আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিল্লির এক শিল্পী পরম সাহিব। সম্প্রতি তিনি তাঁর দাদু-দিদার পুরনো অ্যাম্বাসাডর গাড়িকে রঙ তুলি দিয়ে এক নতুন জীবন্ত শিল্পকর্মে পরিণত করেছেন। এটি কেবল একটি গাড়ি নয়,বরং এই অ্যাম্বাসাডর বহু ভারতীয়র কাছেই এক স্মৃতি এবং ঐতিহ্যের প্রতীক। পরম সাহিব সেই স্মৃতিকে রঙিন ক্যানভাসে রূপান্তর করে তৈরি করেছেন এক অসাধারণ শিল্পকর্ম। এর নাম দিয়েছেন-'লাহোর সে দিল্লি'।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কাজটি মূলত পরমের দাদু-দিদার লাহোর থেকে দেশভাগের পর ভারতে চলে আসার কাহিনি ঘিরে আবর্তিত। এই গাড়িটিকে তিনি নিজ হাতে রঙ করে অন্য রূপে রূপান্তর করেন এক প্রচলিত শিল্পকর্মে। প্রায় ২৮ দিন ধরে তিনি এই গাড়িটি নিজে হাতে রঙ করেছেন। এতে ফুটে ওঠে পপ কালচার, ঐতিহ্য এবং উজ্জ্বল রঙের এক দুর্দান্ত মিশ্রণ। জানা গিয়েছে এই প্রোজেক্টটি পরিকল্পনা থেকে শুরু করে শেষ অবধি প্রায় সাত মাস সময় নিয়েছে। সবমিলিয়ে একমাস লেগেছে শুধুমাত্র রঙ করার কাজে।
ইনস্টাগ্রামে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে পরম লেখেন, 'আমি একটা ভিন্টেজ অ্যাম্বাসাডর গাড়ি রঙ করেছি প্রায় ২৮ দিন ধরে। দিল্লির বুকে ড্রোন দিয়ে তার ভিডিও শুট করেছি। আমার সব ডিয়াইওয়াই (DIY) প্রকল্পের মধ্যে এটি ছিল অন্যতম। ‘লাহোর সে দিল্লি’ নামের এই হাতে রঙ করা গাড়িটি আমার দাদু-দিদার দেশভাগ পরবর্তী ভারতে আসার গল্প এবং সেই যাত্রাপথে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ভালোবাসার একমাত্র স্থায়িত্বের প্রতি শ্রদ্ধা। এটি ছিল আমার ‘লেবার অফ লাভ’ প্রকল্প।'
পরম আরও জানান, এই গাড়ি দেখলেই তাঁর মন আনন্দে ও গর্বে ভরে ওঠে। তিনি একে শুধুমাত্র একটি শিল্পকর্ম নয়, বরং নিজের পরিবারের ইতিহাস এবং ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা হিসেবেই দেখেছেন । পরমের এই ইনস্টাগ্রাম পোস্টে নেটিজেনদের উচ্ছ্বাস স্পষ্ট। একজন মন্তব্য করেন, 'এটা অত্যন্ত অসাধারণ, এত রঙিন এবং সূক্ষ্ম কাজ।' আরেকজন লেখেন, 'ভারতে কত প্রতিভা আছে, আমি গর্বিত।' কেউ কেউ জানান, 'এটা আমার স্বপ্নের মতো,' 'একেবারে অনন্য একটি মাস্টারপিস!' অথবা, 'বাচ্চাবেলার অ্যাম্বাসাডর গাড়ির স্মৃতি ফিরিয়ে দিল।' এক কথায়, এই গাড়ি নেটিজেনদের মন জয় করেছে।
আরও পড়ুনঃ দর্শকের মুখেই প্রস্রাব আরেক পর্যটকের! লোনাভালার বাধে ভাইরাল অশোভন কাণ্ড!...
এর আগে সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পরম সাহিব বলেন, 'আমার শিল্পকর্ম প্রায়শই আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে অনুপ্রাণিত। এইজন্যই মানুষ সেটির সঙ্গে সহজে নিজেকে মেলাতে সক্ষম হন। আমার শিল্প আমাকে নিজের মত করে, বিনা দ্বিধায় প্রকাশ করার সুযোগ দেয়। শিল্প মানেই নির্ভীকতা। এটা সবাই ভালোভাবে নেয় না, কিন্তু যেভাবে এটা অন্যদের নিজেদের প্রতি বিশ্বাস রাখতে অনুপ্রাণিত করে, সেটাই আমাকে চালিয়ে নিয়ে যায়।'
আরও পড়ুনঃ ভয়াবহ হড়পা বানের তাণ্ডব উত্তরকাশীতে! নিখোঁজ শ'য়ে শ'য়ে মানুষ, চলছে উদ্ধারকাজ
উজ্জ্বল রঙের প্রতি পরমের ভালোবাসা আসে তাঁর শৈশব থেকেই। খবর মারফত জানা গিয়েছে, পাঞ্জাবের এক গ্রামে দাদু-দিদার বাড়িতে তাঁর শৈশব কেটেছে। সেখানকার রঙিন পরিবেশ এবং প্রাণবন্ত জীবনধারা তাঁকে প্রভাবিত করে। তিনি জানিয়েছেন, একজন পাঞ্জাবি হিসেবে উজ্জ্বল ও খুশির রঙ পরা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়।
সর্বোপরি এই প্রকল্পটি শুধু একটি গাড়িকে নতুন রূপ দেওয়া নয়, বরং একটি প্রজন্মের ইতিহাস, ঐতিহ্য, ভালোবাসা এবং সাহসিকতারও ক্যানভাস। 'লাহোর সে দিল্লি' নিঃসন্দেহে এক শিল্পীসত্তার অন্তরের গল্প হয়ে উঠেছে, যা অগণিত মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছে।
