আজকাল ওয়েবডেস্ক: পরপর ভূমিকম্পে সোমবার কেঁপে উঠেছিল পূর্ব আফগানিস্তান। ভূমিকম্পে ৮০০ জনের বেশি নিহত এবং প্রায় ২৮০০ জন আহত হয়েছেন। আফগানিস্তানকে ইতিমধ্যেই জরুরি সহায়তা পাঠাল ভারত। সোমবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে জানানো হয়েছে, ‘ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত আফগানিস্তানে মানবিক সাহায্য পাঠাল ভারত।’ পোস্টের সঙ্গে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে চাল ও খাদ্যসামগ্রীতে ভরা ট্রাক, যা আফগানিস্তানের পাশে থাকার ভারতের অঙ্গীকারকে প্রতিফলিত করছে। সোমবার সকালে রিখটার স্কেলে ৬.৩ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে আফগানিস্তান। ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি (NCS) জানিয়েছে, পাকিস্তানসহ আশপাশের অঞ্চলেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। এরপর ৪ থেকে ৫ মাত্রার একাধিক আফটারশক আঘাত হানে। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা (UNOCHA) জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল আফগানিস্তানের নানগারহার প্রদেশের কাবুল সীমান্তবর্তী কামা জেলায়।

প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী কুনার, লাগমান, নানগারহার ও নুরিস্তান প্রদেশে অন্তত ৮০০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং প্রায় ১২,০০০ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রী মাওলাভি আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে কথা বলে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। তিনি জানান, ভারত ইতিমধ্যেই কাবুলে ১,০০০ পারিবারিক তাঁবু পৌঁছে দিয়েছে। পাশাপাশি ভারতীয় সরকার কাবুল থেকে কুনারে ১৫ টন খাদ্যসামগ্রী পাঠিয়েছে ইতিমধ্যেই। মঙ্গলবার থেকে ভারী ত্রাণ সামগ্রী ভারত থেকে সরাসরি পাঠানো হবে। সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার তথ্য অনুযায়ী, আফগান সরকারের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদের বরাতে জানা গেছে, অন্তত ৮১২ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ২,৮১৭ জন আহত হয়েছেন।

আরও পড়ুন: ২০০ বছর আগে এই দেশের নাগরিকরা ছিলেন সকলেই বামণ, এখন বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘকায়, দুই শতকে কী এমন পাল্টে গেল?

জয়শঙ্কর এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘আজ আফগান বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছি। ভারত কাবুলে ১,০০০ পারিবারিক তাঁবু পাঠিয়েছে। ১৫ টন খাদ্যসামগ্রী ইতিমধ্যেই কুনারে পাঠানো হচ্ছে। মঙ্গলবার থেকে ভারত থেকে আরও ত্রাণ যাবে। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। এই কঠিন সময়ে আফগানিস্তানের পাশে আছে ভারত।’ উল্লেখ্য, ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে রবিবার মধ্যরাতে। স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে এই কম্পন আঘাত হানে কুনার প্রদেশের একাধিক জনপদে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক সমীক্ষা সংস্থা (USGS) জানায়, ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৬.০ এবং এর উৎপত্তিস্থল ছিল নাঙ্গারহার প্রদেশের জালালাবাদ শহর থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে।

ভূমিকম্পটির গভীরতা ছিল মাত্র ৮ কিলোমিটার, যা তুলনামূলকভাবে অগভীর হওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কম্পনে কুনার প্রদেশের তিনটি গ্রাম সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। বাখতারের প্রতিবেদন অনুসারে, ভূমিকম্পে কুনারের নুরগাল, চৌকে এবং ওয়াতাপুর জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শক্তিশালী ভূমিকম্পের ফলে ধ্বংসস্তূপ এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার জন্য উদ্ধার অভিযান চলছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মুখপাত্র শরাফত জামান  এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, আহত এবং নিহতদের সংখ্যা বেশি। তবে এলাকা দুর্যোগপূর্ণ এবং দুর্গম, তাই ঘটনাস্থলে পৌঁছতে সময় লেগেছে।

?ref_src=twsrc%5Etfw">September 1, 2025

কুনার ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নুর গুল, সোকি, ওয়াতপুর, মানোগি এবং চাপাদারে জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও বহু মানুষ আটকে রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। উদ্ধারকাজ অব্যাহত রয়েছে। আঘাতপ্রাপ্ত এলাকার মধ্যে নাঙ্গারহার প্রদেশের জালালাবাদ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তান সীমান্তের কাছে অবস্থিত এই শহরটি প্রায় ৩ লক্ষ মানুষের আবাসস্থল। বাণিজ্যিক কারণে শহরটির গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি, তবে শহর ও এর আশপাশের অধিকাংশ ভবন নিম্নমানের ইট ও কংক্রিট দিয়ে নির্মিত। গ্রামীণ এলাকাগুলোতে এখনো কাদামাটি ও কাঠের ঘরবাড়ি বহুল প্রচলিত। ফলে ধ্বংসযজ্ঞ আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। শহরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত কাবুল নদীর দুপাশে বিস্তৃত কৃষিজমি ও ফলচাষও ক্ষতির শিকার হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।