আজকাল ওয়েবডেস্ক: সাদাসিধে গৃহকর্তা। পরিবার, পরিজন, কাজ নিয়েই কাটত তাঁর দিন। সাধারণ এক প্রৌঢ়ের জীবনে হঠাৎ ঘনাল দুর্ভোগের কালো মেঘ। না, নিজের দোষে নয়। পুলিশের ভুলে। অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে গেল সেই সাদাসিধে মানুষের নাম। ভুল প্রমাণিত হয়েও স্বস্তি পেলেন না তিনি! সেই পুলিশের গাফিলতিতে জীবনের ১৭ বছর গেল জলে। অপরাধের ঘটনার মামলায় গত ১৭ বছর অভিযুক্তের তালিকায় পড়ে রইল তাঁর নাম।
রাজবীর সিং যাদব। কখনই তাঁর জেলে যাওয়ার কথা ছিল না। কোনও অপরাধ তিনি করেননি। কিন্তু পুলিশের নথিতে ছোট্ট বানান ভুলেই রাজবীরের জীবনে চাঞ্চল্যকর মোড় এল। অপরাধের মামলায় ফেঁসে গেলেন তিনি। দুই দশক কাটালেন অপরাধী হিসেবে।
জানা গেছে, পুলিশ আসলে খুঁজছিলেন রামবীর সিং যাদবকে। গ্যাংস্টারের হামলায় ঘটনায় রামবীরের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছিল পুলিশ। নামের বানানে ছোট্ট ভুলেই ফেঁসে যান রাজবীর। পুলিশ রামবীরের দাদাকে তুলে নিয়ে যায়। পুলিশি হেফাজতে ২২ দিন কাটিয়েছিলেন। আর ১৭ বছর পর নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারেন তিনি।
গত শনিবার অবশেষে আদালতের তরফে রাজবীর সিং যাদবকে নির্দোষ প্রমাণ করা হয়। বিচারপতি এই ঘটনায় পুলিশকে তীব্র ভৎর্সনা করেন। পুলিশের গাফিলতিতেই ৫৫ বছরের রাজবীরের এহেন ভোগান্তি বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার সূত্রপাত ২০০৮ সালের ৩১ আগস্ট। মেইনপুরীর ইন্সপেক্টর ওমপ্রকাশ মনোজ যাদব, প্রবেশ যাদব, ভোলা ও রাজ বীরের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেন। এই মামলাটি এরপর দান্নাহার থানায় স্থানান্তরিত করা হয়। সেই থানার সাব ইন্সপেক্টর শিবসাগর দিক্ষিত পয়লা ডিসেম্বর রাজবীরকে গ্রেপ্তার করেন।
আসলে মামলাটি ছিল রামবীরের বিরুদ্ধে। নামের একটি অক্ষর ভুল করে লিখে ফেলায়, রাজবীর ফেঁসে যান। এই ঘটনার পর বারবার নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য কাকুতি মিনতি করেন। আগ্রা কোর্টেও এই ঘটনার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন তিনি। এও জানিয়েছিলেন, তিনি কখনও কোনও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন।
এই পরিস্থিতিতেই ওমপ্রকাশ ও শিবশঙ্করকে তলব করে আদালত। আদালতে দুই পুলিশ আধিকারিক স্বীকার করেন, মামলায় অভিযুক্ত যুবকের নাম নথিভুক্ত করার সময়েই ছোট্ট ভুল হয়েছিল। রামবীরের বদলে রাজবীরের নাম লেখা হয়। তারপরেও ভুল সংশোধন করা হয়নি। বরং তদন্তকারী আধিকারিক, বাকি অভিযুক্তদের সঙ্গে রাজবীরের নাম যুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন।
২০১২ সাল থেকে ট্রায়াল শুরু হয়। গত ১৩ বছর ধরে প্রতিবার শুনানিতে আদালতে হাজির হন রাজবীর। বারবার নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা করেন। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন রাজবীর। সংসারের কাজেও মন দিতেন না। এমনকী সন্তানদের পড়াশোনা, খাওয়াদাওয়া নিয়েও চিন্তা করার সুযোগ পাননি।
শনিবার শুনানিতে বিচারপতি জানান, পুলিশ ভুলত্রুটি জানার পরেও নামটি সংশোধন করেনি। এমনকী আদালতে ভুলটি জানানোর পরেও চার্জশিটে সেই এক ভুল রয়ে গেছে। বারবার আদালতের নির্দেশ অমান্য করেছে তারা। দায়িত্বপ্রাপ্ত সেই পুলিশ ও তদন্তকারী আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। পুলিশের গাফিলতির জেরে নির্দোষ এক ব্যক্তিকে দুই দশকের ভোগান্তির জন্য তীব্র নিন্দা করেছেন বিচারপতি।
