আজকাল ওয়েবডেস্ক: মুম্বইয়ে টানা ভারী বর্ষণের কারণে শহর ও শহর সংলগ্ন আশেপাশের এলাকায় জনজীবন মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর (IMD) বুধবার মুম্বই শহরের জন্য ‘কমলা সতর্কতা’ (Orange Alert) জারি করেছে। পাশাপাশি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টিপাতের তীব্রতা কিছুটা কমবে। তবে, তার আগে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মঙ্গলবারের ভারী বর্ষণে মুম্বইয়ের রাস্তাগুলো একপ্রকার নদীতে পরিণত হয়। এর ফলে শহরের বিভিন্ন এলাকায় যান চলাচল এবং রেল পরিষেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। মধ্য রেলওয়ের মূল ও হারবার লাইনে ট্র্যাকে জল জমে যাওয়ার কারণে লোকাল ট্রেন চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। এর জেরে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। একইসঙ্গে এর প্রভাব মুম্বই বিমানবন্দরের ফ্লাইট চলাচলেও পড়ে। খবর অনুযায়ী, পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছিল যে, শহরের সমস্ত স্কুল-কলেজ এবং সরকারি ও আধা-সরকারি অফিস বন্ধ রাখা হয়। এমনকী মুম্বই হাইকোর্টও দুপুর ১২:৩০ পর্যন্তই চালু ছিল।

ঘটনার প্রেক্ষিতে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীস রাজ্যের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে মুম্বই, থানে, রায়গড়, রত্নগিরি ও সিন্ধুদুর্গ জেলার জন্য পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টাকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এই অঞ্চলগুলোর জন্য উচ্চ সতর্কতা (High Alert) জারি করা হয়েছে। রায়গড় এবং পুনে জেলার ঘাট এলাকা বুধবারের জন্য ‘লাল সতর্কতা’ (Red Alert)-এর আওতায় রয়েছে। অন্যদিকে, থানে, পালঘর, রত্নগিরি ও সিন্ধুদুর্গ জেলার জন্য জারি রয়েছে ‘কমলা সতর্কতা’। মধ্য মহারাষ্ট্রে বৃষ্টি না হওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। তবে মারাঠওয়াড়া ও বিদর্ভ অঞ্চলের কিছু অংশে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর।

এদিকে, টানা বৃষ্টির কারণে মঙ্গলবার মুম্বইয়ে একটি মারাত্মক ঘটনা ঘটে। জানা গিয়েছে দুটি অতিরিক্ত ভিড় হওয়া মনোরেল ট্রেন স্টেশনের মাঝখানে আটকে পড়ে। এতে মোট ৭৮২ যাত্রী উদ্ধার করা হয়। বৈদ্যুতিক ও যাবতীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক যাত্রী দমবন্ধ অনুভব করেন। যাত্রীদের মধ্যে কয়েকজন অজ্ঞানও হয়ে পড়েন। যদিও কেবল একজন যাত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। বর্তমানে তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা গিয়েছে। অতিরিক্ত ভিড় এবং সাবার্বান ট্রেন পরিষেবা বন্ধ থাকায় মানুষ মনোরেলের দিকে ছুটে যায়। তবে মনোরেল ব্যবস্থাপনা এই হঠাৎ ভিড় সামলাতে না পারায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে বলে জানিয়েছে মুম্বই মহানগর এলাকা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (MMRDA)। মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীস এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

রাজ্যে বৃষ্টিজনিত নানা দুর্ঘটনায় গত ১৫ আগস্ট থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত পাঁচদিনে মোট ২১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে মঙ্গলবার সরকারি রিপোর্টে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র নান্দেদ জেলাতেই সাতজন প্রাণ হারিয়েছেন। অধিকাংশই ডুবে যাওয়ার কারণে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৫ আগস্টে ১ জন, ১৬ আগস্টে ৩ জন, ১৭ আগস্টে ৭ জন, ১৮ আগস্টে ৩ জন এবং ১৯ আগস্টে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বাড়ি বা দেয়াল ধসে পড়া, বজ্রপাত, প্লাবন, নদীতে ভেসে যাওয়া এবং ভূমিধস।

আরও পড়ুনঃ জলস্তর আবারও বিপদসীমা ছাড়াল যমুনার, মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসের পরও জল ঢুকেছে ঘরে ঘরে

এছাড়া, বৃষ্টিজনিত ঘটনায় ১২টি পশু মারা গিয়েছে এবং ১০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিমান সংস্থা ইন্ডিগো মুম্বইগামী যাত্রীদের জন্য বিশেষ ভ্রমণ পরামর্শ জারি করেছে।

শহর ও রাজ্যের এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন ও উদ্ধারকারী দলগুলোর পক্ষ থেকে টানা কাজ চললেও, আগামী দুই দিন পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ মাদকের নেশা খুঁজতে গিয়ে 'শরীরের নেশায়' বুঁদ পুলিশ! বিস্ফোরক ঘটনায় হইচই বেঙ্গালুরুতে...