আর এই প্রভাব নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই সমানভাবে কাজ করে কি না?


কারণ-প্রমাণের সম্পর্ক খোঁজা নয়, বরং সম্পর্কিত ঘটনার সময়গত ধারা খুঁজতেই গবেষকরা মনোযোগ দেন। এজন্য তাঁরা আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহৃত প্ল্যানেটারি ইনডেক্স ব্যবহার করেন, যা প্রতিদিনের চৌম্বকীয় কর্মকাণ্ডকে শান্ত, মাঝারি বা অশান্ত বলে শ্রেণিবদ্ধ করে। প্রতিদিনের এই সূচককে হাসপাতালের রোগীসংখ্যার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়।


তাঁরা ক্যালেন্ডারকে তিনটি ভাগে ভাগ করেন—শান্ত দিন, মাঝারি দিন, এবং অশান্ত দিন। এরপর প্রতিটি শ্রেণিতে কতজন হার্ট অ্যাটাক রোগী ভর্তি হয়েছে ও হাসপাতালে মারা গেছে তা গুনে বের করা হয়। একইসঙ্গে এই সংখ্যা লিঙ্গ ও বয়সভিত্তিকভাবে বিশ্লেষণ করা হয়: ৩০ বছরের নিচে, ৩১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, এবং ৬০ বছরের ওপরে।


ফলাফল চমকপ্রদ। যখন সূর্যের ঝড় পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রকে অশান্ত করেছে, তখন নারীদের হার্ট অ্যাটাকের জন্য ভর্তি হওয়ার হার শান্ত দিনের তুলনায় স্পষ্টতই বেশি ছিল। বিশেষ করে মধ্যবয়সী ও প্রবীণ নারীদের মধ্যে এই প্রবণতা পরিষ্কারভাবে দেখা গেছে।


একই বয়সগোষ্ঠীতে অশান্ত দিনে হাসপাতাল-মৃত্যুর হারও শান্ত দিনের তুলনায় বেশি ছিল। অন্যদিকে পুরুষদের মধ্যে মোট ভর্তির সংখ্যা বেশি হলেও, অশান্ত দিনে হার্ট অ্যাটাকের সংখ্যা শান্ত দিনের তুলনায় খুব বেশি বাড়েনি। অর্থাৎ, তুলনামূলক প্রভাব নারীদের ওপরই বেশি ছিল।


গবেষক রেজেন্দে বলেন, “পুরুষদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হলেও, যখন আমরা আপেক্ষিক হার দেখি, দেখা যায় নারীদের ক্ষেত্রে অশান্ত চৌম্বকীয় অবস্থায় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি শান্ত দিনের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।”


তিনি আরও যোগ করেন, “৩১ থেকে ৬০ বছর বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে এই হার শান্ত দিনের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি। আমাদের ফলাফল ইঙ্গিত দেয় যে নারীরা চৌম্বকীয় অবস্থার প্রতি বেশি সংবেদনশীল।”


গবেষকরা জোর দিয়ে বলেছেন, এটি সরাসরি কারণ-প্রমাণের গবেষণা নয়। তবে মহাকাশ আবহাওয়া ও মানুষের স্বাস্থ্যের মধ্যে এক সূক্ষ্ম সম্পর্ক রয়েছে, যা ভবিষ্যতে চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।