আজকাল ওয়েবডেস্ক: কিশান সিংহ একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সম্পর্ক পরামর্শদাতা। সম্প্রতি তিনি ইনস্টাগ্রামে তাঁর একটি ব্যক্তিগত গল্প শেয়ার করেছেন। ভিডিওটি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। দেখা গিয়েছে এই ঘটনাটি তাঁর এক পূর্ব ক্লায়েন্টের জীবনের সত্য ঘটনা। তবে গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে নাম ও স্থান পরিবর্তন করে প্রকাশ করা হয়েছে। ভিডিও ভাইরালে চাঞ্চল্য নেটপাড়ায়। 

গল্পটি এমনভাবে শুরু হয়, পুরোপুরি স্বাভাবিক ও সুখী এক দাম্পত্য সম্পর্ক দিয়ে। কিশানের বক্তব্য অনুযায়ী, এই দম্পতি এক অনলাইন ম্যাট্রিমনিয়াল সাইটের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হন। এরপর মাত্র এক মাসের মধ্যে বিয়ে করেন। শুরুতে সবকিছুই ঠিকঠাক মনে হয়েছিল। উভয় পরিবারই বেশ খুশি ছিল। দম্পতির সংসার স্বাভাবিকভাবে চলছিল। এমনকি বিয়ের ক'দিন পরই সুষমা গর্ভবতী হন। কিন্তু বিয়ের কয়েক মাস পর একটি অপ্রত্যাশিত ফোনকল এক মুহূর্তে সবকিছু পাল্টে দেয়।

কিশানের ক্লায়েন্ট জানান, 'আমি সুষমাকে ছয় মাস আগে বিয়ে করি। আমরা এক ম্যাট্রিমনিয়াল সাইটের মাধ্যমে পরিচিত হই।'
প্রথম সাক্ষাতে সুষমার বাবা কিছু শর্ত দেন। দাবিগুলো খানিকটা এমন ছিল, ছেলের অবশ্যই সরকারি চাকরি থাকতে হবে। মাসিক বেতন এক লাখ টাকার বেশি হতে হবে। এমনকি অতীতে কোনও বিতর্কিত কিছু থাকা চলবে না। যুবক জানান, 'আমি সব শর্ত পূরণ করেছিলাম।'

যুবক জানান, তাঁর কোনও চাহিদা ছিল না। 'সুষমা এমনিতেই সুন্দরী ছিলেন। তাই আমার আর কিছু চাওয়ার প্রয়োজন হয়নি।' দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে দ্রুত শেষ হয়। বিয়ের কয়েকদিনের মধ্যে সুষমা জানতে পারেন যে তিনি গর্ভবতী। কিন্তু চার-পাঁচ মাস পর একদিন ফোনে একটি কল আসে। এক অজ্ঞাত ব্যক্তি , নাম অঙ্কিত, ফোন করেন। তিনি দাবি করেন, তিনি সুষমার প্রাক্তন প্রেমিক এবং তাঁদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল, প্রায় তিন বছরেরও বেশি। তাঁরা বিয়ে করার কথাও ভেবেছিলেন। সম্পূর্ণ বিষয়টি সুষমার পরিবারও জানত। কিন্তু তাঁর আয় কম হওয়ায় পরিবার তাঁকে মেনে নেয়নি।

এরপর সবচেয়ে ধাক্কা দেওয়া বিষয়টি ছিল যখন অঙ্কিত ক্লায়েন্টকে জানান, 'তোমার বিয়ের আগের দিন সুষমা আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়। সে নিজেই বলেছিল, সে চায় আমারই সন্তান হোক। এমনকি যদি তাঁকে অন্য কাউকে বিয়ে করতে হয়ও।' এহেন পরিস্থিতিতে ওই ক্লায়েন্ট ব্যক্তিগতভাবে অঙ্কিতের সঙ্গে দেখা করেন। অঙ্কিত তাঁকে কিছু ছবি দেখান, যার মধ্যে কিছু অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবিও ছিল, একটি হোটেল রুমে তোলা। ভুক্তভোগী যুবক অসহায় হয়ে জানান, 'সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক বিষয় ছিল, সুষমার পরিবার সবকিছু জানতেন। তবুও তাঁরা আমার কাছে এসব গোপন রেখেছেন।' 

পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে ওই যুবক তখন সুষমার সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলেন। সুষমা কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং সব স্বীকার করেন। তিনি বলেন, 'এটা আমার অতীত ছিল। আমি অঙ্কিতকে বিয়ের আগের দিন শেষবারের মতো দেখা করতে গিয়েছিলাম, তার অনুরোধে। এবং হ্যাঁ, আমি যেই সন্তান ধারণ করেছি সেটা ওরই সন্তান, কিন্তু এটা আমার একটা বড় ভুল।'
এই সত্য জানার পর ভুক্তভোগী যুবক কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, 'এটাই এখন আমার বাস্তবতা। আমি জানি না কাকে বিশ্বাস করব। সবচেয়ে বেদনাদায়ক ব্যাপার, আমি জানি না এখন নিজেকে নিয়ে কী করব। কোথায় যাব, কিছুই বুঝতে পারছি না।'

আরওপড়ুনঃ মাঝরাস্তায় এ কী দৃশ্য! 'বারাত বনাম স্কুলপড়ুয়া', ভিডিও ভাইরালে ডি'জের তালে মেতে উঠেছে নেটপাড়া

পুরো গল্পের শেষে কিশান সিংহ বলেন, 'এই ঘটনা আমার একজন পূর্ব ক্লায়েন্টের বাস্তব জীবন থেকে নেওয়া। সব নাম ও স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে গোপনীয়তার স্বার্থে। এবং আমি ক্লায়েন্টের সম্মতিতে এই ঘটনা প্রকাশ করেছি।' সম্প্রতি এই পোস্টটি ইনস্টাগ্রামে হাজার হাজার প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। একইসঙ্গে সমাজে একটি বড় আলোচনার সৃষ্টি করেছে।

ঘটনার প্রেক্ষিতে একজন মন্তব্য করেছেন, 'প্রায় সব সময়ই সমাজ দেখে ‘ছেলেটা কত উপার্জন করে’।' 
আরেকজন লিখেছেন, 'প্রমাণ সংগ্রহ করুন, তারপর আপনি যদি এই সম্পর্কে থাকতে না চান তাহলে ছেড়ে দিন। কিন্তু প্রমাণগুলি সবসময় নিজের কাছে রাখুন। এটাই ভবিষ্যতে আপনার জন্য নিরাপত্তা হবে।' 
আরেকজন আবার মন্তব্য করে বলেন, 'এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসুন এবং পুরো পরিবারকে প্রতারণার অভিযোগে আদালতে টানুন। প্রতারণা তো প্রতারণাই, সেটা যেভাবেই হোক না কেন। এই ছেলেটার ন্যায়বিচার পাওয়া উচিত।'

ঘটনার জেরে অনেকেই আইনি পদক্ষেপ নিয়ে মন্তব্য করেছেন। একজন লেখেন, 'সবচেয়ে খারাপ বিষয় হলো, আইন অনুযায়ী, যদি আপনার কাছে ডিএনএ প্রমাণও থাকে যে সন্তান আপনার নয়, তবুও যদি বৈধ বিয়ের মধ্যে সন্তান জন্ম নেয়। তাহলে স্বামীকেই সেই সন্তানের আইনগত পিতা হিসেবে ধরা হয়।'
ভারতের এভিডেন্স অ্যাক্ট, ১৮৭২ এর সেকশন ১১২ অনুযায়ী, বৈধ বিয়ের সময় সন্তান জন্ম নিলে অথবা বিয়ে ভেঙে যাওয়ার ২৮০ দিনের মধ্যে যদি স্ত্রী পুনরায় বিয়ে না করেন, তাহলে সন্তানকে স্বামীর সন্তান বলেই ধরে নেওয়া হয়।