আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রতিদিন শত শত যাত্রী ট্রেনে চেপে তাঁর যাত্রা করেন। তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য প্রতিনয়ত রেলপথে যাত্রা করেন। তবে তাঁদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাঁরা বৈধ টিকিট ছাড়াই ট্রেনে ওঠেন। এর ফলে একদিকে যেমন ভারতীয় রেলওয়ে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। একইসঙ্গে প্রকৃত টিকিটধারী যাত্রীরা নানা ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে চলা এই সমস্যার সমাধানে ভারতীয় রেলওয়ে নিয়মিত বিভিন্ন ধরণের বিশেষ অভিযান চালিয়ে থাকে যাতে টিকিটবিহীন যাত্রীদের শনাক্ত করে জরিমানা করা যায়। পাশাপাশি ট্রেনভ্রমণ আরও শৃঙ্খলাপূর্ণ হয়।
সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসি রেলওয়ে ডিভিশনে এমনই এক বিশেষ টিকিট পরিদর্শন অভিযান চলাকালীন একটি বিরল ও চমকপ্রদ ঘটনা ঘটেছে। সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযানের সময় রেলের ট্রাভেলিং টিকিট এক্সামিনার (TTE)-রা প্রতিটি কোচে গিয়ে যাত্রীদের টিকিট যাচাই করছিলেন। প্রতিদিনের মতই এক কামরায় এক মধ্যবয়সী যাত্রীর কাছে পৌঁছে তাঁর টিকিট দেখতে চান। এহেন সময়ে সেই যাত্রী খুব শান্তভাবে একটি কাগজ এগিয়ে দেন পরীক্ষকের দিকে। প্রথমে সেটি দেখে টিকিট পরীক্ষক থমকে যান। এরপর কাগজটি হাতে নিয়ে পড়ার পর তিনি এতটাই মুগ্ধ হন যে সেই যাত্রীর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে অভিনন্দন জানান।

কিন্তু কিছুক্ষণ পর, টিকিট পরীক্ষক আবার কাগজটি ভালোভাবে খুঁটিয়ে দেখেন এবং যাত্রীকে বলেন-'এই কাগজে আপনার সমাজসেবামূলক কাজের উল্লেখ রয়েছে, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনার কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সাহায্য করতে প্রস্তুত। কিন্তু ট্রেনে ভ্রমণ করার জন্য একটি বৈধ টিকিট থাকা বাধ্যতামূলক।'
এই কথা শুনে যাত্রী প্রথমে হতবাক হয়ে যান এবং তৎক্ষণাৎ তর্ক শুরু করেন। তিনি যুক্তি দেখাতে থাকেন কেন তাঁকে বিনা টিকিটেই ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া উচিত। তবে টিকিট পরীক্ষক দৃঢ় অবস্থানে থাকেন এবং সমস্ত পরিস্থিতি বিবেচনা করে নির্ধারিত জরিমানা করে দেন। জরিমানা নেওয়ার পর যাত্রীকে ভ্রমণ চালিয়ে যেতে দেওয়া হয়।

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এ ধরনের ঘটনা খুব একটা সাধারণ নয়। যদিও টিকিট চেকিং অভিযানের সময় অনেকেই টিকিটবিহীন যাত্রা লুকানোর জন্য বাথরুমে ঢুকে পড়েন বা অন্য কোচে পালিয়ে যান। এমন দৃশ্য প্রায়শই দেখা যায়। তবে সমাজসেবার নামে বিনা টিকিটে ভ্রমণ করে ধরা পড়ার ঘটনাটি নতুন করে আলোচনার সৃষ্টি করে। এমনকি এই ঘটনা ঘিরে অন্যান্য যাত্রীদের মধ্যেও তীব্র চাঞ্চল্য দেখা গিয়েছে৷

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে এই বিশেষ টিকিট চেকিং অভিযানটি পরিচালিত হয় সহকারী বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক পঙ্কজ ত্রিপাঠীর নেতৃত্বে। অভিযানে অংশ নেন প্রধান টিকিট পরিদর্শক মনোহরলাল মীনা, ডেপুটি সিটিআই শ্রীলাল, ইমতিয়াজ রহমান, মহেন্দ্র সিং প্যাটেল, মোহাম্মদ মুদাস্সার খান, মুখেশ কুশওয়াহা, জিতেন্দ্র কুমার বর্মা এবং নরেশ শর্মা। তাঁদের তৎপরতার ফলেই রেলের শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে এবং এমন ব্যতিক্রমী ঘটনাও জনসমক্ষে এসেছে।

