আজকাল ওয়েবডেস্ক: রিলায়েন্স-নিযন্ত্রিত বন্যপ্রাণী সংস্থা ‘ভান্তারা’ এবং গুজরাট বন দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে ১৫ জুলাই বান্নি ঘাসভূমিতে ২০টি চিতল হরিণ ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। গুজরাটের বান্নি ঘাসভূমিতে চিতল হরিণ ছাড়ার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে পরিবেশবিদদের মধ্যে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ১৫ জুলাই রিলায়েন্সের মালিকানাধীন বন্যপ্রাণী সংস্থা ভান্তারা ও গুজরাট বন দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে ২০টি চিতল হরিণ একটি নির্ধারিত ৭০ হেক্টর এলাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়। ভান্তারা এই কর্মসূচিকে ‘জৈববৈচিত্র্য সংরক্ষণের বড় পদক্ষেপ’ বলে প্রচার করলেও, বিশেষজ্ঞরা এই পদক্ষেপের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি, পরিবেশগত প্রভাব ও নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। 


বান্নি একটি আধা-শুষ্ক, মরুপ্রধান ঘাসভূমি অঞ্চল, যার বিস্তৃতি প্রায় ২,৬০০ বর্গকিলোমিটার। এখানে মূলত নীলগাই, চিনকারা ও কৃষ্ণসার হরিণের মতো স্থানীয় তৃণভোজীরা বসবাস করে। বন দপ্তরের দাবি, চিতল হরিণ বাস্তুতন্ত্রে ভারসাম্য রক্ষা করে ও স্থানীয় উদ্ভিদবৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধ করে। কিন্তু বাস্তবে চিতল কখনোই এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক বাসিন্দা ছিল না। পরিবেশবিদ ওভি থোরাত, যিনি ২০১৩ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বান্নিতে কাজ করেছেন, বলেন, “চিতল হরিণ সারাবছর জল ও সবুজ চারণভূমির উপর নির্ভরশীল। ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের দাবদাহে চিতল টিকবে না। তা ছাড়া বাইরে থেকে একটি নতুন তৃণভোজী এনে ছেড়ে দিলে সেটি স্থানীয় গাছ-গাছালির গঠন বদলে দিতে পারে, যা ‘ক্যাসকেড এফেক্ট’-এর জন্ম দেয়।”

বিজ্ঞানীরা বলছেন, বান্নিতে চিতল বেঁচে থাকলেও তা স্থানীয় প্রজাতির উপর প্রতিযোগিতা তৈরি করবে। উদাহরণস্বরূপ, আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে চিতল এখন একটি ‘অ্যাক্টিভ ইনভেসিভ স্পিসিজ’ বা আক্রমণাত্মক বহিরাগত প্রজাতি হয়ে উঠেছে, যাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে বহু জায়গায় মারার অনুমতি দিতে হচ্ছে। আরও আশঙ্কাজনক হলো, বান্নিতে আফ্রিকান চিতাবাঘ আনার প্রস্তুতি। ভান্তারা ও বন দপ্তর একে সরাসরি স্বীকার না করলেও, গুজরাটের মুখ্য বন সংরক্ষক জয়পাল সিং ১৬ জুলাই জানান, “বান্নির ৬০০ হেক্টর এলাকা চিতার জন্য প্রস্তুত। চিতল ও সাম্বার হরিণের প্রজনন চলছে।” এটি মধ্যপ্রদেশের কুনো অভয়ারণ্যের ছককেই অনুসরণ করছে, যেখানে আফ্রিকান চিতাবাঘ আনতে চিতল প্রাকৃতিক শিকার হিসেবে ছাড়া হয়।

আরও পড়ুন: মিলনের আগে প্রস্রাব খাওয়ানোর রীতি! প্রস্রাবের স্বাদেই না কি লুকিয়ে কামনার বার্তা! কারা করে এটা?

এই পরিস্থিতিতে আদিবাসী মালধারী সম্প্রদায়ও উদ্বিগ্ন। বান্নির ঘাসভূমি তাদের পশু পালন ও জীবন-জীবিকার মূল ভরসা। বন দপ্তরের এই সিদ্ধান্তে তাদের মতামত নেওয়া হয়নি। বন দপ্তর ও ভান্তারার বক্তব্য, “এটি একটি বৈজ্ঞানিক মূল্যায়নের উপর ভিত্তি করে পুনর্বাসন কর্মসূচি। চিতল পরিবেশে ভারসাম্য বজায় রাখে ও উদ্ভিদবৈচিত্র্যে সাহায্য করে।” কিন্তু পরিবেশবিদরা বলছেন, এই যুক্তি সাধারণীকরণ করা যায় না—বাস্তুতন্ত্রভেদে ফলাফল ভিন্ন হয়। বিরোধিতা আরও বেড়েছে কারণ ধারণা করা হচ্ছে, এটি ভবিষ্যতে বান্নিতে আফ্রিকান চিতাবাঘ আনার প্রস্তুতি। গত বছরের অক্টোবরেই মধ্যপ্রদেশের কুনো অভয়ারণ্যে চিতাবাঘের জন্য চিতল এনে ছাড়া হয়েছিল। এখন বান্নির ৬০০ হেক্টর এলাকায় চিতার জন্য ‘ব্রিডিং সেন্টার’ তৈরি হয়েছে এবং চিতলের প্রজননও চলছে। 

এই পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন পরিবেশবিদরা—এটি কি বাস্তব পুনর্বাসন, না কি একটি ‘উচ্চ ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত চিড়িয়াখানা’? বৈজ্ঞানিক যুক্তি, বাস্তুতান্ত্রিক সামঞ্জস্য ও স্থানীয় মানুষের অধিকারের কথা উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে কি?