আজকাল ওয়েবডেস্ক: তুরস্কের ইস্তানবুলে গত শনিবার পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের শান্তি আলোচনায় কোনও রফাসূত্র মেলেনি। এরপরেই পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফ উদ্ভট অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর দাবি, পাকিস্তানে সন্ত্রাস ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য নয়াদিল্লির হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে কাবুল। এর পাশাপিশা আসিফের হুমকি, ইসলামাবাদে হামলা চালালে ‘৫০ গুণ শক্তিশালী’ পাল্টা উত্তর দেওয়া হবে।
জিও নিউজের প্রাইমটাইম অনুষ্ঠান ‘আজ শাহজেব খানজাদা কে সাথ’-এ এই মন্তব্য করেছেন তিনি। অনুষ্ঠানে তিনি শান্তি চুক্তি থেকে বারবার পিছিয়ে আসার জন্য আফগান আলোচকদের নিন্দা করেছেন। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনের প্রতিবেদন অনুসারে আসিফের অভিযোগ, “গত চার দিনে অথবা গত সপ্তাহে যখনই আমরা কোনও চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছি, আলোচকরা সেই বিষয়ে কাবুলে রিপোর্ট করার পরেই, সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করা হয়েছিল এবং চুক্তিটি প্রত্যাহার করা হয়েছিল।” তাঁর দাবি, “আলোচনা ভেস্তে দেওয়ার প্রচেষ্টা করা হয়েছে।”
কাবুল এর আগে ইসলামাবাদের এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছিল। তবুও পাকিস্তানি মন্ত্রী আফগান আলোচকদের সহযোগিতামূলক আচরণের প্রশংসা করেছেন এবং কাবুল নেতৃত্বের দিকে অভিযোগের তির ছুঁড়েছেন। এর পরেই তাঁর অভিযোগ, কাবুল নয়াদিল্লি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। তিনি বলেন, “আমি তাদের প্রতিনিধিদলের প্রশংসা করব, কিন্তু কাবুলের যারা কৌশল অবলম্বন করছেন তারা দিল্লি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছেন।”
আসিফ দাবি করেছেন, “ভারত পশ্চিম সীমান্তে পরাজয়ের ক্ষতিপূরণ কাবুলের মাধ্যমে করছে। সেখানকার (আফগানিস্তানে) জুন্টার কয়েকজন ভারত সফর করেছেন এবং তাদের মন্দির পরিদর্শন করেছেন। ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে একটি ছোট যুদ্ধে জড়াতে চায়। তার জন্য তারা কাবুলকে ব্যবহার করছে।”
আরও পড়ুন: স্রেফ হাসার জন্য চাকরি খোয়াতে হচ্ছিল এক কর্মীকে! আসল ঘটনা জানাতেই চক্ষু চড়কগাছ সবার
আফগানিস্তানের হুমকি এবং ইসলামাবাদের উপর সম্ভাব্য আক্রমণের বিষয়ে আসিফ আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া নেওয়া হবে বলে সতর্ক করে দেন। তিনি বলেন, “যদি আফগানিস্তান ইসলামাবাদের দিকে তাকায়, আমরা তাদের চোখ উপড়ে ফেলব। তারা সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করতে পারে, এবং তারা ইতিমধ্যেই করছে। গত চার বছর ধরে, তারা সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে আসছে।” তিনি আরও বলেন, “পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদের জন্য কাবুল দায়ী, এতে কোনও সন্দেহ নেই। কাবুল দিল্লির হাতিয়ার। ঈশ্বর না করুন, যদি তারা ইসলামাবাদে আক্রমণ করতে চায় তাহলে আমরা উপযুক্ত জবাব দেব। ৫০ গুণ শক্তিশালী জবাব দেব।”
আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ ইয়াকুব এর আগে পাকিস্তানের অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন এবং অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করেছিলেন। দাবি করেছিলেন যে, তারা একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়।
গত শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ইস্তাম্বুলে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে দ্বিতীয় দফা শান্তি আলোচনা শুরু হয়। কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতাকারীদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া এই শান্তি আলোচনা ভেস্তে যায়। এর কারণ হিসেবে পাকিস্তানের প্রকাশ্য স্বীকারোক্তিকেই দায়ী করা হয়েছে। বৈঠকে পাকিস্তান স্বীকার করে যে, তাদের ভূখণ্ড থেকে ড্রোন হামলার অনুমতি দেওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তি রয়েছে। পাকিস্তানি আধাকারিকরা জোর দিয়ে বলেছেন যে এই চুক্তি ভঙ্গ করা যাবে না। এই বিবৃতি আফগানদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয়।
আফগানিস্তানের তরফ থেকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে যে, আফগান ভবিষ্যতে পাকিস্তানের যে কোনও হামলার উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে এবং সতর্ক করা হয়েছে যে যদি আফগান ভূখণ্ডে বোমা হামলা করা হয়, তাহলে ইসলামাবাদকে নিশানা করা হবে।
