আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাজস্থানে শিক্ষা দপ্তরের এক হঠাৎ সিদ্ধান্ত ঘিরে তীব্র রাজনৈতিক ও সামাজিক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ৬ ডিসেম্বর, যেদিন ১৯৯২ সালে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়েছিল, সেই দিনটিকে ‘শৌর্য দিবস’ হিসেবে পালন করার নির্দেশ দেয় রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর। নির্দেশে বলা হয়েছিল, সরকারি স্কুলগুলোতে বক্তৃতা, প্রবন্ধ রচনা, পোস্টার তৈরি, দেশাত্মবোধক গান, লোকনৃত্য এবং অযোধ্যার রাম মন্দির আন্দোলন ও পৌরাণিক চরিত্রদের উপস্থাপনা করা হবে।

তবে নির্দেশ জারি হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সরকার হঠাৎ তা প্রত্যাহার করে নেয়। শিক্ষা দপ্তরের নতুন বার্তায় দাবি করা হয়, ৫ ও ৬ ডিসেম্বর পরীক্ষার কারণে স্কুলে অন্য কোনও অনুষ্ঠান পরিচালনা করা সম্ভব নয়, তাই ‘শৌর্য দিবস’ পালনের পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।

এই সিদ্ধান্তের পর রাজ্যের রাজনীতিতে উত্তাপ বেড়েছে। বিরোধী দল কংগ্রেস সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছে। প্রাক্তন মন্ত্রী প্রতাপ সিং খাচারিয়াবাস অভিযোগ করেন, রাজ্যে বেকারত্ব, আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং জনজীবনের সংকট বাড়লেও সরকার মানুষকে বিভ্রান্ত করতে ধর্মীয় আবেগকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে।

তিনি বলেন, “পুরো রাজ্য যখন সমস্যার মধ্যে ডুবে আছে, তখন সরকার অযথা এসব বিষয় সামনে এনে রাজনীতি করছে। প্রথম নির্দেশ থেকেই স্পষ্ট হয়েছে সরকারের অগ্রাধিকার কী।”

নাগরিক সমাজও এই নির্দেশকে বিপজ্জনক এবং অসাংবিধানিক বলে আখ্যা দিয়েছে। পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ (PUCL) এক বিবৃতিতে শিক্ষা মন্ত্রীর ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ এবং দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপের দাবি জানায়।

PUCL-এর অভিযোগ, নির্দেশ প্রত্যাহার হলেও তা অল্প সময়ের জন্য প্রচারিত হওয়ায় কিছু স্কুল বা ব্যক্তিগত সংগঠন নিজেদের উদ্যোগে ধর্মীয় মেরুকরণের অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারে, যা শিশুদের শিক্ষাঙ্গনে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়াতে পারে।

সংগঠনটি আরও জানিয়েছে, রাম মন্দির নির্মাণ সম্পর্কিত উপকরণ প্রদর্শনী ও পৌরাণিক কাহিনীভিত্তিক সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মতো কার্যক্রম আসলে স্কুলগুলিকে একধরনের সাম্প্রদায়িক প্রচার ও ধর্মীয় বিশেষীকরণের দিকে ঠেলে দেয়। PUCL মনে করে, এসব কার্যক্রম রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরের ধর্মনিরপেক্ষ সাংবিধানিক দায়বদ্ধতার পরিপন্থী।

যদিও সরকার পরীক্ষার অজুহাতে নির্দেশ প্রত্যাহারের কথা বলেছে, তবু বিরোধী দল ও মানবাধিকার সংগঠনগুলির দাবি—এটি কেবল চাপের মুখে নেওয়া রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। PUCL স্পষ্ট ঘোষণা চেয়েছে যে ভবিষ্যতেও রাজ্যে সরকারি বিদ্যালয়ে এমন কোনও ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক চরিত্রের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে না।

নির্দেশ প্রত্যাহারের পরও রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক থামেনি। শিক্ষা নীতি এবং ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে রাজস্থানের এই ঘটনা সমগ্র দেশের নজর কেড়েছে।