রিয়া পাত্র
কোটা বিরোধী আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্ব। পথে নামছেন ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক, সাধারণ মানুষ। ক্রমে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। একই সঙ্গে ঘনীভূত হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট। শুক্র-শনিবারের পর রবিবার সকাল থেকে উত্তাল ঢাকা-সহ দেশের নানা প্রান্ত। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী রবিবার সন্ধে থেকেই ফের অনির্দিষ্টকালের জন্য জারি হচ্ছে কারফিউ। সমাজ মাধ্যমে একে একে খবর আসছে পাশের দেশের পরিস্থিতির। এসবের মাঝেই সামনে এসেছে আরও একটি ভিডিও। 

ঢাকার এক যুবক সমাজমাধ্যমে ওই ভিডিও পোস্ট করেছেন। তাতে দেখা গিয়েছে, রাস্তায় বসে গান গাইছেন একদল পড়ুয়া। সুর মিলিয়ে গাইছেন-
'এখনও অনেক পথ হাঁটা বাকি হয়তো
এখানেই সব শেষ নয় জেনো বন্ধু
আমাদের চোখে নতুন ভোরের স্বপ্ন
রাত্রির পথ হোক না যত বন্ধুর।'

সকলে গাইছেন। গলা মিলিয়ে। নতুন ভোরের স্বপ্ন নিয়ে।



আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থানে গান সুর বেঁধেছে সবসময়। দেশ কিংবা বিদেশ, নানা সময়ের যে কোনও আন্দোলনের দিকে তাকালে স্পষ্ট সেকথা। আর কখনও কখনও এক দেশের শিল্পীর গান হয়ে ওঠে অন্য দেশের আন্দোলনের হাতিয়ার। খুব বেশি দূরে না গেলেও, সাম্প্রতিক সময়ের যাদবপুরের 'হোক কলরব' আন্দোলনের কথা ধরা যাক। আন্দোলনে পড়ুয়ারা চিৎকার করে গেয়েছিলেন,

'হোক কলরব ফুলগুলো সব
নীল না হয়ে লাল হল ক্যান' 
বাংলাদেশের শিল্পী অর্ণবের গান হয়ে গিয়েছিল যাদবপুরের গান। সৃজন তখন যাদবপুরের পড়ুয়া। স্নাতকস্তরের পাঠ নিচ্ছেন। সেই সৃজনের গান অর্ণবের দেশের রাস্তায় বসে গাইছেন একদল পড়ুয়া। চিৎকার করে বলছেন, 'এখানেই সব শেষ নয় জেনো বন্ধু... '


সৃজন ভট্টাচার্য। এই লোকসভা ভোটে বামেদের প্রার্থী হয়েছিলেন যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে। জানালেন, এই গান তিনি লেখেন স্কুলে পড়ার সময়। ২০১০ সাল। সৃজন তখন সবে একাদশ শ্রেণিতে। বাংলায় তখন টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতি। বাম জমানার একেবারে শেষ প্রান্তে 'বামপন্থার পক্ষে দাঁড়িয়ে একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া, যেভাবে সমাজ রাজনীতি বুঝতে শিখছি তখন, তা থেকেই এই গান লিখেছিলাম। আরও ভাল বলতে গেলে, বামপন্থার উপর আক্রমণের সামনে দাঁড়িয়ে বামপন্থার প্রতি আস্থা ঘোষণা করার বহিঃপ্রকাশ ছিল এই গান। আমি ভাবিনি কখনও এই গান পরে কেউ গাইতে পারে। তবে পরে যত দিন গিয়েছে, মানুষ এই গান তত ব্যবহার করেছেন। বাংলাদেশের ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়েও এই গান আগেও ব্যবহার করেছেন।'

বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়েই বা কী ভাবছেন বাম নেতা? বললেন, 'আমার গান ব্যবহার নিয়ে খুশির কিছু নেই এখন। এই পরিবেশ আনন্দের নয়। পরিস্থিতি দেখে আমি উদ্বিগ্ন। ব্যক্তিগত ভাবে আমার পরিবারের শিকড় রয়েছে পূর্ববঙ্গেই। বাংলাদেশের মানুষ, ইতিহাস, তাঁদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সবকিছুর সঙ্গেই আমি একাত্ম বোধ করি সবসময়। যেভাবে বাংলাদেশকে দেখছি গত কয়েকদিন ধরে, তাতে ভাল লাগছে না। আমরা কেউই মৌলবাদের পক্ষে নই। আমরা কেউই চাই না সাম্প্রদায়িক শক্তি কোনোভাবে প্রশ্র‍য় পাক। কিন্তু সরকার যদি ছাত্রদের দাবিদাওয়ার প্রতি সহনশীল না হয়, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উপর এই ধরনের আক্রমণ নামিয়ে আনে, সেটাও কাম্য নয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন পীড়া দিচ্ছে। এই আন্দোলনকারীদের একটা বড় অংশ আমার প্রজন্মের। তাঁরা অনেকেই প্রগতির ভাবনায় ভর করে, মুক্তিযুদ্ধের নির্যাসকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন। তাঁরাই কেউ কেউ রাস্তায় নেমে ওই গান গাইছেন। মৌলবাদীরা বিচ্ছিন্ন হোক, প্রগতির পথ, গণতন্ত্রের পথ প্রশস্ত হোক। শান্তি ফিরুক বাংলাদেশে। আমার সংহতি রইল।'