আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের রেল ব্যবস্থা বর্তমানে আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। এখন এটি কেবল ট্রেনের গতি বা আধুনিক প্রযুক্তিতে সীমাবদ্ধ নেই। বরং যাত্রীর নিরাপত্তা, বিশেষত মহিলাদের নিরাপত্তার বিষয়টি যেভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে এখানে, তা এক গভীর সামাজিক অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরছে। এই অগ্রগতির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এক দৃষ্টান্ত উঠে এসেছে সম্প্রতি পূরভি জৈন নামের এক তরুণীর অভিজ্ঞতায়। খবর অনুযায়ী তিনি মুম্বই থেকে সুরাট যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে তিনি একা ট্রেনে ভ্রমণ করছিলেন। গভীর রাতের ট্রেনে তিনি একা ভ্রমণ করছিলেন বলে খবর পাওয়া গিয়েছে৷ 

রাত প্রায় ১১টা। ট্রেন তখন চলমান। আর পূরভি চুপচাপ তাঁর নির্ধারিত আসনে বসে ছিলেন। খবর অনুযায়ী ঠিক তখনই তাঁর কামরায় প্রবেশ করেন দুই মহিলা পুলিশ অফিসার। তাঁরা এসে সরাসরি জিজ্ঞেস করেন, 'সিট ৩৮, পূরভি?' এহেন আচরণে প্রাথমিকভাবে একটু চমকে যান পূরভি। এরপর যুবতী ওই মহিলা পুলিশকর্মীকে জানান যে হ্যাঁ তিনিই পূরভি। 

এরপর যা ঘটে তাতে তিনি অত্যন্ত অবাক হয়ে যান। ওই দুই মহিলা পুলিশকর্মী যুবতীর সঙ্গে অত্যন্ত যত্ন ও দায়িত্ব নিয়ে কথা বলেন। দুই অফিসার ঘটনাস্থলে খানিক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখেন পূরভি ঠিক আছেন কিনা। এমনকি কোনও অসুবিধায় পড়েছেন কি না, বা কোনও কিছুর সাহায্য লাগবে কিনা জানতে চান। এখানেই শেষ নয়। এরপর ওই দুই মহিলা অফিসার তাঁকে একটি জরুরি হেল্পলাইন নম্বর দিয়ে বলেন, কোনও সময় যদি তিনি নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করেন, তবে যেন দ্রুত এই নম্বরে ফোন করেন।

এই ঘটনাটি পূরভির কাছে এক নতুন অভিজ্ঞতা ছিল। তিনি উল্লেখ করেন, এত বছর ধরে ট্রেনে একা ভ্রমণ করলেও এমন আন্তরিক নজরদারি আগে কখনও দেখেননি তিনি। তাঁর পাশের আসনে থাকা এক বয়স্ক দম্পতিও এ ঘটনায় খুশি হয়ে জানান, তাঁদের নাতনিও প্রায়শই একা ভ্রমণ করে। বর্তমানে এই ধরণের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থায় তাঁরা আশ্বস্ত বোধ করছেন।

পূরভি তাঁর অভিজ্ঞতার কথা একটি পোস্টে শেয়ার করেন এবং লেখেন, কীভাবে এই ছোট্ট ঘটনা তাঁকে দেশের সামগ্রিক অগ্রগতি নিয়ে ভাবতে বাধ্য করেছে। তিনি বলেন, আজ ভারতীয় রেল কেবল বন্দে ভারত বা তাৎক্ষণিক টিকিট বুকিংয়ের মতো প্রযুক্তিগত উন্নয়নেই সীমাবদ্ধ নেই। বরং যাত্রীদের প্রতি সহানুভূতি ও সুরক্ষা প্রদানে আরও বেশি মানবিক হয়ে উঠেছে। এমনকি তৎকাল টিকিট বুকিং প্রক্রিয়াটিও এখন অনেক মসৃণ ও দ্রুত হয়েছে।

তিনি আরও লিখেছেন, ভারত এখনও উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে তুলনায় অনেক পথ পেরোতে বাকি আছে, তবে এমন ছোট ছোট পদক্ষেপগুলো প্রমাণ করে যে, পরিবর্তন সত্যিই ঘটছে। একা মহিলা যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ডিজিটাল ব্যবস্থাকে আরও সহজ ও সহায়ক করে তোলা- এসবই এক নতুন ভারতের ছবি তুলে ধরছে। এখানে মানুষ কেবল যাত্রা করছে না, বরং নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে চলছে। 

আরও পড়ুনঃ প্রকৃতি উপভোগ করতে চাওয়াই কি হল কাল? পিকনিক করতে গিয়ে এ কী ভয়াবহ পরিণতি দুই যুবকের! জানুন...

যুবতীর পোস্ট প্রকাশের পর তা দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়। বহু মানুষ মন্তব্য করে এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন। অনেকে তাঁদের নিজের বা পরিবারের কারও অনুরূপ অভিজ্ঞতার কথাও শেয়ার করেন। কেউ লেখেন, 'আমার মায়ের সঙ্গেও এমন হয়েছে, এমনকি পুলিশ অফিসাররা তাঁকে ট্রেন বদলাতেও সাহায্য করেছেন।' আরেকজন মন্তব্য করে বলেন, 'এই ধরণের গল্প আমাদের আরও শুনতে হবে- এগুলোই আমাদের আশা দেয়।' 

কেউ আবার লিখেছেন, 'এটা কোনও এককালীন ঘটনা নয়,  এটা বাস্তব, চিন্তাশীল উন্নয়ন।' এই অভিজ্ঞতা ও প্রতিক্রিয়াগুলোর মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, ভারতের রেল শুধু গন্তব্যে পৌঁছানোর মাধ্যম নয়, বরং একজন যাত্রীর নিরাপত্তা, সম্মান ও অনুভূতির সহযাত্রী হয়ে উঠছে। 'দেশ হয়তো রাতারাতি বদলে যাবে না, তবে এমন এক একটি পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।' মন্তব্য করে বলেন এক ব্যবহারকারী।