আজকাল ওয়েবডেস্ক: হিমাচল প্রদেশের সোলন শহরে অবস্থিত ঐতিহাসিক অ্যালকোহল প্রস্তুতকারী সংস্থা মোহন মেকিন লিমিটেড, যারা ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় রাম ‘Old Monk’ তৈরি করে, তারা গত দুই দশক ধরে প্রোপার্টি ট্যাক্স দেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। সোলন পৌর প্রশাসন জানিয়েছে, কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রায় ৫৭.৫০ লক্ষ টাকার বকেয়া কর জমে রয়েছে এবং কর না মেটালে তাদের সম্পত্তি সিল করে দেওয়া হবে বলে চূড়ান্ত সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে। সোলন পৌর কমিশনার একতা কাপটা জানিয়েছেন, ১৯৯৭ সাল থেকে জুলাই ২০২২ পর্যন্ত কোনও কর জমা পড়েনি সংস্থার তরফে। সম্প্রতি কোম্পানির ভবনের পরিমাপ অনুযায়ী নতুন করে কর নির্ধারণের কাজ শুরু হয়েছে, যা চলবে জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত। পৌরসভার পক্ষ থেকে একাধিকবার কর মেটানোর জন্য নোটিশ পাঠানো হলেও তাতে সাড়া না মেলায় এবার কঠোর পদক্ষেপের পথে হাঁটছে প্রশাসন।

অভিযোগ উঠেছে, এতবছর ধরে চলতে থাকা এই অবহেলা শুধু প্রশাসনিক গাফিলতি নয়, বরং একটি প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডের সামাজিক দায়বদ্ধতার অভাবকেও তুলে ধরে। যেখানে ওল্ড মংক একসময় জাতীয় পানীয় ঘোষণার দাবিতে মাতালদের প্রিয় হয়ে উঠেছিল, সেখানে তাদের এই করফাঁকি প্রশ্ন তোলে ব্যবসার নৈতিকতার উপরেও। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি পৌর প্রশাসন কঠোর অবস্থানে অনড় থাকে এবং কর না মেটানোয় ভবন সিল হয়, তাহলে উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে, যার প্রভাব সরাসরি পড়বে বাজারে। তাতে একদিকে যেমন পুরনো প্রেমে অভ্যস্ত রামপ্রেমীদের মন ভাঙবে, অন্যদিকে প্রতিযোগী বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর কাছে আরও জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। অর্থাৎ, এই ঘটনা কেবল একটি আর্থিক বিরোধ নয়, বরং একটি আবেগঘন জাতীয় চেতনার সঙ্গেও জড়িয়ে। Old Monk, যাকে ঘিরে রয়েছে বহু প্রজন্মের শৈশব, যৌবন, মধ্যবয়সের একান্ত রাতগুলোর গল্প, তার ভবিষ্যৎ আজ প্রশ্নের মুখে।

আরও পড়ুন: সুষম বীর্য মানে দীর্ঘ জীবন? নতুন গবেষণায় উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য

মোহন মেকিনের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৮৫৫ সালে ব্রিটিশ নাগরিক এডওয়ার্ড ডায়ারের হাত ধরে। তিনি ছিলেন জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে থাকা জেনারেল ডায়ারের বাবা। কসৌলির পাহাড়ি অঞ্চলে ঝরনার জল দিয়ে তৈরি হত সুরা। পরে এই সংস্থা কিনে নেন ভারতীয় শিল্পপতি নরেন্দ্র নাথ মোহন। তার হাত ধরে গড়ে ওঠে ‘Old Monk’-এর মতো কালজয়ী ব্র্যান্ড। ‘Old Monk’ শুধু একটি রাম নয়, বরং তা হয়ে উঠেছে বহু ভারতীয়র স্মৃতির অংশ। বিজ্ঞাপনের মোহ ত্যাগ করে স্বাদ আর মূল্যবান আবেগ দিয়ে এই ব্র্যান্ড ছুঁয়ে গেছে মধ্যবিত্তের হৃদয়। আজও বহু মানুষ আছেন যারা দামি স্কচ ছেড়ে চুমুক দেন পুরনো দিনের সেই মগজঘোরানো গন্ধের রামে।

এই সংস্থার বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতেই অনেকেই বিস্মিত। কোটি কোটি টাকার টার্নওভার থাকলেও, টানা ২০ বছর কর না দেওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ পৌর প্রশাসন। কর না মেটালে শীঘ্রই ভবন সিল করার পাশাপাশি আরও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে বাজারের আস্থা অর্জন করা এই ব্র্যান্ডের ভাবমূর্তিতে এমন অভিযোগ বড় ধাক্কা হতে পারে। একদিকে স্মৃতির মদ, অন্যদিকে দায়িত্বে অবহেলা—এই টানাপোড়েনের মধ্যে এখন দেখার, মোহন মেকিন কর মেটায় কি না, নাকি প্রশাসনের কড়া অবস্থানেই বন্ধ হয়ে যায় ওল্ড মংকের পুরনো গড়।