আজকাল ওয়েবডেস্ক: এপ্রিল মাস। মেয়ের প্রেমিকের সঙ্গে চুটিয়ে আড্ডা। উদ্দাম নাচগানেও মত্ত দু'জনে। ঠিক সাত মাস পর বদলে গেল সম্পর্কের সমীকরণ! মেয়ের সেই দলিত প্রেমিককে খুনের অভিযোগে বর্তমানে জেল হেফাজতে রয়েছে বাবা। নান্দেদে সক্ষম হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘিরে তুমুল শোরগোল ছড়াতেই, এবার পুলিশের হাতে আঁচলের বাবার সঙ্গে তাঁর নাচের ভিডিওটি।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর এপ্রিল মাসেই আম্বেদকর জয়ন্তীতে আঁচল, সক্ষম ও তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে উদযাপনে মেতে উঠতে দেখা গিয়েছিল খুনে অভিযুক্ত গজাননকে। সেই উদযাপনে মাঝে সক্ষমকে জড়িয়েও ধরেছিলেন। সক্ষমের বন্ধুরা গজাননকে কাঁধে তুলেও নাচ করেন। বাবার সামনেই হুল্লোড়ে মেতেছিলেন আঁচল ও সক্ষম। কিন্তু তখনো টের পাননি, ঠিক সাত মাস পরেই তাঁদের সম্পর্কের পরিণতি কী হতে চলেছে।
বিশেষত দলিত, আদিবাসীরাই ওই এলাকায় আম্বেদকর জয়ন্তী ধুমধাম করে পালন করেন। সক্ষম তফশিলি জাতির তরুণ ছিলেন। ভিন জাতের কারণেই সক্ষম খুন হন আঁচলের দাদা, ভাইয়ের হাতে। ভিন জাতের কারণেই প্রেমিক যুগলের সম্পর্ক মেনে নেয়নি পরিবার। বিয়েতেও ছিল আপত্তি। তাই আঁচলের অনুপস্থিতিতে সক্ষমকে খুন করে তারা।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার। তিন বছরের প্রেমের সম্পর্ক ভাঙতে মরিয়া হয়ে ওঠে আঁচলের বাড়ির লোকেরা। সক্ষম তাতেকে এলাকায় দেখতে পেয়েই বাড়ির কাছে ডেকে পাঠায় আঁচলের বাবা, ভাইয়েরা। গত বৃহস্পতিবার সক্ষমকে মারধর করে, মাথায় গুলি করে খুন করা হয়। পরে পাথর দিয়ে মাথা থেঁথলে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ।
শুক্রবার সকালে খবরের কাগজে সক্ষমের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন আঁচল। শেষকৃত্য চলাকালীন আঁচল সক্ষমের বাড়িতে পৌঁছন। নিথর প্রেমিকের হাত দিয়ে নিজের সিঁথি সিঁদুরে রাঙিয়ে তোলেন যুবতী। সক্ষমের বিধবা স্ত্রী হিসেবে বাকি জীবন শ্বশুড়বাড়িতে থাকার সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি। সক্ষমের খুনিদের মৃত্যুদণ্ড দাবি করার সময় বলেন, "আমাদের ভালবাসা জিতেছে, এমনকী সক্ষমের (প্রেমিকের নাম) মৃত্যুতেও আমার বাবা এবং ভাইয়েরা হেরে গিয়েছে।" জোর গলায় আঁচল বলতে থাকেন, তিনি বিয়ে করেছেন কারণ সক্ষম মারা গেলেও তাঁদের ভালবাসা এখনও বেঁচে আছে। গোটা পরিবারের মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়েছেন আঁচল।
পুলিশ জানিয়েছে, ১২ ঘণ্টার মধ্যে মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছে, আঁচলের বাবা গজানন বালাজি মামিদওয়ার, মা জয়শ্রী মামিদওয়ার, দাদা সাহিল গজানন মামিদওয়ার, সোমেশ সুভাষ, বেদান্ত অশোক কুন্দেকার, চেতন বালাজি মামিদওয়ার, আরও এক অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তি। এই অভিযুক্তদের মধ্যে আঁচলের ১৭ বছরের এক ভাইও আছে। সক্ষম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গতকাল ছ'জনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। আজ ধৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট।
এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে আঁচল জানিয়েছেন, সক্ষম জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরেই খুনের পরিকল্পনা করেছিল পরিবারের সদস্যদের। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁকে নিয়ে থানায় গিয়েছিল দাদা, ভাইয়েরা। মিথ্যে মামলায় সক্ষমকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু পুলিশ সেই মামলা রুজু না করে, সক্ষমকে খুনের উস্কানি দেয়। থানা থেকে ফিরেই বৃহস্পতিবার তাঁর অনুপস্থিতিতে সক্ষমকে নির্মমভাবে খুন করে তারা।
আঁচল আরও জানিয়েছে, 'সক্ষম তফশিলি জাতির ছিল বলেই পরিবারের আপত্তি ছিল বিয়েতে। পরিবার জানিয়েছিল, আমাকে বিয়ে করতে হলে জাতি বদলে ফেলতে হবে। তার জন্যেও প্রস্তুত ছিল সক্ষম। আমার পরিবার ওকে শেষ করার অপেক্ষায় দিন গুনছিল।' প্রত্যক্ষদর্শীরাও জানিয়েছেন, সক্ষমকে কাছে পেয়েই তড়িঘড়ি গুলি চালায় আঁচলের ভাই। স্থানীয়রা হস্তক্ষেপ করার আগেই সক্ষমের মৃত্যু হয়।
