আজকাল ওয়েবডেস্ক: কানাডা এবছর ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের ভিসার প্রায় ৮০% আবেদন বাতিল করেছে, যা গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। কানাডার ইমিগ্রেশন, রিফিউজিস অ্যান্ড সিটিজেনশিপ কানাডা–এর তথ্যে দেখা যায়, এশিয়া ও আফ্রিকার শিক্ষার্থীরাও একই সমস্যার মুখে পড়ছেন।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৪ সালে কানাডায় ভর্তি হয়েছিল মাত্র ১.৮৮ লাখ নতুন ভারতীয় ছাত্রছাত্রী, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় অনেক কম। শিক্ষার্থীদের পছন্দেও পরিবর্তন এসেছে। জার্মানি এখন ভারতের তরুণদের শীর্ষ গন্তব্য, যেখানে ৩১% শিক্ষার্থী যাচ্ছে। অন্যদিকে, কানাডার প্রতি আগ্রহ নেমে এসেছে ২০২২ সালের ১৮% থেকে ২০২৪ সালে মাত্র ৯%-এ।
আবাসন সংকট, অবকাঠামোগত চাপ ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে অটোয়া ভিসার নিয়ম কঠোর করেছে। এখন শিক্ষার্থীদের আরও শক্তিশালী আর্থিক নথি, বিস্তারিত স্টাডি প্ল্যান ও ভাষা পরীক্ষার ফল জমা দিতে হচ্ছে। কাজের সুযোগও সীমিত করা হয়েছে, কলেজ গ্র্যাজুয়েটদের জন্য ভাষার শর্ত কড়াকড়ি হয়েছে এবং কিছু কর্মসংস্থানের সুযোগ বাতিল হয়েছে।
আরও পড়ুন: জট কাটল চিংড়িঘাটা মেট্রোর, যান নিয়ন্ত্রণ কী ভাবে? জেনে নিন এখনই
২০২৫ সালে কানাডা মাত্র ৪.৩৭ লাখ স্টাডি পারমিট দেবে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১০% কম। এর মধ্যে ৭৩ হাজার পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট, ২.৪৩ লাখ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ও প্রায় ১.২০ লাখ স্কুলশিক্ষার্থীর জন্য নির্ধারিত। দ্রুত ভিসা অনুমোদনের জন্য চালু থাকা স্টুডেন্ট ডিরেক্ট স্ট্রিম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ভিসা বাতিলের এই ঢেউ শুধু কাগজপত্রের সমস্যা নয়, বরং তরুণদের স্বপ্নকে ভেঙে দিচ্ছে। অনেক অভিভাবক আবেদন ফি, পরীক্ষা ও অন্যান্য খরচে বিপুল অর্থ ব্যয় করেও হতাশ হচ্ছেন। অনেক শিক্ষার্থী কানাডাকে বেছে নিয়েছিল স্থায়ী বসবাসের পথ হিসেবে, সেটিও এখন অনিশ্চিত।
অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও আর্থিক চাপে পড়েছে। বিদেশি ছাত্রদের টিউশন ফি-র ওপর নির্ভরশীল ছোট কলেজগুলো হয় বন্ধ হয়ে যেতে পারে, নয়তো বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত হতে বাধ্য হবে।
কানাডা দরজা বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে জার্মানি নতুন ভরসার জায়গা হয়ে উঠছে। সরকারি তথ্য বলছে, ভারতীয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০২৩ সালের ৪৯,৫০০ থেকে ২০২৫ সালে প্রায় ৬০,০০০–এ পৌঁছেছে। কম খরচে উচ্চমানের শিক্ষা, ইংরেজি ভাষায় বাড়তে থাকা কোর্স এবং সুস্পষ্ট ক্যারিয়ার সুযোগ শিক্ষার্থীদের টানছে জার্মানির দিকে।
প্রযুক্তি, ম্যানেজমেন্ট ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো ক্ষেত্রগুলোতে জার্মানি উত্তর আমেরিকার তুলনায় কম খরচে মানসম্পন্ন শিক্ষা দিচ্ছে। ফ্রান্স, ফিনল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি কোনও দেশের দরজা বন্ধ করার বিষয় নয়, বরং শিক্ষার্থীদের চাহিদার পরিবর্তন। ভারতীয় তরুণরা এখন এমন দেশ খুঁজছে, যেখানে পড়াশোনার পর কর্মসংস্থানের সুযোগ ও দীর্ঘমেয়াদি কেরিয়ারের পথ পরিষ্কার।
