আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুরে’ বিধ্বংসী হামলায় পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুরে অবস্থিত জইশ-ই-মহম্মদ (জেইএম)-এর সদর দপ্তর মারকাজ সুবহানাল্লাহ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু জঙ্গি কার্যকলাপ তো পাকিস্তানের বন্ধ হওয়ার নয়। যে কারণে সন্ত্রাসবাদী এই সংগঠনটি এবার কৌশল পাল্টাতে শুরু করেছে। এবার প্রথমবারের মতো মহিলাদের জন্য আলাদা একটি শাখা গঠনের ঘোষণা করল জইশ। জানা গিয়েছে, এই নয়া সংগঠনের নাম ‘জামাত-উল-মুমিনাত’। জেইএম প্রধান মৌলানা মাসুদ আজহারের নামে প্রকাশিত এক চিঠির মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত জনসমক্ষে আনা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বাহাওয়ালপুরে নতুন এই মহিলা শাখার নিয়োগ কার্যক্রম ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। গোটা সংগঠনের নেতৃত্বে থাকবেন মাসুদ আজহারের বোন সাদিয়া আজহার, যার স্বামী ইউসুফ আজহার ৭ মে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুরের’ হামলায় নিহত হন। জানা গিয়েছে, জইশ-ই-মহম্মদের এই মহিলা সংগঠনটি মূলত মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ অর্থাৎ প্রোপাগান্ডা ও স্থানীয় পর্যায়ের নিয়োগ কার্যক্রম চালাবে। বাহাওয়ালপুর, করাচি, মুজাফফরাবাদ, কোটলি, হারিপুর ও মানসেহরার বিভিন্ন শিক্ষা কেন্দ্রে অধ্যয়নরত দরিদ্র মুসলিম মহিলাদের এবং সংগঠনের সদস্যদের স্ত্রী-দের মধ্য থেকে সদস্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, ‘জামাত-উল-মুমিনাত’ বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ এবং কিছু মাদ্রাসার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। অনলাইন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সংগঠনটির কার্যক্রম ইতিমধ্যেই জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তর প্রদেশ ও দক্ষিণ ভারতের কিছু এলাকায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর জবাবে নিজেদের সংগঠন পুনর্গঠনের কৌশল হিসেবেই জইশ মহিলাদের অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রের দাবি।
মাসুদ আজহার ও তার ভাই তালহা আল-সইফ যৌথভাবে মহিলাদের এই শাখা গঠনের অনুমোদন দেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, আইএসআইএস, বোকো হারাম, হামাস এবং এলটিটিই-র মতো সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর ইতিহাসে মহিলা আত্মঘাতী যোদ্ধার ব্যবহার নতুন নয়। তবে জেইএম, লস্কর-ই-তইবা এবং হিজবুল মুজাহিদিনের মতো সংগঠনগুলো এতদিন পর্যন্ত মহিলাদের সশস্ত্র অভিযানে অংশ নেওয়া নিষিদ্ধ করেছিল। তবে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুরের’ পর জইশের এই নতুন পদক্ষেপ তাদের কার্যক্রমে এক বড় ধরনের কৌশলগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
উল্লেখ্য, পহেলগাঁও হামলার পর পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে 'অপারেশন সিঁদুর' অভিয়ান চালিয়েছিল ভারতীয় বায়ুসেনা। সেই হামলায় পাক মদতপুষ্ট বহু সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছিল। নিহত হয়েছিল শতাধিক জঙ্গি। নিহতদের মধ্যে ছিল জইশ-ই-মহম্মদের (জেইএম) প্রধান মাসুদ আজহারের পরিবারের সদস্যরাও। নয়াদিল্লির এই দাবি স্বীকার করে খোদ জইশ কমান্ডারও। জানানো হয়, বাহাওয়ালপুরে হামলায় সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর শীর্ষ কমান্ডার মাসুদ আজহারের পরিবার ‘ছিন্নভিন্ন’ হয়ে গিয়েছে।
ইন্টারনেটে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে, জইশ-ই-মহম্মদের কমান্ডার মাসুদ ইলিয়াস কাশ্মীরিকে ব্যাখ্যা করতে শোনা গিয়েছে যে, কীভাবে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী তাদের (জঙ্গিদের) আস্তানায় প্রবেশ করে আক্রমণ চালিয়েছিল। ভাইরাল ক্লিপে কাশ্মীরি উর্দুতে মাসুদ ইলিয়াস জানায়, ‘আমরা এই দেশের সীমান্ত রক্ষার জন্য দিল্লি, কাবুল এবং কান্দাহারের সঙ্গে লড়াই করেছি। সবকিছু ত্যাগ করার পর, ৭ মে, বাহাওয়ালপুরে ভারতীয় বাহিনী মৌলানা মাসুদ আজহারের পরিবারকে টুকরো টুকরো করে ফেলেছিল।’
